মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
হাদীস নং: ৬২০২
- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২০২। হযরত সা'দ (রাঃ) বলেন, একবার আমরা ছয় ব্যক্তি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। তখন মুশরিকরা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিল, এই সমস্ত লোকদিগকে (আপনার মজলিস হইতে) তাড়াইয়া দিন, যাহাতে তাহারা আমাদের উপর সাহসী না হইয়া পড়ে। হযরত সা'দ বলেন, সেই ছয়জনের মধ্যে ছিলাম আমি, ইবনে মাসউদ, হোযায়ল গোত্রের এক ব্যক্তি, বেলাল ও আরও দুইজন, যাহাদের নাম আমি বলিতে চাই না। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনে তাহাই উদ্ভব হয়, যাহা উদ্ভব করিতে আল্লাহর ইচ্ছা হইয়াছে। এ ব্যাপারে নবী (ছাঃ) মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন, ঠিক এমন সময় আল্লাহ্ নাযিল করিলেন, "সেইসমস্ত লোকদিগকে বিতাড়িত করিবেন না, যাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সকাল-সন্ধ্যা তাহাদের রবকে ডাকে।" —মুসলিম
كتاب المناقب
وَعَن سعد قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةَ نَفَرٍ فَقَالَ الْمُشْرِكُونَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: اطرد هَؤُلَاءِ لَا يجترؤون عَلَيْنَا. قَالَ: وَكُنْتُ أَنَا وَابْنُ مَسْعُودٍ وَرَجُلٌ مِنْ هُذَيْلٍ وَبِلَالٌ وَرَجُلَانِ لَسْتُ أُسَمِّيهِمَا فَوَقَعَ فِي نَفْسِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: [وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ] . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. যাহারা এখনও ঈমান আনে নাই, ইসলাম গ্রহণ করে নাই, তাহাদের ঈমানের প্রত্যাশায় ঐ সমস্ত লোকদের অন্তরে ব্যথা দেওয়া উচিত হইবে না, যাহারা আন্তরিকতার সহিত ঈমান আনিয়া তাহাদের রব্বের স্মরণে রত রহিয়াছে।
২. এ হাদীছটি ইসলামের একদম সূচনাকালীন, যখন নগণ্য সংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাদেরও অধিকাংশ অতি সাধারণ স্তরের লোক। এটা সব যুগেরই এক সাধারণ অবস্থা যে, নবী-রাসূলগণের ডাকে বেশিরভাগ সাধারণ স্তরের লোকই সাড়া দিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ও তাই হয়েছে।
সমাজের অভিজাত ও মোড়ল শ্রেণীর লোক অহমিকাবশত সবসময়ই সত্যের ডাকে সাড়া দিতে হয় অস্বীকার করেছে, নয়তো সবশেষে পরিস্থিতির কারণে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছে। মক্কার যারা অভিজাত ও মোড়ল ছিল, যেমন আবূ জাহল, উমাইয়া, উকবা প্রমুখ, তারা বরাবরই ইসলামের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। গরীব ও সাধারণ স্তরের লোকদের ইসলামগ্রহণ এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে তাদের অবস্থানকে মোড়লগণ নিজেদের ইসলাম অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাত। একপর্যায়ে তারা প্রস্তাবই করে বসে, এই লোক তাড়িয়ে দিন, তাহলে আমরা আপনার কথা শুনব, যেমনটা আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় এ প্রস্তাবটি করেছিল উমাইয়া ইবন খাল্ফ।
আসলে তারা কখনওই শুনবার ছিল না। তাদের এ প্রস্তাব ছিল ভাওতামাত্র। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইসলাম গ্রহণের বড় আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তাই তাদের প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি চিন্তা-ভাবনা করছিলেন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে—
فَوَقَعَ فِي نَفْسِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ
(তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় যা উদয় হওয়ার তা উদয় হল। তিনি আপন মনে (তা নিয়ে) ভাবলেন'। অর্থাৎ যে গরীব মুমিনদেরকে তাড়ানোর প্রস্তাব তারা দিয়েছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানা ছিল যে, তারা সবাই পরিপক্ক মুমিন। ঈমান তাদের অন্তরের পরতে পরতে মিশে গিয়েছে। শত নির্যাতনেও তারা ঈমান ছাড়েনি। ভবিষ্যতেও কোনও পরিস্থিতিতেই তারা তা ছাড়বার নয়। ঈমানের আলোয় তাদের গোটা অস্তিত্ব উদ্ভাসিত। এখন আর তাদের কোনওরকম মনোরঞ্জনেরও প্রয়োজন নেই। কাজেই ঈমানের আশায় ধনী মোড়লদের মনোরঞ্জনার্থে যদি সাময়িক কালের জন্য এ সাহাবীদেরকে দূরে থাকতে বলা হয়, তাতে তাদের কোনও ক্ষতিও নেই এবং তাতে তাদের মর্যাদাও কোনও অংশে কমবে না। পক্ষান্তরে এর দ্বারা যদি মক্কার নেতৃবর্গের মন জয় করা যায় আর খুশি হয়ে তারা ঈমান আনে, তবে তাদের নাজাতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে এবং তা ইসলামের প্রচার-প্রসারেও সহায়ক হবে।
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তারা বলেছিল, আপনি অন্ততপক্ষে দিন ভাগ করে দিন। একদিন তাদের জন্য রাখুন, একদিন আমাদের জন্য। আর এটা লিখিত আকারে চূড়ান্ত করুন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃহত্তর স্বার্থে এটা করবেন বলে ভাবছিলেন। এমনকি এটা লেখার জন্য হযরত আলী রাযি.-কে ডেকেওছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেন-
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ
(যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সকাল ও সন্ধ্যায় তাকে ডাকে, তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিও না)। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর ভাবনাটি নাকচ করে দেন। অর্থাৎ তিনি যে তাদেরকে সাময়িক কালের জন্য দূরে থাকতে বলবেন বলে মনস্থির করেছিলেন তা নিষেধ করে দেন। উল্টো হুকুম দেন যেন তিনি ধৈর্যসহকারে তাদেরকে সঙ্গদান করেন এবং তাদেরকেও তাঁর সঙ্গগ্রহণের সুযোগ দেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
‘ধৈর্য-স্থৈর্যের সাথে নিজেকে সেইসকল লোকের সংসর্গে রাখ, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় নিজেদের প্রতিপালককে এ কারণে ডাকে যে, তারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায় তোমার দৃষ্টি যেন তাদের থেকে সরে না যায়।২৭৮
সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা মনস্থ করেছিলেন তাতে নিবৃত্ত হন। অতঃপর তিনি যখনই এ গরীব সাহাবীদেরকে দেখতেন, বলে উঠতেন, মুবারকবাদ ওইসব লোকদের, যাদের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা আমাকে তিরস্কার করেছেন। এরপর থেকে তিনি তাদেরকে সঙ্গদান আরও বৃদ্ধি করে দেন। তাদের সঙ্গে যখন বসতেন, তখন যতক্ষণ না তারা মজলিস থেকে উঠা শুরু করত, ততক্ষণ তিনি উঠতেন না, তাদের সঙ্গেই বসে থাকতেন।
হাদীছটির শিক্ষা
ক. ধনীদের খাতিরে কখনও গরীবদের প্রতি মনোযোগ কমানো উচিত নয়। অবহেলার তো প্রশ্নই আসে না।
খ. ধন-সম্পদ ও আভিজাত্যের অহমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ অহমিকা ঈমান ও সত্যগ্রহণের পক্ষে অনেক বড় বাধা।
গ. ইসলামের শুরুকালটা ছিল গরীব ও সাধারণ স্তরের লোকদের। কাজেই নিজের আশপাশে বেশিরভাগ এ শ্রেণীর লোক দেখলে কোনও হকপন্থীর দমে যাওয়া ঠিক নয়; বরং এটাকে তার হকপন্থী হওয়ার এক নিদর্শন গণ্য করা উচিত।
২৭৮. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ২৮
২. এ হাদীছটি ইসলামের একদম সূচনাকালীন, যখন নগণ্য সংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাদেরও অধিকাংশ অতি সাধারণ স্তরের লোক। এটা সব যুগেরই এক সাধারণ অবস্থা যে, নবী-রাসূলগণের ডাকে বেশিরভাগ সাধারণ স্তরের লোকই সাড়া দিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ও তাই হয়েছে।
সমাজের অভিজাত ও মোড়ল শ্রেণীর লোক অহমিকাবশত সবসময়ই সত্যের ডাকে সাড়া দিতে হয় অস্বীকার করেছে, নয়তো সবশেষে পরিস্থিতির কারণে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছে। মক্কার যারা অভিজাত ও মোড়ল ছিল, যেমন আবূ জাহল, উমাইয়া, উকবা প্রমুখ, তারা বরাবরই ইসলামের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। গরীব ও সাধারণ স্তরের লোকদের ইসলামগ্রহণ এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে তাদের অবস্থানকে মোড়লগণ নিজেদের ইসলাম অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাত। একপর্যায়ে তারা প্রস্তাবই করে বসে, এই লোক তাড়িয়ে দিন, তাহলে আমরা আপনার কথা শুনব, যেমনটা আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় এ প্রস্তাবটি করেছিল উমাইয়া ইবন খাল্ফ।
আসলে তারা কখনওই শুনবার ছিল না। তাদের এ প্রস্তাব ছিল ভাওতামাত্র। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইসলাম গ্রহণের বড় আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তাই তাদের প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি চিন্তা-ভাবনা করছিলেন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে—
فَوَقَعَ فِي نَفْسِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ
(তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় যা উদয় হওয়ার তা উদয় হল। তিনি আপন মনে (তা নিয়ে) ভাবলেন'। অর্থাৎ যে গরীব মুমিনদেরকে তাড়ানোর প্রস্তাব তারা দিয়েছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানা ছিল যে, তারা সবাই পরিপক্ক মুমিন। ঈমান তাদের অন্তরের পরতে পরতে মিশে গিয়েছে। শত নির্যাতনেও তারা ঈমান ছাড়েনি। ভবিষ্যতেও কোনও পরিস্থিতিতেই তারা তা ছাড়বার নয়। ঈমানের আলোয় তাদের গোটা অস্তিত্ব উদ্ভাসিত। এখন আর তাদের কোনওরকম মনোরঞ্জনেরও প্রয়োজন নেই। কাজেই ঈমানের আশায় ধনী মোড়লদের মনোরঞ্জনার্থে যদি সাময়িক কালের জন্য এ সাহাবীদেরকে দূরে থাকতে বলা হয়, তাতে তাদের কোনও ক্ষতিও নেই এবং তাতে তাদের মর্যাদাও কোনও অংশে কমবে না। পক্ষান্তরে এর দ্বারা যদি মক্কার নেতৃবর্গের মন জয় করা যায় আর খুশি হয়ে তারা ঈমান আনে, তবে তাদের নাজাতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে এবং তা ইসলামের প্রচার-প্রসারেও সহায়ক হবে।
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তারা বলেছিল, আপনি অন্ততপক্ষে দিন ভাগ করে দিন। একদিন তাদের জন্য রাখুন, একদিন আমাদের জন্য। আর এটা লিখিত আকারে চূড়ান্ত করুন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃহত্তর স্বার্থে এটা করবেন বলে ভাবছিলেন। এমনকি এটা লেখার জন্য হযরত আলী রাযি.-কে ডেকেওছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেন-
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ
(যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সকাল ও সন্ধ্যায় তাকে ডাকে, তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিও না)। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর ভাবনাটি নাকচ করে দেন। অর্থাৎ তিনি যে তাদেরকে সাময়িক কালের জন্য দূরে থাকতে বলবেন বলে মনস্থির করেছিলেন তা নিষেধ করে দেন। উল্টো হুকুম দেন যেন তিনি ধৈর্যসহকারে তাদেরকে সঙ্গদান করেন এবং তাদেরকেও তাঁর সঙ্গগ্রহণের সুযোগ দেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
‘ধৈর্য-স্থৈর্যের সাথে নিজেকে সেইসকল লোকের সংসর্গে রাখ, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় নিজেদের প্রতিপালককে এ কারণে ডাকে যে, তারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায় তোমার দৃষ্টি যেন তাদের থেকে সরে না যায়।২৭৮
সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা মনস্থ করেছিলেন তাতে নিবৃত্ত হন। অতঃপর তিনি যখনই এ গরীব সাহাবীদেরকে দেখতেন, বলে উঠতেন, মুবারকবাদ ওইসব লোকদের, যাদের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা আমাকে তিরস্কার করেছেন। এরপর থেকে তিনি তাদেরকে সঙ্গদান আরও বৃদ্ধি করে দেন। তাদের সঙ্গে যখন বসতেন, তখন যতক্ষণ না তারা মজলিস থেকে উঠা শুরু করত, ততক্ষণ তিনি উঠতেন না, তাদের সঙ্গেই বসে থাকতেন।
হাদীছটির শিক্ষা
ক. ধনীদের খাতিরে কখনও গরীবদের প্রতি মনোযোগ কমানো উচিত নয়। অবহেলার তো প্রশ্নই আসে না।
খ. ধন-সম্পদ ও আভিজাত্যের অহমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ অহমিকা ঈমান ও সত্যগ্রহণের পক্ষে অনেক বড় বাধা।
গ. ইসলামের শুরুকালটা ছিল গরীব ও সাধারণ স্তরের লোকদের। কাজেই নিজের আশপাশে বেশিরভাগ এ শ্রেণীর লোক দেখলে কোনও হকপন্থীর দমে যাওয়া ঠিক নয়; বরং এটাকে তার হকপন্থী হওয়ার এক নিদর্শন গণ্য করা উচিত।
২৭৮. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ২৮
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)