মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৫৫১
প্রথম অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫১। হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তাআলা মু'মেনদিগকে নিজের নিকটবর্তী করিবেন এবং আল্লাহ্ তা'আলা নিজ বাজু তাহার উপরে রাখিয়া তাহাকে ঢাকিয়া লইবেন। অতঃপর আল্লাহ্ সেই বান্দাকে বলিবেনঃ আচ্ছা বল দেখি। এই গোনাহটি তুমি করিয়াছ কি ? এই গোনাহটি সম্পর্কে তুমি অবগত আছ কি? সে বলিবে হ্যাঁ, হে আমার রব। আমি অবগত আছি। শেষ নাগাদ এক একটি করিয়া তাহার কৃত সমস্ত গোনাহের স্বীকৃতি আদায় করিবেন। এদিকে সে বান্দা মনে মনে এই ধারণা করিবে যে, সে এই সমস্ত অপরাধের কারণে নির্ঘাত ধ্বংস হইবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলিবেন দুনিয়াতে আমি তোমার এই সমস্ত অপরাধ ঢাকিয়া রাখিয়াছিলাম। আর আজ আমি উহা মাফ করিয়া তোমাকে নাজাত দিব। অতঃপর তাহাকে নেকীর আমলনামা দেওয়া হইবে। আর কাফের ও মুনাফেকদিগকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সম্মুখে আনয়ন করা হইবে এবং উচ্চ স্বরে এই ঘোষণা দেওয়া হইবে ইহারা তাহারা, যাহারা আপন পরওয়ারদিগারের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করিত। জানিয়া রাখ, এই সমস্ত যালিমদের উপর আজ আল্লাহর লা'নত।—মোত্তাঃ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: إِن الله يدني الْمُؤمن فَيَضَع على كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ فَيَقُولُ: أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا؟ أَتَعْرِفُ ذَنْب كَذَا؟ فَيَقُول: نعم يَا رب حَتَّى قَرَّرَهُ ذنُوبه وَرَأى نَفْسِهِ أَنَّهُ قَدْ هَلَكَ. قَالَ: سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ وَأَمَّا الْكُفَّارُ وَالْمُنَافِقُونَ فَيُنَادَى بِهِمْ على رؤوسِ الْخَلَائِقِ: (هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلَا لعنةُ اللَّهِ على الظالمينَ) مُتَّفق عَلَيْهِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার খাস রহমতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন তিনি মুমিনদেরকে কাছে ডেকে পর্দা ফেলে দেবেন। অর্থাৎ সকলের থেকে আড়ালে নিয়ে যাবেন। তারপর এক এক করে তার ওইসকল গুনাহ তার সামনে উল্লেখ করবেন, যা সে গোপনে করেছিল, কোনও মানুষ তা জানত না। প্রত্যেকটি সম্পর্কে সে স্বীকার করবে যে, সে তা করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তার সামনে আমলনামাও খুলে দেবেন। তাতেও সে তার গোপন গুনাহসমূহ দেখতে পাবে। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, এ অবস্থায় সে ডানে-বামে তাকাবে। সে তাকানোটা হবে চরম ভয় ও আতঙ্কের কারণে। সে ধরেই নেবে আজ তার মুক্তির কোনও উপায় নেই। কিন্তু পরম দয়ালু আল্লাহ তাকে নির্ভয় দেবেন। বলবেন, দুনিয়ায় তোমার এসব গুনাহ আমি গোপন রেখেছিলাম, আজ আমি ক্ষমা করে দিলাম। এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ বলবেন, তোমার কোনও ভয় নেই। তুমি আমার পর্দার ভেতর রয়েছ। আমি ছাড়া তোমার গুনাহ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না।

প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।

খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন।

গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে।

ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান