মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
হাদীস নং: ৫৫২০
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - নিকৃষ্ট লোকেদের ওপরেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
৫৫২০। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ দাজ্জাল বাহির হইবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করিবে। আব্দুল্লাহ্ বলেন, আমি জানি না হুযূর (ছাঃ) চল্লিশ দিন অথবা মাস অথবা বৎসর, ইহার কোনটি বলিয়া ছেন? অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে প্রেরণ করিবেন। দেখিতে তিনি উরওয়া ইবনে মাসউদের সদৃশ। তিনি দাজ্জালের খোজ করিবেন এবং তিনি তাহাকে হত্যা করিবেন। তিনি (হযরত ঈসা) সাত বৎসর এই যমীনে অবস্থান করিবেন, সেই যমানায় (মানুষের মধ্যে এমন শান্তি বিরাজ করিবে যে,) দুই জন লোকের মধ্যেও শত্রুতা থাকিবে না। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা সিরিয়ার দিক হইতে একটি শীতল বায়ু প্রবাহিত করিবেন, উক্ত বায়ু ভূপৃষ্ঠে এমন একজন লোককেও জীবিত রাখিবে না, যাহার অন্তরে রেণু-কণা পরিমাণ নেকী বা ঈমান থাকিবে। (অর্থাৎ, সেই বাতাসে প্রতিটি ঈমানদার মৃত্যুবরণ করিবে।) যদি সেই সময় তোমাদের কেহ পাহাড়ের অভ্যন্তরেও আত্মগোপন করে, উক্ত বায়ু সেখানে প্রবেশ করিয়াও তাহার রূহ কবয করিবে। তিনি বলিয়াছেন; অতঃপর কেবলমাত্র নিকৃষ্ট ফাসেক ও বদকার লোকগুলিই অবশিষ্ট থাকিয়া যাইবে। তাহারা বদ কাজে পাখীদের ন্যায় দ্রুতগামী এবং খুন খারাবীতে হিংস্র জন্তুর ন্যায় পাষাণ হইবে। ভাল-মন্দ তারতম্য করার কোন যোগ্যতা তাহাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকিবে না। তখন শয়তান একটি আকৃতি ধারণ করিয়া তাহাদের নিকট আসিবে এবং বলিবে, তোমাদের কি লজ্জাবোধ হয় না? তখন লোকেরা বলিবে, আচ্ছা তুমিই বল আমাদের কি করা উচিত। অতঃপর শয়তান তাহাদিগকে মূর্তিপূজার নির্দেশ করিবে। এই অবস্থায় তাহারা অতি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ও ভোগ-বিলাসে জীবন যাপন করিতে থাকিবে। অতঃপর সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হইবে এবং যে ব্যক্তিই উক্ত আওয়ায শুনিবে, সে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এদিক সেদিক মাথা ঘুরাইতে থাকিবে। হুযূর (ছাঃ) বলেন; সর্বপ্রথম উক্ত আওয়ায সেই ব্যক্তিই শুনিতে পাইবে, যে তাহার উটের জন্য পানির চৌবাচ্চা মেরামত কার্যে রত। তখন সে ভীত হইয়া সেখানেই মৃত্যুবরণ করিবে এবং তাহার সাথে সাথে অন্যান্য লোকও মারা যাইবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা কুয়াশার ন্যায় খুব হালকা ধরনের বৃষ্টি বর্ষণ করিবেন। ইহাতে ঐ সমস্ত দেহগুলি সজীব হইয়া উঠিবে, যেইগুলি কবরের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হইয়া রহিয়াছিল। অতঃপর দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হইবে, তখন সমস্ত লোক উঠিয়া দাড়াইবে। অতঃপর ঘোষনা দেওয়া হইবে,হে লোকসকল! তোমরা দ্রুত তোমাদের পরওয়ারদিগারের দিকে ছুটিয়া আস (ফিরিশতা দিগকে নির্দেশ দেওয়া হইবে,) তাহাদিগকে ঐখানে থামাইয়া রাখ, তাহাদিগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইবে। অতঃপর ফিরিশতাদিগকে বলা হইবে, ঐ সমস্ত লোকদিগকে বাহির কর যাহারা জাহান্নাম -এর উপযোগী হইয়াছে। তখন ফিরিশতাগণ বলিবেন, কতজন হইতে কতজন বাহির করিব? বলা হইবে, প্রত্যেক হাজার হইতে নয়শত নিরানব্বইজনকে জাহান্নামের জন্য বাহির কর। এইপর্যন্ত বলার পর হুযূর (ছাঃ) বলিলেন; উহা সেই দিন যেইদিন সম্পর্কে কুরআনে বলা হইয়াছে। يَوْمَ يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا সেই দিন শিশুদিগকে বৃদ্ধ করিয়া ফেলিবে। (অর্থাৎ, সেই দিনের বিভীষিকায় শিশুও বৃদ্ধ হইয়া যাইবে।) يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ অর্থাৎ, সেই দিন বিরাট সংকটময় অবস্থা প্রকাশ পাইবে। — মুসলিম। হযরত মুআবিয়া (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ পূর্বে 'তওবার' অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে।
[এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচ্ছেদ নাই]
[এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচ্ছেদ নাই]
كتاب الفتن
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ» لَا أَدْرِي أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ عَامًا «فَيَبْعَثُ اللَّهُ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ كَأَنَّهُ عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ فَيَطْلُبُهُ فَيُهْلِكُهُ ثُمَّ يَمْكُثُ فِي النَّاسِ سَبْعَ سِنِينَ لَيْسَ بَيْنَ اثْنَيْنِ عَدَاوَةٌ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ رِيحًا بَارِدَةً مِنْ قِبَلِ الشَّامِ فَلَا يَبْقَى عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ أَوْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ دَخَلَ فِي كَبِدِ جَبَلٍ لَدَخَلَتْهُ عَلَيْهِ حَتَّى تَقْبِضَهُ» قَالَ: فَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ فِي خِفَّةِ الطَّيْرِ وَأَحْلَامِ السِّبَاعِ لَا يَعْرِفُونَ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُونَ مُنْكَرًا فَيَتَمَثَّلُ لَهُمُ الشَّيْطَانُ فَيَقُولُ أَلَا تَسْتَجِيبُونَ؟ فَيَقُولُونَ: فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَيَأْمُرُهُمْ بِعِبَادَةِ الْأَوْثَانِ وَهُمْ فِي ذَلِكَ دَارٌّ رِزْقُهُمْ حَسَنٌ عَيْشُهُمْ ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَلَا يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلَّا أَصْغَى لِيتًا وَرَفَعَ لِيتًا قَالَ: وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَ إِبِلِهِ فَيَصْعَقُ وَيَصْعَقُ النَّاسُ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ مَطَرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ فَيَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ثُمَّ يُقَالُ: يَا أَيُّهَا الناسُ هَلُمَّ إِلى ربِّكم وقفوهُم إِنَّهم مسؤولونَ. فَيُقَالُ: أَخْرِجُوا بَعْثَ النَّارِ. فَيُقَالُ: مِنْ كَمْ؟ كَمْ؟ فَيُقَالُ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ قَالَ: «فَذَلِكَ يَوْمَ يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا وَذَلِكَ يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَذُكِرَ حَدِيثُ مُعَاوِيَةَ: «لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ» فِي «بَاب التَّوْبَة»