মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
হাদীস নং: ৫৩৮২
প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৩৮২। হযরত হোযাইফা (রাঃ) বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করিত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতাম এই ভয়ে—যেন আমি উহাতে লিপ্ত না হই। হোযাইফা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমরা একসময় মূর্খতা ও মন্দের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম, অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা আমাদিগকে এই কল্যাণ (অর্থাৎ, দ্বীন-ইসলাম) দান করেন। তবে কি এই কল্যাণের পর পুনরায় অকল্যাণ আসিবে ? তিনি বলিলেন: হ্যাঁ, আসিবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলাম, সেই অকল্যাণের পরে কি আবার কল্যাণ আসিবে ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আসিবে, তবে তাহা হইবে ধোয়ামুক্ত। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, সেই ধোঁয়া কি প্রকৃতির। তিনি বলিলেন; লোকেরা আমার সুন্নত বর্জন করিয়া অন্য তরীকা গ্রহণ করিবে এবং আমার পথ ছাড়িয়া লোকদিগকে অন্য পথে পরিচালিত করিবে। তখন তুমি তাহাদের মধ্যে ভাল কাজও দেখিতে পাইবে এবং মন্দ কাজও। আমি আবার জিজ্ঞাসা করিলাম, সেই কল্যাণের পরও কি অকল্যাণ আসিবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, দোযখের দ্বারে দাঁড়াইয়া কতিপয় আহ্বানকারী লোকদিগকে সেই দিকে আহ্বান করিবে। যাহারা তাহাদের আহ্বানে সাড়া দিবে তাহাদিগকে উহারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করিয়া ছাড়িবে। আমি বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমাদিগকে তাহাদের পরিচয় জানাইয়া দিন। তিনি বলিলেন; তাহারা আমাদের মতই মানুষ হইবে এবং আমাদের ভাষায় কথা বলিবে। আমি বলিলাম, আমি সে অবস্থায় উপনীত হইলে তখন আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলিলেন; তখন তুমি মুসলমানদের জামাত ও মুসলমানদের ইমামকে আঁকড়াইয়া ধরিবে। আমি বলিলাম, সে সময় যদি কোন মুসলিম জামাত ও মুসলিম ইমাম না থাকে ( তখন আমাকে কি করিতে হইবে)? তিনি বলিলেন; তখন তুমি সেই সমস্ত বিচ্ছিন্ন দলকে পরিত্যাগ করিবে, যদিও তোমাকে গাছের শিকড়ের আশ্রয় নিতে হয় এবং তুমি এই নির্জন অবস্থায় থাকিবে যতক্ষণ না তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়। (অর্থাৎ, মৃত্যু পর্যন্ত বাতিল হইতে দূরে অবস্থান করিতে হইবে, ইহাতে যে কোন দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারে তোমাকে প্রস্তুত থাকিতে হইবে।) — মোত্তাঃ আর মুসলিমের এক রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে—রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলিয়াছেন : আমার (ওফাতের পরে এমন কতিপয় ইমাম ও বাদশাহর আবির্ভাব ঘটিবে, যাহারা আমার নির্দেশিত পথে চলিবে না এবং আমার সুন্নত ও তরীকানুযায়ী আমল করিবে না। আবার তাহাদের মধ্যেও এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটিবে যাহারা গায়ে-গঠনে এবং চেহারা-অবয়বে মানুষই হইবে, কিন্তু তাহাদের অন্তরসমূহ হইবে শয়তানের ন্যায়। হোযাইফা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদি আমি সেই অবস্থায় পতিত হই তখন আমার করণীয় কি হইবে? তিনি বলিলেন; তোমার আমীর (শাসক) যাহা বলে তাহা মানিবে এবং তাহার আনুগত্য করিবে, যদিও তোমার পৃষ্ঠে আঘাত করা হয় এবং তোমার মাল-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, তবুও তাহার নির্দেশ মানিয়া চলিবে এবং তাহার আনুগত্য করিবে।
الفصل الاول
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَن الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: «نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ» . قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: «قَوْمٌ يَسْتَنُّونَ بِغَيْرِ سُنَّتِي وَيَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ» . قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: «نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا. قَالَ: «هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا» . قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: «تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ» . قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ؟ قَالَ: «فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: قَالَ: «يَكُونُ بَعْدِي أَئِمَّةٌ لَا يَهْتَدُونَ بِهُدَايَ وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَتِي وَسَيَقُومُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الشَّيَاطِينِ فِي جُثْمَانِ إِنْسٍ» . قَالَ حُذَيْفَةُ: قُلْتُ: كَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ؟ قَالَ: تَسْمَعُ وَتُطِيعُ الْأَمِيرَ وَإِنْ ضَرَبَ ظهرك وَأخذ مَالك فاسمع وأطع
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এই হাদীসে খলীফায়ে রাশেদ হযরত ওসমান (রাঃ)-এর যুগ হইতে পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন ব্যাপক ফিতনা ও ফ্যাসাদের দিকে ইংগিত করা হইয়াছে।
