মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়
হাদীস নং: ৫২৯৬
প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে
৫২৯৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিরে আসিয়া (আমাদিগকে বলিলেন: (পূর্বের নবীগণের) উম্মতদিগকে আমার সম্মুখে পেশ করা হয়। (দেখিলাম) একজন নবী যাইতেছেন, তাঁহার সঙ্গে রহিয়াছে মাত্র একজন লোক। আরেক জন নবী, তাঁহার সঙ্গে রহিয়াছে কেবল দুই জন লোক। অন্য এক নবীর সঙ্গে রহিয়াছে একদল লোক। একজন নবী এমনও ছিলেন, যাঁহার সাথে কেহই ছিল না। অতঃপর দেখিলাম এক বিরাট জামা'আত, যাহা দিগন্ত জুড়িয়া রহিয়াছে। তখন আমি আকাঙ্ক্ষা করিলাম এই জামাআতটি যদি আমার উম্মত হইত। এই সময় বলা হইল, ইহা হযরত মুসা (আঃ) ও তাঁহার জাতি। অতঃপর আমাকে বলা হইল, আপনি ভাল করিয়া নজর করুন। তখন আমি দিগন্ত জোড়া একটি বিশাল জামাআত দেখিলাম। এই সময় আমাকে আবার বলা হইল, আপনি এইদিক-ঐদিক দেখুন। তখন আমি বিরাট জামা'আত দেখিতে পাইলাম। যাহা (এই সকল ) দিগন্ত জুড়িয়া রহিয়াছে। এইবার আমাকে জানান হইল, ইহারা আপনার উম্মত। ইহাদের অগ্র ভাগে সত্তর হাজার লোক রহিয়াছে যাহারা বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করিবে। তাহারা ঐ সমস্ত লোক যাহারা অশুভ-অমঙ্গল চিহ্ন বা লক্ষণ মানে না, ঝাড়-ফুঁক বা মন্ত্র-তন্ত্রের ধার ধারে না এবং (আগুনে পোড়া লোহার) দাগ লাগায় না। তাহারা আপন পরওয়ারদিগারের উপর ভরসা রাখে। তখন উক্কাশা ইবনে মিছান দাড়াইয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্।) আল্লাহর কাছে দো'আ করুন তিনি যেন আমাকে তাহাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি এই বলিয়া দো'আ করিলেন হে আল্লাহ্। তাহাকেও উহাদের মধ্যে শামিল কর। ইহার পর আরেক ব্যক্তি উঠিয়া দাড়াইল এবং আরয করিল আমার জন্যও আল্লাহর কাছে দো'আ করুন, তিনি যেন আমাকেও উহাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন এই ব্যাপারে উক্কাশা তোমার আগে সুযোগ লইয়া গিয়াছে। — মোত্তাঃ
وَعَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ: عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلَانِ وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيُّ وَلَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفُقَ فَرَجَوْتُ أَنْ يَكُونَ أُمَّتِي فَقِيلَ هَذَا مُوسَى فِي قَوْمِهِ ثُمَّ قِيلَ لِي انْظُرْ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفُقَ فَقِيلَ لِي انْظُرْ هَكَذَا وَهَكَذَا فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفق فَقيل: هَؤُلَاءِ أُمَّتُكَ وَمَعَ هَؤُلَاءِ سَبْعُونَ أَلْفًا قُدَّامَهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ هُمُ الَّذِينَ لَا يَتَطَيَّرُونَ ولايسترقون وَلَا يَكْتَوُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ «اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ مِنْهُمْ» . ثُمَّ قَامَ رجل فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. فَقَالَ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ. مُتَّفق عَلَيْهِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
‘শুভ-অশুভ চিহ্ন না মানা' – ইসলামের পূর্বে আরবের লোকেরা কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাহির হওয়ার পূর্বে পাখী উড়াইত। যদি উহা ডান দিকে যাইত তখন উহাকে শুভ এবং বাম দিকে গেলে অশুভ লক্ষণ মনে করিত। (ইসলাম এই ধরনের বিশ্বাসকে সমর্থন করে না। ) رقية অর্থঃ ঝাড়-ফুঁক বা মন্ত্র। অর্থাৎ, তাহারা আদৌ ইহা করে না অথবা কোরআন-হাদীস বিরোধী জাহেলী যুগের রীতি অনুযায়ী কুফরী বাক্য দ্বারা এই কাজ করে না। كي অর্থ লোহা গরম করিয়া ক্ষতস্থানে দাগ দেওয়া। জাহেলী যুগের লোকদের এই দৃঢ় বিশ্বাস বা আকীদা ছিল যে, শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে তপ্ত লোহা দিয়া দাগ দিলে দেহ রোগাক্রান্ত হয় না। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ই রোগ নিরাময়কারী বিশ্বাস রাখিয়া ক্ষতস্থানে বিজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশে দাগ দেওয়া জায়েয আছে।
