মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২৮৫
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা
৫২৮৫। হযরত আবু বাকরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বলিলেনঃ যাহার হায়াত দীর্ঘ হয় এবং আমল ভাল থাকে। সে আবার জিজ্ঞাসা করিল, মন্দ ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেনঃ যাহার বয়স দীর্ঘ হয়, কিন্তু আমল খারাপ থাকে। – আহমদ, তিরমিযী ও দারেমী
الْفَصْل الثَّانِي
عَن أبي بكرةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ النَّاسِ خيرٌ؟ قَالَ: «مَن طالَ عمُرُه وحسُنَ عَمَلُهُ» . قَالَ: فَأَيُّ النَّاسِ شَرٌّ؟ قَالَ: «مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَسَاءَ عَمَلُهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ والدارمي

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে দীর্ঘজীবি নেক আমলকারীকে শ্রেষ্ঠ মানুষ বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তার শ্রেষ্ঠ হওয়ারই তো কথা। কেননা দুনিয়া আখিরাতের শষ্যক্ষেত্র। এখানে যে যতবেশি আমল করবে, আখিরাতে ততবেশি সুফল পাবে। বেশি আমলের জন্য বেশি সময় দরকার। কাজেই যে ব্যক্তি বেশি দিন বাঁচবে, সে আমলের জন্য বেশি সময় পাবে। সে হিসেবে দীর্ঘ আয়ু আল্লাহ তা'আলার একটি বিরাট নি'আমত। নেক আমলের মাধ্যমে এ নি'আমতের কদর করা উচিত। যারা তা করতে পারে তারা কতই না ভাগ্যবান। যারা সৎকর্মের ভেতর দিয়ে তাদের দীর্ঘ আয়ু কাটায়, তারা এত বেশি পুণ্য অর্জন করতে পারে, যা অল্প আয়ুতে কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই তো এক হাদীছে আছে-

“হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, বনু খুযা'আ গোত্রের শাখা বনূ বালীর দুজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাদের একজন শহীদ হয়ে যায়। অপরজন আরও এক বছর জীবিত থাকে। তারপর সেও মারা যায়। তালহা ইবন 'উবায়দুল্লাহ রাযি. বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, যে ব্যক্তি পরে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে সে শহীদ ব্যক্তির আগে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আমি অবাক হলাম। ভোরবেলা আমি বিষয়টা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালাম। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি কি শহীদ ব্যক্তির পর রোযা রাখেনি এবং এক বছর নামায পড়েনি?” মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৩৮৯, ১৪০১, ১৪০৩, ৮৩৯৯

বস্তুত মানুষের আয়ু হল ব্যবসায়ের মূলধনের মত। যার মূলধন যত বেশি, লাভও তত বেশি হয়। অনুরূপ যার আয়ু বেশি তার পুণ্যও বেশি হয়। ব্যবসায় লাভ হওয়াটাও কাঙ্ক্ষিত বটে, কিন্তু আয়ু দ্বারা লাভবান হওয়া অর্থাৎ বেশি পুণ্য সঞ্চয় করা একজন মু'মিনের পক্ষে অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষার বস্তু। কেননা এরই উপর নির্ভর করে আখিরাতের সফলতা। আর আখিরাতের সফলতাই প্রকৃত সফলতা।

প্রকাশ থাকে যে, দীর্ঘজীবী মানুষ শ্রেষ্ঠ তখনই, যখন তার আমল ভালো হয়, যেমনটা হাদীছে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে তার আমল যদি মন্দ হয়, তবে তো সে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট মানুষ সাব্যস্ত হবে। কেননা আয়ু দীর্ঘ পাওয়ার কারণে তার পাপের পরিমাণও অন্যদের তুলনায় বেশি হবে। যার পাপ যত বেশি, মানুষ হিসেবে সে তত বেশি মন্দ। তার পরকালীন জীবন হবে চরম ধ্বংসে সম্মুখীন।

সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বনিকৃষ্টের মাঝখানে আছে আরও দুই স্তর। এক হচ্ছে, যার আয়ু কম কিন্তু আমল ভালো। আরেক হচ্ছে, যার আয়ু কম এবং আমল মন্দ। এ সর্বমোট চার প্রকার হল। মধ্যবর্তী দুই স্তরের মধ্যে উত্তম ওই ব্যক্তি, যার আয়ু কম হলেও আমল ভালো। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আয়ুতে বরকত দান করুন এবং ভালো আমলওয়ালা হওয়ার তাওফীক দিন, আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও আমরা মুজাহাদার শিক্ষা পাই। কেননা আয়ু উপকারী হয় তখনই, যখন তা নেক আমলে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, যত বেশি সম্ভব নেক কাজের মাধ্যমে নিজ আয়ুকে কল্যাণময় করে তোলা।

খ. মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত সৎকর্মের মধ্যে, অন্য কিছুতে নয়। সুতরাং আল্লাহ তা'আলার কাছে শ্রেষ্ঠ মানুষরূপে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য আমাদের কর্তব্য সদা সৎকর্মে যত্নবান থাকা।

গ. আমরা সবাই দীর্ঘায়ু কামনা করি। কিন্তু দীর্ঘায়ু যদি অসৎকর্মে ব্যবহার করা হয়, তবে তা অশেষ ক্ষতিকর। তাই আমাদের উচিত অসৎকর্ম থেকে প্রতিটি মুহূর্তকে হেফাজত করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫২৮৫ | মুসলিম বাংলা