মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৮২
১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৮২। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ ঈমানদারগণ তাহাদের উত্তম চরিত্রের দ্বারা (নফল এবাদতকারী) রাত্রি জাগরণকারী ও দিনের বেলায় রোযা পালনকারীর মর্যাদালাভ করিবে। —আবু দাউদ
وَعَنْ

عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ قَائِمِ اللَّيْل وصائم النَّهَار» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা'আলার কাছে বান্দার উচ্চস্তর লাভের সর্বাপেক্ষা বড় মাধ্যম নামায ও রোযা। ফরয আদায়ের পর যদি নফল নামায-রোযাও নিয়মিত করা যায়, তবে এর দ্বারা আল্লাহপ্রাপ্তির পথে অকল্পনীয় উন্নতি অর্জিত হয়। নামায ও রোযা দ্বারা নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হয়। নফস পানাহার ও ঘুমের প্রতি আগ্রহী থাকে। এগুলো যত বেশি করা যায়, নফস ততো শক্তিশালী হয় এবং এর পাশাপাশি শরীর-মনে অলসতা জন্ম নেয়। ফলে ইবাদত-বন্দেগীর আগ্রহ হ্রাস পায়। তা তো হ্রাস পায়ই, উপরন্ত নফস গুনাহের কাজে প্ররোচনা দেয়। এভাবে একদিকে ইবাদত-বন্দেগী কম হয়, অন্যদিকে পাপকর্ম বেশি হয়। এর থেকে বাঁচার উপায় হল নফসকে দুর্বল করা ও তাকে বশীভূত করে রাখা। নফল নামায ও রোযা এর পক্ষে বেশি সহায়ক। কেননা এর ফলে যে পানাহার ও ঘুম দ্বারা নফস পরিপুষ্ট হয়, তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ঘুম ও পানাহার নিয়ন্ত্রণে থাকলে নফসও স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। ফলে তার পক্ষে ব্যক্তিকে পাপকর্মে প্ররোচিত করা ও ইবাদত-বন্দেগী থেকে দূরে সরানো সম্ভব হয় না। তখন ব্যক্তি অতিদ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে উন্নতির এমন এক স্তরে পৌঁছে যায়, যেখানে অন্যদের পক্ষে পৌঁছা সম্ভব হয় না। তবে হাঁ, উন্নত আখলাক-চরিত্রের কথা আলাদা। হাদীছটিতে বলা হয়েছে-
إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ (নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্র দ্বারা যে ব্যক্তি দিনে রোযা রাখে ও রাত জেগে ইবাদত করে, তার সমমর্যাদায় পৌঁছতে পারে)। এর কারণ নফল নামায-রোযা দ্বারা যেমন নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করা হয়, তেমনি এ সংগ্রাম করা হয় উত্তম চরিত্র দ্বারাও। চরিত্র যার ভালো, সে মানুষের দুর্ব্যবহার সহ্য করে, অন্যের থেকে প্রতিশোধ নেয় না; বরং ক্ষমাপরায়ণ হয়। এমনিভাবে চরিত্রবান ব্যক্তিকে সর্বপ্রকার লোভ-লালসা সংবরণ করে সততার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হয়। নফসের বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম ছাড়া এসব করা সম্ভব হয় না। এ সংগ্রামে যে হেরে যায়, সে লোভ-লালসার শিকার হয়। সে অন্যের দুর্ব্যবহার তো সহ্য করেই না, উল্টো নিজেই অন্যের প্রতি দুর্ব্যবহার করে। সে মজলুম নয়; বরং জালেম হয়। এ কারণেই উত্তম চরিত্রের এত গুরুত্ব। আর এ কারণেই উত্তম চরিত্র দ্বারা নফল নামায- রোযার অনুরূপ উচ্চমর্যাদা অর্জন করা যায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নফল রোযা ও নফল নামায, বিশেষত তাহাজ্জুদ অতি উচ্চ ফযীলতপূর্ণ আমল।

খ. নিজ আখলাক-চরিত্র উন্নত করার সাধনা অব্যাহত রাখা চাই, যেহেতু এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার কাছে অতি উচ্চমর্যাদা লাভ হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫০৮২ | মুসলিম বাংলা