মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৮০
১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৮০। হযরত হারেসা ইবনে ওয়াহব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ কঠোর ও রুক্ষ-স্বভাব ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করিবে না। বর্ণনাকারী বলেন جواظ অর্থ কঠিন ও মন্দ-স্বভাব ব্যক্তি। — আবু দাউদ তাহার সুনান গ্রন্থে ও বায়হাকী শোআবুল ঈমানে। আর জামেউল উসূল গ্রন্থকার স্বীয় গ্রন্থে হারেসা হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং শরহে সুন্নতেও অনুরূপভাবে হারেসা হইতে বর্ণিত হইয়াছে, আর সেখানে উল্লেখ রহিয়াছে । جواظ (কঠিন) ও الجعظري (রুক্ষ-স্বভাব ব্যক্তি) জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারিবে না। আর الجعظري বলা হয় কঠিন ও মন্দ-স্বভাব ব্যক্তিকে। আর মাসাবীহ গ্রন্থে এই হাদীসটি ইকরামা ইবনে ওয়াহব হইতে বর্ণিত। সেখানে উল্লেখ রহিয়াছে, جواظ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ধন-সম্পদ সঞ্চয় করে, উহা হইতে কাহাকেও দান করে না। আর الجعظري অর্থঃ কঠিন ও মন্দ স্বভাব ব্যক্তি।
وَعَنْ حَارِثَةَ

بْنِ وَهْبٌ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ» قَالَ: وَالْجَوَّاظُ: الْغَلِيظُ الْفَظُّ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ فِي «سُنَنِهِ» . وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ وَصَاحِبُ» جَامِعِ الْأُصُولِ «فِيهِ عَنْ حَارِثَةَ. وَكَذَا فِي» شَرْحِ السُّنَّةِ عَنْهُ وَلَفْظُهُ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ الْجَعْظَرِيُّ» . يُقَالُ: الْجَعْظَرِيُّ: الْفَظُّ الْغَلِيظُ

وَفِي نُسَخِ «الْمَصَابِيحِ» عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ وَهْبٍ وَلَفْظُهُ قَالَ: وَالْجَوَّاظُ: الَّذِي جَمَعَ وَمَنَعَ. وَالْجَعْظَرِيُّ: الغليظ الْفظ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইমাম নববী রহ. جواظ -এর অর্থ করেছেন, এমন ব্যক্তি, যে ধন-সম্পদ খুব সঞ্চয় করে কিন্তু তা থেকে গরীব-দুঃখীকে কিছু দেয় না । তিনি বলেন, কারও মতে এর অর্থ মোটাতাজা শরীরের এমন লোক, যে দর্পিত ভঙ্গিতে চলাফেরা করে। কেউ বলেন, খাটো ভুঁড়িওয়ালা লোক।
শব্দটির এছাড়া আরও ব্যাখ্যা আছে।
جواظ -এর অর্থ ইমাম নববী রহ. যা বলেছেন, বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে এর সমর্থনে হাদীছও উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এর অর্থ কী? তিনি বলেন, এমন লোক, যে খুব অর্থ-সম্পদ জমা করে, কিন্তু সে কৃপণ, তা থেকে কাউকে কিছু দেয় না।
ইমাম খাত্তাবী ও জাওহারী রহ. শব্দটির অর্থ করেছেন স্থূলদেহী ও চালচলনে অহংকারী। নেহায়া গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, এর অর্থ খাটো, লোভাতুর ও স্থূলোদর, পেট ভরে খাওয়া ছাড়া যার অন্য কোনও চিন্তা নেই।
যেসকল স্বভাব বর্ণিত হয়েছে তা সবই নিন্দনীয়। এর কোনওটিই ইসলাম পসন্দ করে না। বিভিন্ন হাদীছে এর নিন্দা জানানো হয়েছে ও মুমিনদেরকে এর ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। যেমন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, কঠোর-কঠিন স্বভাবের লোক আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। লোভ-লালসাবশে অর্থ সঞ্চয় করা এবং তা থেকে গরীব-দুঃখীকে কিছু না দেওয়া কাফের-মুনাফিকের স্বভাব। অহংকারী ও দর্পিত স্বভাবের লোক জান্নাতে যাবে না। ভোগ-বিলাসিতায় মেতে থাকার কারণে মোটাতাজা হয়ে যাওয়াটা আখেরাতবিমুখিতার লক্ষণ। তর্কপ্রবণতা ও সত্যগ্রহণে অস্বীকৃতি ছিল ঘোর কাফেরদের খাসলাত। কুরআন মাজীদে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসকল স্বভাব উল্লেখ করে আমাদের সাবধান করেছেন যে, এর দ্বারা যে নিন্দনীয় স্বভাব বোঝানো হয়ে থাকে তা থেকে তোমরা দূরে থাকবে। কেননা এ স্বভাবের লোক জাহান্নামে যাবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫০৮০ | মুসলিম বাংলা