আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩৩৭
২২২০. তায়েফের যুদ্ধ।
৪০০১। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) .... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিন হাওয়াযিন, গাতফান ইত্যাদি গোত্র নিজেদের গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী ও সন্তান-সন্ততিসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এলো। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সঙ্গে ছিলো দশ হাজার তুলাকা*সৈনিক। যুদ্ধে তারা সবাই তাঁর পাশ থেকে পিছনে সরে গেল। ফলে তিনি একাকী রয়ে যান। সেই সংকটময় মূহুর্তে তিনি আলাদা-আলাদাভাবে দু’টি ডাক দিয়েছিলেন, তিনি ডান দিক ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারসকল, তাঁরা সবাই উত্তরে বললেন, আমরা হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। এরপর তিনি বাম দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারসকল। তাঁরা সবাই উত্তরে বললেন, আমরা হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে ছিলেন। (অবস্থা আরো তীব্র হলে) তিনি নীচে নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। (শেষ পর্যন্ত) মুশরিক দলই পরাজিত হল।
সে যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গনীমত হস্তগত হল। তিনি [নবী কারীম (ﷺ)] সেসব সম্পদ মুহাজির এবং নও-মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে তার কিছুই দেননি। তখন আনসারদের (কেউ কেউ) বললেন, কঠিন মূহুর্ত আসলে আমাদেরকে ডাকা হয় আর গনীমত অন্যদেরকে দেওয়া হয়। কথাটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। তাই তিনি তাদেরকে একটি তাঁবুতে জমায়েত করে বললেন, হে আনসারগণ! একি কথা আমার কাছে পৌঁছলো? তাঁরা চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, হে আনসারগণ! তোমরা কি খুশি থাকবে না যে, লোকজন দুনিয়ার ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা (বাড়ি) ফিরে যাবে আল্লাহর রাসূলকে সঙ্গে নিয়ে? তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করে নেবো।
বর্ণনাকারী হিশাম (রাহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু হামযা (আনাস ইবনে মালিক) আপনি কি এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকতাম বা কখন? (যে আমি তখন সেখানে থাকবো না)।
*‘তুলাকা’ শব্দটি ‘তালীক’- এর বহুবচন। এর অর্থ হল মুক্তিপ্রাপ্ত। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কাবাসীদের কয়েকজন ব্যতীত অবশিষ্ট সবাইকে সাধারণভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তুলাকা শব্দ দিয়ে সে সব ক্ষমাপ্রাপ্তদেরকে বুঝানো হয়েছে। হুনায়ন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা আলোচ্য হাদীসে দশ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত দশ হাজার ছিলো আনসার ও মুহাজিরদের সৈনিক সংখ্যা। আর ‘তুলাকা’দের সংখ্যা ছিলো এর এক-দশমাংশেরও অনেক কম। এ জন্য ইবনে হাজার আসকালানী ও অন্যান্য হাদীসবিদদের মতানুসারে এখানে ‘তুলাকা’ শব্দের পূর্বে একটি ‘ওয়া’ হরফ উহ্য আছে। অর্থাৎ দশ হাজার আনসার ও মুহাজির এবং মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন