মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৭৯
৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৭৯। হযরত বারা' ইবনে আ'যিব (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যখন দুই জন মুসলমানের পরস্পর সাক্ষাৎ হয় এবং তাহারা মুসাফাহা করে—পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাহাদের উভয়ের গুনাহসমূহ মাফ হইয়া যায়। —আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্ আবু দাউদের রেওয়ায়তে আছে— যখন দুই জন মুসলমান মিলিত হইয়া পরস্পর

মুসাফাহা করে এবং আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাহারা আল্লাহর কাছে মাফ চায়, তখন তাহাদের উভয়কে মাফ করিয়া দেওয়া হয়।
الْفَصْل الثَّانِي
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَتَفَرَّقَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ

وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: «إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَا وَحَمِدَا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَاهُ غفر لَهما»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা মুসাফাহা করার ফযীলত জানা গেল। মুসাফাহা করার দ্বারা কেবল পারস্পরিক মহব্বতেরই প্রকাশ ঘটে না, পাপরাশিও মোচন হয়ে যায়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إن المؤمن إذا صافح أخاه تحات خطاياهما كما تتحات ورق الشجر
'কোনও মুমিন ব্যক্তি যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে মুসাফাহা করে, তখন তাদের পাপরাশি ঝড়ে যায়, যেমন ঝড়ে যায় গাছের পাতা’। (মুসনাদুল বাযযার: ৮৩৩৫)

অপর এক হাদীছে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إن المؤمن إذا لقي المؤمن فسلم عليه، وأخذ بيده، فصافحه، تناثرت خطاياهما، كما يتناثر ورق الشجر
'মুমিন ব্যক্তি যখন অপর মুমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং সালাম দিয়ে তার হাত ধরে ও মুসাফাহা করে, তখন গাছের পাতা যেমন ঝড়ে যায়, তেমনি তাদের গুনাহসমূহও ঝড়ে যায়’। (আল-মু'জামুল আওসাত: ২৪৫)

অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ما من عبدين متحابين في الله يستقبل أحدهما صاحبه فيتصافحان و يصليان على النبي صلى الله عليه وسلم إلا لم يتفرقا حتى تغفر ذنوبهما ما تقدم وما تأخر
'একে অন্যকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এমন যে-কোনও দুই বান্দা যখন একে অন্যের সামনা-সামনি হয়, তারপর তারা একে অন্যের সঙ্গে মুসাফাহা করে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ে, তখন তারা একে অন্যের থেকে আলাদা হওয়ার আগেই তাদের আগের ও পরের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়’। (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৫৪৩)

উল্লেখ্য, মুসাফাহা কেবল একজন পুরুষ অপর পুরুষের সঙ্গে এবং একজন নারী অপর নারীর সঙ্গেই করতে পারে। হাঁ, পুরুষ তার মাহরাম নারীর সঙ্গেও মুসাফাহা করতে পারে, যেমন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে, ভাই তার বোনের সঙ্গে, ছেলে তার মায়ের সঙ্গে। এমনিভাবে অন্যান্য মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যেও মুসাফাহার বৈধতা আছে। কিন্তু গায়রে মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যে মুসাফাহার কোনও বৈধতা নেই। কোনও অজুহাতেই কোনও পুরুষ গায়রে মাহরাম নারীর হাত কিংবা কোনও নারী গায়রে মাহরাম পুরুষের হাত ধরতে পারবে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পুরুষদের বায়'আত গ্রহণ করতেন, তখন তো তাদের হাত ধরতেন। কিন্তু কোনও নারীর বায়'আতকালে তিনি তার হাত স্পর্শ করতেন না। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন-
وَاللَّهِ مَا مَسَّتْ يَدُهُ يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ فِي المُبَايَعَةِ، وَمَا بَايَعَهُنَّ إِلَّا بِقَوْلِهِ
'আল্লাহর কসম! বায়'আত গ্রহণের সময় তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) হাত কখনও কোনও নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি তাদের বায়'আত গ্রহণ করতেন কেবল তাঁর কথা দ্বারা’। (সহীহ বুখারী: ২৭১১; মুসনাদুল বাযযার: ১১০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৮৮৩৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৭৪৮)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মুসাফাহার দ্বারা মুসলিম ব্যক্তির পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। কাজেই আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা পাওয়ার আশায় মুসাফাহা করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান