মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৭৭
৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৭৭। কাতাদাহ্ (রঃ) বলেন, আমি হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করিললাম, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মধ্যে 'মুসাফাহার' প্রচলন ছিল কি? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, ছিল। —বুখারী
بَابُ الْمُصَافَحَةِ وَالْمُعَانَقَةِ: الْفَصْل الأول
عَن قتادةَ قَالَ: قُلْتُ لِأَنَسٍ: أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نعم. رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

مصافحة 'মুসাফাহা’–আভিধানিক অর্থ হইল, পরস্পর হাত মিলানো। ব্যবহারিক অর্থ কর মর্দন করা। কথিত আছে যে, প্রাক্ ইসলাম যুগে ইয়ামান দেশের লোকেরাই সর্বপ্রথম ইহার প্রচলন করিয়াছে। পরে ইসলামী শরীঅত ইহাকে জায়েয রাখিয়াছে। আল্লামা নববী বলেন, সাক্ষাতে মুসাফাহা করা ‘মুসতাহাব'। তবে কোন কোন এলাকায় ফজর ও আসরের নামাযের পর মুসাফাহা করার যে রেওয়াজ রহিয়াছে, ইহার মৌলিক কোন ভিত্তি নাই। ‘তা'লীকুস্ সাবীহ্’ কিতাবে উল্লেখ আছে, উভয় হাতে মুসাফাহা করা সুন্নত। এক হাতে মুসাফাহা করা অনৈসলামিক রীতি। গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে মুসাফাহা করা জায়েয নয়। معانقة মু'আনাকা—পরস্পর গলায় গলায় মিলিত হওয়া, আলিঙ্গন করা। ইহাও শরীআতের দৃষ্টিতে জায়েয রহিয়াছে। তবে কোন প্রকার ফেৎনা বা উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে আলিঙ্গন করা জায়েয নয়। تقبيل 'তাকবীল’—অর্থ চুমু খাওয়া। ইমাম আযম ও মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন, হাতে বা শরীরের কোন স্থানে চুম্বন করা মাকুরূহ। অবশ্য সম্মান প্রদর্শন ও বরকত হাসিলের উদ্দেশে চুম্বন করা জায়েয হওয়ার মধ্যে কাহারও দ্বিমত নাই। ফেতনা বা উত্তেজনা সৃষ্টির আশংকা থাকিলে জায়েয নয়। করমর্দনের পর হাতে চুমু দেওয়ার কোন ভিত্তি নাই ।
চুম্বনের প্রকারভেদঃ (১) স্নেহ-মমতার চুম্বন। যেমন— সন্তানের মুখে পিতা-মাতার চুমু দেওয়া। (২) সম্মান ও মহব্বতের চুম্বন। যেমন—সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার কপালে চুমু দেওয়া (৩) স্নেহের চুম্বন। যেমন শিশুর মুখে চুমু দেওয়া। (৪) সম্মানের চুম্বন। যেমন কোন আলেম, বুযুর্গ, হাকিম, শাসনকর্তা অথবা মুসলমানদের পরস্পর চুমু দেওয়া। (৫) উত্তেজনামূলক চুম্বন যেমন—স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরস্পর চুমু দেওয়া।
تقبيل الرجل ‘পদচুম্বন'। ইসলামে ‘সালাম', ‘মুসাফাহা’ ও ‘মু'আনাকাহ্’–মাত্র এই তিনটির বৈধতা স্বীকৃত। কদমবুচি বা পদচুম্বন নামে যেই রীতি সমাজে প্রচলিত রহিয়াছে, ইসলামে ইহার কোন ভিত্তি নাই।

সাহাবাগণ হইলেন সুন্নত প্রতিষ্ঠার পুরোধা, সুতরাং তাঁহারা যেই কাজ করিয়াছেন উহা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান