আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪২৪০
২২০২. খায়বারের যুদ্ধ
৩৯২০। ইয়াহয়া ইবনে বুকায়র (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ)- এর কন্যা ফাতিমা (রাযিঃ) আবু বকর (রাযিঃ)- এর নিকট রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর ত্যাজ্য সম্পত্তি মদীনা ও ফাদকে অবস্থিত ফাই (বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ) এবং খায়বারের খুমুসের (পঞ্চমাংশ) অবশিষ্টাংশ থেকে মিরাসী স্বত্ব চেয়ে পাঠালেন। তখন আবু বকর (রাযিঃ) উত্তরে বললেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে গেছেন, আমাদের (নবীদের) কোন ওয়ারিস হয় না, আমরা যা রেখে যাবো তা সাদ্কা হিসেবে পরিগণিত হবে। অবশ্য মুহাম্মাদ (ﷺ)- এর বংশধরগণ এ সম্পত্তি কেবল ভোগ করতে পারেন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাদ্কা তাঁর জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল আমি সে অবস্থা থেকে সামান্যতমও পরিবর্তন করবো না। এ ব্যাপারে তিনি যে নীতিতে ব্যবহার করে গেছেন আমিও ঠিক সেই নীতিতেই কাজ করবো।
এ কথা বলে আবু বকর (রাযিঃ) ফাতিমা (রাযিঃ)-কে এ সম্পদ থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। এতে ফাতিমা (রাযিঃ) (মানবোচিত কারণে) আবু বকর (রাযিঃ)-এর উপর নারাজ হয়ে গেলেন এবং তাঁর থেকে নিস্পৃহ হয়ে রইলেন। পরে তাঁর ওফাত পর্যন্ত তিনি (মানসিক সংকোচের দরুন) আবু বকর (রাযিঃ)-এর সাথে কথা বলেননি। নবী কারীম (ﷺ)- এর ওফাতের পর তিনি ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। এরপর তিনি ইন্তিকাল করলে তাঁর স্বামী আলী (রাযিঃ) রাতের বেলা তাঁর দাফন কার্য শেষ করে নেন। আবু বকর (রাযিঃ)-কেও এ সংবাদ দেননি। এবং তিনি তার জানাযার নামায আদায় করে নেন।*
ফাতিমা (রাযিঃ) জীবিত থাকা পর্যন্ত লোকজনের মনে আলী (রাযিঃ)- এর বেশ সম্মান ও প্রভাব ছিল। এরপর যখন ফাতিমা (রাযিঃ) ইন্তিকাল করলেন, তখন আলী (রাযিঃ) লোকজনের চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহ্ন দেখতে পেলেন। তাই তিনি আবু বকর (রাযিঃ)-এর সাথে সমঝোতা ও তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণের ইচ্ছা করলেন। [ফাতিমা (রাযিঃ)-এর অসুস্থতা ও অন্যান্য] ব্যস্ততার দরুন এ ছয় মাসে তাঁর পক্ষে বায়আত গ্রহণে অবসর হয়নি। তাই তিনি আবু বকর (রাযিঃ)-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আপনি আমার কাছে আসুন। তবে অন্য কেউ যেন আপনার সঙ্গে না আসে। কারণ আবু বকর (রাযিঃ)-এর সঙ্গে উমর (রাযিঃ)-ও উপস্থিত হোক-তিনি তা পছন্দ করেননি। (বিষয়টি শোনার পর) উমর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি একা একা তাঁর কাছে যাবেন না। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, তাঁরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করবে বলে তোমরা আশঙ্কা করছ? আল্লাহর কসম, আমি তাঁদের কাছে যাব।
তারপর আবু বকর (রাযিঃ) তাঁদের কাছে গেলেন। আলী (রাযিঃ) তাশাহহুদ পাঠ করে বললেন, আমরা আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু দান করেছেন সে সম্পর্কে অবগত আছি। আর যে কল্যাণ (অর্থাৎ খিলাফত) আল্লাহ্ আপনাকে দান করেছেন সে ব্যাপারেও আমরা আপনার সাথে হিংসা রাখি না। তবে খিলাফতের ব্যাপারে আপনি আমাদের উপর নিজের মতের প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের কাজে (পরামর্শ দেওয়াতে) আমাদেরও কিছু অধিকার রয়েছে। এ কথায় আবু বকর (রাযিঃ)-এর চোখ-যুগল থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো। এরপর তিনি যখন আলোচনা আরম্ভ করলেন তখন বললেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে আমার নিকটাত্মীয় অপেক্ষাও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর আত্মীয়বর্গ বেশী প্রিয়। আর এ সম্পদগুলোতে আমার এবং আপনাদের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারেও আমি কল্যাণকর পথ অনুসরণে কোন কসুর করিনি। বরং এ ক্ষেত্রেও আমি কোন কাজ পরিত্যাগ করিনি যা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে করতে দেখেছি।
তারপর আলী (রাযিঃ) আবু বকর (রাযিঃ)- কে বললেনঃ যোহরের পর আপনার হাতে বায়আত গ্রহণের ওয়াদা রইল। যোহরের নামায আদায়ের পর আবু বকর (রাযিঃ) মিম্বারে বসে তাশাহহুদ পাঠ করলেন, তারপর আলী (রাযিঃ)- এর বর্তমান অবস্থা এবং বায়আত গ্রহণে তার দেরি করার কারণ ও তাঁর (আবু বকরের) কাছে পেশকৃত আপত্তিগুলো তিনি বর্ণনা করলেন। এরপর আলী (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাশাহহুদ পাঠ করলেন এবং আবু বকর (রাযিঃ)-এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বললেন, তিনি বিলম্বজনিত যা কিছু করেছেন তা আবু বকর (রাযিঃ)-এর প্রতি হিংসা কিংবা আল্লাহ্ প্রদত্ত তাঁর এ সম্মানের অস্বীকার করার মনোবৃত্তি নিয়ে করেননি। (তিনি বলেন) তবে আমরা ভেবেছিলাম যে, এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শও দেওয়ার অধিকার থাকবে। অথচ তিনি [ আবু বকর (রাযিঃ)] আমাদের পরামর্শ ত্যাগ করে স্বাধীন মতের উপর রয়ে গেছেন। তাই আমরা মানসিকভাবে ব্যথা পেয়েছিলাম। (উভয়ের এ আলোচনা শুনে) মুসলমানগণ আনন্দিত হয়ে বললেন, আপনি ঠিকই করেছেন। এরপর আলী (রাযিঃ) আমর বিল মা‘রূফ (অর্থাৎ বায়আত গ্রহণ)-এর দিকে ফিরে এসেছেন দেখে সব মুসলমান আবার তাঁর প্রতি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন।
*ওফাতের পূর্বে ফাতিমা (রাযিঃ)-এর ওয়াসিয়াত ছিল যে, মৃত্যুর সাথে সাথেই যেনো তার কাফন-দাফন শেষ করা হয়, কারণ লোকজন ডাকাডাকি করলে তাতে পর্দার ব্যাঘাত ঘটনের আশঙ্কা আছে। সেমতে আলী (রাযিঃ) রাতের ভিতরই সব কাজ সেরে নিয়েছেন । আর সংবাদ তো নিশ্চয়ই আবু বকর (রাযিঃ) পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এ ধারণায় তিনি নিজে গিয়ে সংবাদ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। অবশ্য এ ছয় মাস যাবত তিনি আবু বকর (রাযিঃ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ না করায় মুসলমানদের মনে প্রশ্ন উদয় হলেও যেহেতু তিনি রোগে শয্যাশায়ী রাসূল তনয়ার খিদমতে ব্যস্ত থাকতেন, সেহেতু লোকজন তাঁর প্রতি কোন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি। কিন্তু ফাতিমা (রাযিঃ)-এর ওফাত হওয়ার পর সেই কারণ অবশিষ্ট না থাকায় আলী (রাযিঃ) পরবর্তীকালে মানুষের চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব দেখতে পেয়েছেন।
এ কথা বলে আবু বকর (রাযিঃ) ফাতিমা (রাযিঃ)-কে এ সম্পদ থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। এতে ফাতিমা (রাযিঃ) (মানবোচিত কারণে) আবু বকর (রাযিঃ)-এর উপর নারাজ হয়ে গেলেন এবং তাঁর থেকে নিস্পৃহ হয়ে রইলেন। পরে তাঁর ওফাত পর্যন্ত তিনি (মানসিক সংকোচের দরুন) আবু বকর (রাযিঃ)-এর সাথে কথা বলেননি। নবী কারীম (ﷺ)- এর ওফাতের পর তিনি ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। এরপর তিনি ইন্তিকাল করলে তাঁর স্বামী আলী (রাযিঃ) রাতের বেলা তাঁর দাফন কার্য শেষ করে নেন। আবু বকর (রাযিঃ)-কেও এ সংবাদ দেননি। এবং তিনি তার জানাযার নামায আদায় করে নেন।*
ফাতিমা (রাযিঃ) জীবিত থাকা পর্যন্ত লোকজনের মনে আলী (রাযিঃ)- এর বেশ সম্মান ও প্রভাব ছিল। এরপর যখন ফাতিমা (রাযিঃ) ইন্তিকাল করলেন, তখন আলী (রাযিঃ) লোকজনের চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহ্ন দেখতে পেলেন। তাই তিনি আবু বকর (রাযিঃ)-এর সাথে সমঝোতা ও তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণের ইচ্ছা করলেন। [ফাতিমা (রাযিঃ)-এর অসুস্থতা ও অন্যান্য] ব্যস্ততার দরুন এ ছয় মাসে তাঁর পক্ষে বায়আত গ্রহণে অবসর হয়নি। তাই তিনি আবু বকর (রাযিঃ)-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আপনি আমার কাছে আসুন। তবে অন্য কেউ যেন আপনার সঙ্গে না আসে। কারণ আবু বকর (রাযিঃ)-এর সঙ্গে উমর (রাযিঃ)-ও উপস্থিত হোক-তিনি তা পছন্দ করেননি। (বিষয়টি শোনার পর) উমর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি একা একা তাঁর কাছে যাবেন না। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, তাঁরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করবে বলে তোমরা আশঙ্কা করছ? আল্লাহর কসম, আমি তাঁদের কাছে যাব।
তারপর আবু বকর (রাযিঃ) তাঁদের কাছে গেলেন। আলী (রাযিঃ) তাশাহহুদ পাঠ করে বললেন, আমরা আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু দান করেছেন সে সম্পর্কে অবগত আছি। আর যে কল্যাণ (অর্থাৎ খিলাফত) আল্লাহ্ আপনাকে দান করেছেন সে ব্যাপারেও আমরা আপনার সাথে হিংসা রাখি না। তবে খিলাফতের ব্যাপারে আপনি আমাদের উপর নিজের মতের প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের কাজে (পরামর্শ দেওয়াতে) আমাদেরও কিছু অধিকার রয়েছে। এ কথায় আবু বকর (রাযিঃ)-এর চোখ-যুগল থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো। এরপর তিনি যখন আলোচনা আরম্ভ করলেন তখন বললেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে আমার নিকটাত্মীয় অপেক্ষাও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর আত্মীয়বর্গ বেশী প্রিয়। আর এ সম্পদগুলোতে আমার এবং আপনাদের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারেও আমি কল্যাণকর পথ অনুসরণে কোন কসুর করিনি। বরং এ ক্ষেত্রেও আমি কোন কাজ পরিত্যাগ করিনি যা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে করতে দেখেছি।
তারপর আলী (রাযিঃ) আবু বকর (রাযিঃ)- কে বললেনঃ যোহরের পর আপনার হাতে বায়আত গ্রহণের ওয়াদা রইল। যোহরের নামায আদায়ের পর আবু বকর (রাযিঃ) মিম্বারে বসে তাশাহহুদ পাঠ করলেন, তারপর আলী (রাযিঃ)- এর বর্তমান অবস্থা এবং বায়আত গ্রহণে তার দেরি করার কারণ ও তাঁর (আবু বকরের) কাছে পেশকৃত আপত্তিগুলো তিনি বর্ণনা করলেন। এরপর আলী (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাশাহহুদ পাঠ করলেন এবং আবু বকর (রাযিঃ)-এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বললেন, তিনি বিলম্বজনিত যা কিছু করেছেন তা আবু বকর (রাযিঃ)-এর প্রতি হিংসা কিংবা আল্লাহ্ প্রদত্ত তাঁর এ সম্মানের অস্বীকার করার মনোবৃত্তি নিয়ে করেননি। (তিনি বলেন) তবে আমরা ভেবেছিলাম যে, এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শও দেওয়ার অধিকার থাকবে। অথচ তিনি [ আবু বকর (রাযিঃ)] আমাদের পরামর্শ ত্যাগ করে স্বাধীন মতের উপর রয়ে গেছেন। তাই আমরা মানসিকভাবে ব্যথা পেয়েছিলাম। (উভয়ের এ আলোচনা শুনে) মুসলমানগণ আনন্দিত হয়ে বললেন, আপনি ঠিকই করেছেন। এরপর আলী (রাযিঃ) আমর বিল মা‘রূফ (অর্থাৎ বায়আত গ্রহণ)-এর দিকে ফিরে এসেছেন দেখে সব মুসলমান আবার তাঁর প্রতি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন।
*ওফাতের পূর্বে ফাতিমা (রাযিঃ)-এর ওয়াসিয়াত ছিল যে, মৃত্যুর সাথে সাথেই যেনো তার কাফন-দাফন শেষ করা হয়, কারণ লোকজন ডাকাডাকি করলে তাতে পর্দার ব্যাঘাত ঘটনের আশঙ্কা আছে। সেমতে আলী (রাযিঃ) রাতের ভিতরই সব কাজ সেরে নিয়েছেন । আর সংবাদ তো নিশ্চয়ই আবু বকর (রাযিঃ) পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এ ধারণায় তিনি নিজে গিয়ে সংবাদ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। অবশ্য এ ছয় মাস যাবত তিনি আবু বকর (রাযিঃ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ না করায় মুসলমানদের মনে প্রশ্ন উদয় হলেও যেহেতু তিনি রোগে শয্যাশায়ী রাসূল তনয়ার খিদমতে ব্যস্ত থাকতেন, সেহেতু লোকজন তাঁর প্রতি কোন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি। কিন্তু ফাতিমা (রাযিঃ)-এর ওফাত হওয়ার পর সেই কারণ অবশিষ্ট না থাকায় আলী (রাযিঃ) পরবর্তীকালে মানুষের চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব দেখতে পেয়েছেন।
