আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪২৩০
২২০২. খায়বারের যুদ্ধ
৩৯১৩। মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রাহঃ) .... আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নবী কারীম (ﷺ)- এর হিজরতের খবর পৌছলো। তাই আমি ও আমার দু’ভাই আবু বুরদা ও আবু রুহম এবং আমাদের কওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আমি ছিলাম আমার অপর দু’ ভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে আরোহণ করলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের (বাদশাহ্) নাজ্জাশীর নিকট পৌছিয়ে দিল। সেখানে আমরা জা‘ফর ইবনে আবু তালিবের সাক্ষাত পেলাম এবং তাঁর সাথেই আমরা রয়ে গেলাম। অবশেষে নবী কারীম (ﷺ)- এর খায়বার বিজয়কালে সকলে (হাবশা থেকে) প্রত্যাবর্তন করে এসে তাঁর সঙ্গে একত্রিত হলাম। এ সময়ে মুসলমানদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজযোগে আগমনকারীদেরকে বললো, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের অপেক্ষা অগ্রগামী।
আমাদের সাথে আগমনকারী আসমা বিনতে উমায়স একবার নবী কারীম (ﷺ)- এর সহধর্মিণী হাফসার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছিলেন। অবশ্য তিনিও (তাঁর স্বামী জা‘ফরসহ) নাজ্জাশী বাদশাহর দেশের হিজরতকারীদের সাথে হিজরত করেছিলেন। আসমা (রাযিঃ) হাফসার কাছেই ছিলেন। এ সময়ে উমর (রাযিঃ) তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। উমর (রাযিঃ) আসমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? হাফসা (রাযিঃ) বললেন, তিনি আসমা বিনতে উমায়স (রাযিঃ)। উমর (রাযিঃ) বললেন, ইনিই কি হাবশা দেশে হিজরতকারিণী আসমা? ইনিই কি সমুদ্র ভ্রমণকারিণী? আসমা (রাযিঃ) বললেন, হ্যাঁ! তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর বেশী ঘনিষ্ঠ।
এতে আসমা (রাযিঃ) রেগে গেলেন এবং বললেন, কখনো হতে পারে না। আল্লাহর কসম, আপনারা তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের আহারের ব্যবস্থা করতেন, আপনাদের মধ্যকার অবুঝ লোকদেরকে সদুপদেশ দিতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বহুদূর এবং সর্বদা শত্রু কবলিত-হাবশা দেশে। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যেই ছিলো আমাদের এ কুরবানী। আল্লাহর কসম, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত কোন খাবার গ্রহণ করবো না এবং পানিও পান করবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে না জানাব।
সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হতো, ভয় দেখানো হতো। অচিরেই আমি নবী কারীম (ﷺ)- কে এসব কথা বলবো। এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করবো। তবে আল্লাহর কসম, আমি মিথ্যা বলবো না, ঘুরিয়ে কিংবা এর উপর বাড়িয়েও কিছু বলবো না। এরপর যখন নবী কারীম (ﷺ) আসলেন, তখন আসমা (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! উমর (রাযিঃ) এসব কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাঁকে কি উত্তর দিয়েছ? আসমা (রাযিঃ) বললেনঃ আমি তাঁকে এরূপ এরূপ বলেছি। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, (এ ব্যাপারে) তোমাদের তুলনায় উমর (রাযিঃ) আমার বেশী ঘনিষ্ঠ নয়। কারণ উমর (রাযিঃ) এবং তাঁর সাথীদের তো মাত্র একটিই হিজরত লাভ হয়েছে, আর তোমরা যারা জাহাজে আরোহণকারী ছিলে তাদের দু’টি হিজরত অর্জিত হয়েছে। আসমা (রাযিঃ) বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবু মুসা (রাযিঃ) এবং জাহাজযোগে আগমনকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তাঁরা দলে দলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীসখানা শুনতেন। আর নবী কারীম (ﷺ) তাঁদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন এ কথাটি তাদের কাছে এতই প্রিয় ছিল যে, তাঁদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস এত প্রিয় ছিল না।
আবু বুরদা (রাযিঃ) বলেন যে, আসমা (রাযিঃ) বলেছেন, আমি আবু মুসা [আশআরী (রাযিঃ)]-কে দেখেছি, তিনি বারবারই আমার কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনতে চাইতেন। আবু বুরদা (রাযিঃ) আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে আরো বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, আশআরী গোত্রের লোকজন রাতের বেলায় এলেও আমি তাদেরকে তাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ থেকেই চিনতে পারি। এবং রাতের বেলায় তাদের কুরআন তিলাওয়াত শুনেই আমি তাদের বাড়িঘর চিনে নিতে পারি। যদিও আমি দিনের বেলায় তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে দেখিনি। হাকীম ছিলেন আশআরীদের একজন। যখন তিনি কোন দল কিংবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) কোন শত্রুর মুকাবিলায় আসতেন তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, আমার বন্ধুরা তোমাদের বলেছেন, যেন তোমরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা কর।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন