মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৯২৯
৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান
৩৯২৯। হযরত সুলাইমান ইবনে বুরায়দা (রাঃ) তাঁহার পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, তিনি যখনই কোন বড় কিংবা ছোট সেনাদলের উপর কাহাকেও আমীর নিযুক্ত করিতেন, তখন তাহাকে তাহার একান্তভাবে আল্লাহকে ভয় করিয়া চলার, আর সঙ্গী মুসলমানদের সহিত ভাল ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন। অতঃপর বলিতেন, আল্লাহর নাম লইয়া আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে যাও এবং যাহারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে, তাহাদের সহিত লড়াই কর। (সাবধান!) জেহাদে যাও, কিন্তু গনীমতের মালে খেয়ানত করিও না, চুক্তি ভঙ্গ করিও না, শত্রুদেরকে বিকলাঙ্গ (হাত, পা, নাক, কান কর্তন) করিও না এবং কোন শিশুকে হত্যা করিও না। যখন তুমি তোমার প্রতিপক্ষ মুশরিক শত্রুর মোকাবিলায় অবতীর্ণ হইবে, তখন তুমি তাহাদিগকে তিনটি কথার দিকে আহ্বান জানাইবে। যদি উক্ত প্রস্তাবের কোন একটি তাহারা মানিয়া লয়, তখন তুমি উহা গ্রহণ করিয়া লইবে এবং তাহাদের (উপর আক্রমণ করা) হইতে বিরত থাকিবে।
অতঃপর প্রথমে তাহাদিগকে ইসলামের দিকে আহ্বান করিবে, যদি তাহারা উহা কবুল করে, তুমিও তাহাদিগ হইতে তাহা মানিয়া লইবে এবং তাহাদের হইতে বিরত থাকিবে। অতঃপর তাহাদিগকে নিজ দেশ (কাফেরের দেশ) হইতে মুহাজেরীনদের দেশের দিকে (দারুল ইসলামে হিজরত করিয়া) চলিয়া আসিবার আহ্বান জানাইবে। আর তাহাদিগকে ইহাও অবহিত করিয়া দিবে যে, যদি তাহারা তাহা করে, তবে তাহারাও সেই সমস্ত অধিকার লাভ করিবে যাহা মুহাজেরীনগণ লাভ করিতেছে এবং সেই সমস্ত দায়িত্বও তাহাদের উপর অর্পিত হইবে, যাহা মুহাজেরীনদের উপর অর্পিত রহিয়াছে। কিন্তু যদি তাহারা নিজ দেশ ত্যাগ করিতে অস্বীকার করে, তখন তাহাদিগকে জানাইয়া দিবে যে, তাহাদের সাথে সেইরূপ আচরণই করা হইবে, যেইরূপ আচরণ গ্রাম্য মুসলমানদের সাথে করা হয়। অর্থাৎ, আল্লাহর সেই বিধান তাহাদের উপর প্রয়োগ করা হইবে, যাহা সমস্ত মুসলমানের উপর কার্যকরী করা হইয়া থাকে। (যেমন, নামায পড়া, যাকাত আদায় করা, কিছাছ ও দীয়াত ইত্যাদি মানিয়া চলা।) এবং গনীমতের মাল ও ফায় (বিনাযুদ্ধে কাফেরের নিকট হইতে লব্ধ মাল) হইতে তাহারা কোন অংশ পাইবে না। অবশ্য এই মাল-সম্পদের অংশ তাহারা তখনই পাইবে, যখন তাহারা মুসলমানদের সাথে সম্মিলিতভাবে জেহাদে শামিল হইবে।
আর যদি উহারা ইহাতে (ইসলাম গ্রহণ করিতে) অস্বীকার করে, তখন তাহাদের নিকট হইতে জিযিয়া দাবী কর। যদি তাহারা উহা মানিয়া লয়, তবে তুমিও তাহাদের হইতে উহা গ্রহণ কর এবং তাহাদের (উপর আক্রমণ করা) হইতে বিরত থাক।
আর যদি তাহারা জিযিয়া দিতে অস্বীকার করে, তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর এবং তাহাদের সাথে যুদ্ধ কর। আর যদি তুমি কোন দুর্গবাসীকে অবরোধ কর, আর তাহারা তোমার সাথে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসুলের দায়িত্বের উপর চুক্তিতে আব্দ্ধ হইতে চায়, তখন তুমি তাহাদের সহিত আল্লাহ্ ও তাহার রাসুলের দায়িত্বের নামে কোন চুক্তিতে আব্দ্ধ হইও না; বরং তোমার এবং তোমার সঙ্গীদের নিজ দায়িত্বে তাহাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হইতে পার। কেননা, (যদি কোন কারণে উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করিতে বাধ্য হও, তখন আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের নামে দেওয়া চুক্তি ভঙ্গ করা অপেক্ষা তোমার ও তোমার সঙ্গীদের দেওয়া ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অনেক সহজতর। আর যদি তুমি কোন দুর্গ অবরোধ কর এবং তাহারা তোমার নিকট আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফয়সালার শর্তে অবরোধ তুলিয়া নিতে আবেদন জানায়, তবে আল্লাহর হুকুমের শর্তে তাহাদের অব্যাহতি দিও না; বরং তোমার ফয়সালা গ্রহণের শর্তে তাহাদের অব্যাহতি দাও। কেননা, তুমি জ্ঞাত নও যে, তাহাদের সম্পর্কে আল্লাহর যে হুকুম রহিয়াছে তাহাতে তুমি পৌঁছিতে পারিবে কিনা। —মুসলিম
وَعَن سليمانَ بنِ بُريدةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمَّرَ أَمِيرًا عَلَى جَيْشٍ أَوْ سَرِيَّةٍ أَوْصَاهُ فِي خَاصَّتِهِ بِتَقْوَى اللَّهِ وَمَنْ مَعَهُ مِنَ الْمُسْلِمِينَ خَيْرًا ثُمَّ قَالَ: اغْزُوَا بسمِ اللَّهِ قَاتَلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ اغْزُوَا فَلَا تَغُلُّوا وَلَا تَغْدِرُوا وَلَا تَمْثُلُوا وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ أَوْ خِلَالٍ فَأَيَّتَهُنَّ مَا أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ فَإِنْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَى دَارِ الْمُهَاجِرِينَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ إِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِينَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِينَ فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَتَحَوَّلُوا مِنْهَا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ يَكُونُونَ كَأَعْرَابِ الْمُسْلِمِينَ يُجْرَى عَلَيْهِمْ حُكْمُ الله الَّذِي يُجْرَى عَلَيْهِمْ حُكْمُ اللَّهِ الَّذِي يُجْرَى عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَكُونُ لَهُمْ فِي الْغَنِيمَةِ وَالْفَيْءِ شَيْءٌ إِلَّا أَنْ يُجَاهِدُوا مَعَ الْمُسْلِمِينَ فَإِنْ هم أَبَوا فعلهم الْجِزْيَةَ فَإِنْ هُمْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَقَاتِلْهُمْ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ فَلَا تَجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَلَا ذِمَّةَ نَبِيِّهِ وَلَكِنِ اجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّتَكَ وَذِمَّةَ أَصْحَابِكَ فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ أَصْحَابِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ وَإِنْ حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تُنْزِلَهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ فَلَا تُنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ وَلَكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِي: أَتُصِيبُ حُكْمَ اللَّهِ فِيهِمْ أَمْ لَا؟ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইমাম মালেক ও আওযায়ী (রঃ) বলেন, আরবী, আজমী, কিতাবী ও কিতাববিহীন সকল সম্প্রদায়ের কাফের হইতে জিযিয়া লওয়া জায়েয। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, আরবের মুশরিক ও মজুসী ব্যতীত অন্যান্য দেশের কাফের হইতে জিযিয়া লওয়া জায়েয। আরববাসী হয়ত ইসলাম গ্রহণ করিবে অন্যথায় জেহাদের মাধ্যমে তাহাদের ফয়সালা হইবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩৯২৯ | মুসলিম বাংলা