আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৯৬
২২০২. খায়বারের যুদ্ধ
৩৮৮২। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) .... সালামা ইবনে আকওয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম (ﷺ)- এর সাথে খায়বার অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলা পথ অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় কাফেলার জনৈক ব্যক্তি আমির (রাযিঃ)- কে লক্ষ্য করে বলল, হে আমির! তোমার সমর সঙ্গীত থেকে আমাদেরকে কিছু শোনাবে কি? আমির (রাযিঃ) ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সওয়ারী থেকে নেমে গেলেন এবং সঙ্গীতের তালে তালে গোটা কাফেলা হাঁকিয়ে চললেন।
সঙ্গীতে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনার তাওফীক না হলে আমরা হেদায়েত লাভ করতাম না, সাদ্‌কা দিতাম না আর নামায আদায় করতাম না। তাই আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। যতদিন আমরা বেঁচে থাকব ততদিন আপনার জন্য সমর্পিত-প্রাণ হয়ে থাকব। আর আমরা যখন শত্রুর মুকাবিলায় যাব তখন আপনি আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন এবং আমাদের উপর ‘সাকিনা’ (শান্তি) বর্ষণ করুন। আমাদেরকে যখন (কুফরের দিকে) সজোরে আওয়াজে ডাকা হয় আমরা তখন তা প্রত্যাখ্যান করি। আর এ কারণে তারা চিৎকার দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লোক-লস্কর জমা করে।
(কবিতাগুলো শুনে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এ সঙ্গীতের গায়ক কে? তাঁরা বললেন, আমির ইবনুল আকওয়া। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। কাফেলার একজন বললোঃ হে আল্লাহর নবী! তার জন্য (শাহাদাত) নিশ্চিত হয়ে গেলো। (আহ) আমাদেরকে যদি তার কাছ থেকে আরো উপকার হাসিল করার সুযোগ দিতেন। এরপর আমরা এসে খায়বার পৌঁছলাম এবং তাদেরকে অবরোধ করলাম। অবশেষে এক পর্যায়ে আমাদেরকে কঠিন ক্ষুধার জ্বালাও বরণ করতে হল।
কিন্তু পরেই মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন। বিজয়ের দিন সন্ধ্যায় মুসলমানগণ (রান্নাবান্নার জন্য) অনেক আগুন জ্বালালেন। (তা দেখে) নবী কারীম (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ সব কিসের আগুন? তোমরা কি পাকাচ্ছ? তারা জানালেন, গোশত পাকাচ্ছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের গোশত? লোকজন উত্তর করলেন, গৃহপালিত গাধার গোশত। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, এগুলি ঢেলে দাও এবং ডেকচি গুলো ভেঙ্গে ফেল। একজন বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! গোশতগুলো ঢেলে দিয়ে যদি পাত্রগুলো ধুয়ে নেই তাতে যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেন, তাও করতে পারো।
এরপর যখন সবাই যুদ্ধের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমির ইবনুল আকওয়া (রাযিঃ)-এর তরবারিখানা ছিলো খাটো, তা দিয়ে তিনি জনৈক ইয়াহুদীর পায়ের গোছায় আঘাত করলে তরবারীর তীক্ষ্ম ভাগ ঘুরে গিয়ে তাঁর নিজের হাঁটুতে লেগে পড়ে। তিনি এ আঘাতের কারণে মারা যান। সালামা ইবনুল আকওয়া (রাযিঃ) বলেনঃ তারপর সব লোক খায়বার থেকে প্রত্যাবর্তন শুরু করলে এক সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললেন, কি খবর?
আমি বললামঃ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! লোকজন ধারণা করেছে যে, (স্বীয় হস্তের আঘাতে মারা যাওয়ার কারণে) আমির (রাযিঃ)- এর আমল বাতিল হয়ে গিয়েছে। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, এ কথা যে বলেছে সে ভুল বলেছে। নবী কারীম (ﷺ) তাঁর দুটি আঙ্গুল একত্রিত করে সেদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, বরং আমিরের রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। অবশ্যই সে একজন কর্মতৎপর ব্যক্তি এবং আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ। তাঁর মত গুণসম্পন্ন আরবী খুব কমই আছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন