মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৮৪৯
- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৪৯। হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধ অভিযানে বাহির হইলাম। এই সময় আমাদের একজন লোক এমন এক গর্তের (পানির কূপের) নিকট দিয়া পথ অতিক্রম করিল যাহার মধ্যে স্বচ্ছ পানি ও কিছু সবুজ তাজা তরিতরকারী ছিল। উক্ত স্থানটিকে দেখিয়া তাহার অন্তরে এই আকাঙ্ক্ষা জন্মিল যে, যদি আমি দুনিয়ার মোহ-মায়া ত্যাগ করিয়া এই স্থানে বসবাস করিতে পারিতাম, তাহা হইত। (মোট হইলে কতই না উত্তম হইত! (মোটকথা, সে সেখানে নির্জনবাস করিতে চাহিল।) সুতরাং সে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট এই ব্যাপারে অনুমতি চাহিল। উত্তরে হুযূর (ﷺ) বলিলেনঃ আমাকে ইহুদী কিংবা খৃষ্টান ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য পাঠান হয় নাই; বরং 'দ্বীনে হানীফ' সরল ও সহজ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করিবার জন্যই পাঠান হইয়াছে। (শুনিয়া লও!) সেই মহান সত্তার কসম করিয়া বলিতেছি, যাঁহার (কুদ্রতী হাতে (আমি) মুহাম্মাদের প্রাণ! এক সকাল কিংবা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাটা গোটা দুনিয়া ও উহার মধ্যে যাহাকিছু আছে সেই সমস্ত জিনিষ হইতে উত্তম। আর তোমাদের কাহারও যুদ্ধের ময়দানে কাতার বন্দী হওয়া ষাট বৎসরের (নফল) নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। —আহমদ
كتاب الجهاد
الْفَصْل الثَّالِث
عَن أبي أُمامةَ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ فَمَرَّ رَجُلٌ بِغَارٍ فِيهِ شَيْءٌ مِنْ مَاءٍ وَبَقْلٍ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ بِأَنْ يُقِيمَ فِيهِ وَيَتَخَلَّى مِنَ الدُّنْيَا فَاسْتَأْذَنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَمْ أُبْعَثْ بِالْيَهُودِيَّةِ وَلَا بِالنَّصْرَانِيَّةِ وَلَكَنِّي بُعِثْتُ بِالْحَنِيفِيَّةِ السَّمْحَةِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَغَدْوَةٌ أَوْ رَوْحَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَمَقَامُ أَحَدِكُمْ فِي الصَّفِّ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِهِ سِتِّينَ سَنَةً» . رَوَاهُ أَحْمد
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সেনা-সংখ্যা চার শত পর্যন্ত হইলে উহাকে বলা হয় سرية (সারিয়্যাহ্)। মূলতঃ তাহারা হয় সমস্ত বাহিনী হইতে নির্বাচিত লোক। তবে যদি সংখ্যা তিন চারজন হয়, তখন উহাকে বলা হয় طليعة (তালীআহ্)। কিন্তু সমস্ত হাদীসবিদ ও ঐতিহাসিকদের পরিভাষায় হুযূর (ﷺ) স্বশরীরে যেই অভিযানে অংশগ্রহণ করিয়াছেন, উহাকে غزوة (গাযওয়াহ) আর যেই অভিযানে যান নাই উহাকে سرية ( সারিয়্যাহ্) বলা হয়। সুতরাং সেই অনুসারে এই হাদীসে যখন خرجنا مع رسول الله صلعم -এর উল্লেখ রহিয়াছে, তখন سرية না বলিয়া উহাকে غزوة বলা উচিত ছিল। ইহার উত্তরে বলা যায় যে, হুযূর (ﷺ) মূল অভিযানে তাহাদের সাথে অংশগ্রহণ করেন নাই; বরং সেনাদলকে কিছু দূর পথ আগাইয়া দেওয়ার জন্য বাহির হইয়াছিলেন। অথবা ইহাও বলা যাইতে পারে যে, এখানে سرية -এর আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা হইয়াছে। কেননা, ভাষাগত অর্থে যে কোন সেনাদলকে سرية বলা যাইতে পারে। الحنيفية অর্থ হইল, সরল সোজা পথ, যাহার মধ্যে কোন প্রকারের আঁকা-বাঁকা বা বক্রতা নাই। যাহাকে আমরা 'সিরাতে মোস্তাকীম' বলিয়া থাকি। অর্থাৎ, সমস্ত বাতিল মত ও পথ বিবর্জিত একমাত্র পথ ও পন্থা। السمحة অর্থ, সহজ ও মননশীল। অন্য কথায় স্বভাবগত নির্ভেজাল জীবন ব্যবস্থা। সুতরাং এই শব্দ দুইটির অর্থ হইল 'দ্বীনে ইসলাম'। ইহার বিপরীত ইহুদী ও নাসারার ধর্ম হইল স্বভাববিরোধী বক্র পথ। অতএব, জেহাদ-যুদ্ধ পরিত্যাগ করিয়া কোন গির্জায় কিংবা এবাদতের নামে নির্জন বাস অবলম্বন স্বভাববিরোধী 'রাহ্বানিয়াত', ইসলামে উহার স্বীকৃতি নাই ।