মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৮০৭
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৮০৭। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: দুই ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলা হাসিবেন যাহারা একে অপরকে হত্যা করিবে এবং হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। একজন এই কারণে জান্নাতবাসী হইবে যে, সে আল্লাহর পথে জেহাদ করিতে যাইয়া শহীদ হইয়াছে। পরে হত্যাকারীকে আল্লাহ্ তওবার (অর্থাৎ, ঈমানের) তাওফীক দিয়াছেন। অতঃপর সেও শাহাদাত বরণ করিয়াছে। —মোত্তাঃ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَضْحَكُ اللَّهُ تَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ: يُقَاتِلُ هَذَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلُ ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ على الْقَاتِل فيستشهد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. অর্থাৎ, হত্যাকারী প্রথমে ছিল কাফের, পরে সে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে এবং আল্লাহ্ তাহার অতীতের কৃত সকল অপরাধ ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন। হাদীসে উল্লেখ আছে— الاسلام يهدم ما كان قبلها অর্থঃ “ইসলাম গ্রহণ পূর্ববর্তী সকল গুনাহকে ধ্বংস করিয়া দেয়।” 'আল্লাহ্ হাসিবেন' ইহার মানে হইল, আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করিবেন। এইখানে 'হাসাকে' সন্তুষ্টির অর্থে ব্যবহার করা হইয়াছে।

২. এ হাদীছে আল্লাহ তা'আলার হাসি দ্বারা রূপকার্থে তাঁর সন্তুষ্টি বোঝানো হয়েছে। তিনি এই দুই ব্যক্তির প্রতি খুশি হন এ কারণে যে, তাদের মধ্যে ছিল চরম শত্রুতা, যে কারণে তাদের একজন অন্যজনকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। যাকে হত্যা করা হয়েছে সে তো শহীদ, আর শহীদের ঠিকানা জান্নাত। যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার জাহান্নামে যাওয়ার কথা। কেননা একে সে কাফির, তদুপরি একজন মু'মিনকে হত্যা করার মত কঠিন পাপ করেছে। কিন্তু কি আশ্চর্য! সেও জান্নাতে চলে গেল আর তাদের শত্রুতা বন্ধুত্বে পরিণত হয়ে গেল। জান্নাতে কারও অন্তরে কারও প্রতি কোনওরকম শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকবে না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ

অর্থ : তাদের অন্তরে যে দুঃখ-বেদনা থাকবে তা দূর করে দেব। তারা ভাই-ভাই রূপে মুখোমুখি হয়ে উঁচু আসনে আসীন হবে।

এই যে নিহত ও হত্যাকারী উভয়ই জান্নাতে চলে গেল এবং পূর্বশত্রুতার স্থলে তারা ভাই-ভাই হয়ে গেল, দৃশ্যত এটা একটা মুগ্ধকর ব্যাপারই বটে। সে কারণেই আল্লাহ তা'আলা খুশিতে হাসেন।
বলাবাহুল্য হত্যাকারীর ইসলামগ্রহণ ও শাহাদাতলাভ আল্লাহপ্রদত্ত তাওফীকের ফলেই সম্ভব হয়েছে। তা সত্ত্বেও তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্ট হওয়া তাঁর অপার মহানুভবতা ও রহমতের প্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কাফের ব্যক্তি তার কুফর থেকে তাওবা করলে তার তাওবা কবূল হয়, যদিও সে এর আগে ইসলামের প্রতি শত্রুতাবশত মুসলিমদের জান-মালের ক্ষতিসাধন করে থাকে। বস্তুত ইসলামগ্রহণ দ্বারা পূর্বের সমস্ত গুনাহই মাফ হয়ে যায়।

খ. কোনও কাফিরকে তার বর্তমান কুফরী অবস্থার কারণে জাহান্নামী বলা ঠিক নয়। কেননা হতে পারে আল্লাহ তা'আলা তাকে তাওবার তাওফীক দেবেন, ফলে ঈমান অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটবে। ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতবাসী করেন।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান