মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭৮৭
জেহাদ পর্ব:
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৭৮৭। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে এবং রমযানের রোযা রাখে, সে আল্লাহর পথে জেহাদ করুক কিংবা নিজের জন্মভূমিতে বসিয়া থাকুক, তাহাকে জান্নাত দান করা আল্লাহর জন্য অবধারিত হইয়া দাড়ায়। লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রাসূল। আমরা কি এই সুসংবাদ অন্য লোকদিগকে জানাইব না? তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ তাহার পথে জেহাদকারীদের জন্য জান্নাতে এক শতটি (মর্যাদার) স্তর তৈয়ার করিয়া রাখিয়াছেন। প্রতি দুইটি স্তরের মাঝখানে আসমান ও যমীনের দূরত্ব পরিমাণ ব্যবধান। সুতরাং যখনই তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করিবে, তখন জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্যই প্রার্থনা করিবে। কেননা, (আমাকে দেখান হইয়াছে) সেইটিই জান্নাতের সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ মকাম। ইহারই উপরিভাগে মহান করুণাময় 'আররহমানের' আরশ। সেই স্থান (ফেরদাউস) হইতে জান্নাতের নদীসমূহ প্রবাহিত হইতেছে। বুখারী
كتاب الْجِهَاد: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ جَاهَدَ فِي سهل اللَّهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا» . قَالُوا: أفَلا نُبشِّرُ النَّاسَ؟ قَالَ: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ وَمِنْهُ تُفَجَّرُ أنهارُ الجنَّةِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

جهاد (জেহাদ)-এর আভিধানিক অর্থ পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করা। আর ব্যবহারিক অর্থ আল্লাহর রাস্তায় শক্তি ও সামর্থ্যকে ব্যয় করা। দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত করার জন্য আল্লাহর পথে শক্তি-সামর্থ্য দ্বারা কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং দ্বীনের সার্বিক মদদ ও সাহায্য করা। 'নফস, শয়তান ও ফাসেক'দের সাথে মোকাবেলা করাকেও জেহাদ বলে। 'নফসের' সঙ্গে জেহাদ করার মানে হইল, দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করিয়া তদনুযায়ী আমল করা। 'শয়তানের' সঙ্গে জেহাদ মানে সন্দেহযুক্ত বস্তু, নফসের খাহেশ ও চাহিদাকে বর্জন করা। সাধারণতঃ জেহাদ হইল, 'ফরযে কেফায়া'। এক শ্রেণীর লোক সেই কাজে নিয়োজিত থাকিলে অবশিষ্ট লোকেরা দায়িত্ব মুক্ত হয় । কিন্তু সকলেই বর্জন করিলে তখন সকলেই গুনাগার হইবে। তবে খলীফা বা ইমামের পক্ষ হইতে যদি সাধারণ ডাক আসে, তখন উহা 'ফরযে আইন' হইয়া যায়, ইসলামী পরিভাষায় উহাকে বলা হয় نفير عام (নফীরে 'আম)। আল্লাহর ঘোষণাঃ انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالً “ভারী ও হাল্‌কা, যাহার কাছে যাহাকিছু আছে উহা লইয়া শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপাইয়া পড়।” বিস্তারিত ফেকাহর কিতাব দ্রষ্টব্য।

হাদীসের মুখ্য উদ্দেশ্য হইল, ঈমান ও নেক আমল হইল জান্নাতে প্রবেশ করার প্রথম ও প্রধান শর্ত। তবে জেহাদ তাহার মর্যাদা ও মর্তবাকে বর্ধিত করিবে। কাজেই প্রত্যেক ব্যক্তির কেবলমাত্র জান্নাতে প্রবেশ করাটাই যথেষ্ট মনে না করিয়া; বরং জান্নাতুল ফেরদাউস প্রবেশ করার আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয়। কেহ কেহ মনে করেন, ঐ প্রবহমান নহরগুলি আরশ্ হইতে প্রবাহিত হইতেছে। আসলে উহা ঠিক নহে, বরং উহা ‘ফেরদাউস' হইতে প্রবাহিত হইতেছে। আর নহরের সংখ্যা হইল চারিটি, প্রথমটি দুধের, দ্বিতীয়টি পানির, তৃতীয়টি মধুর আর চতুর্থটি শরাবের।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩৭৮৭ | মুসলিম বাংলা