মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৯- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৬৭৪
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৬৭৪। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন যেই ব্যক্তি শাসক বা ইমামের আনুগত্য হইতে হাত গুটাইয়া লইল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করিবে যে, তাহার কাছে (ওযর আপত্তির) প্রমাণ থাকিবে না। আর যেই ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, সে ইমাম (শাসক)-এর আনুগত্যের বায়আত করে নাই, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করিবে। —মুসলিম
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا حُجَّةَ لَهُ. وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আমীর ও শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বা তার আনুগত্য না করার বিষয়টিকে 'হাত সরিয়ে নেওয়া' শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে রূপকার্থে। কেননা আনুগত্যের অঙ্গীকার করার সময় আমীরের হাতে হাত রাখা হয়। কাজেই পরে যদি কেউ সে অঙ্গীকার রক্ষা না করে এবং আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তবে সে যেন আনুগত্যের হাত সরিয়ে নিল অর্থাৎ অনুগত্যের অঙ্গীকার বাতিল করে দিল। আমীর বা শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে নেওয়া কঠিন অপরাধ। কতটা কঠিন, তা বোঝানোর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا حُجَّةَ لَهُ (সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার পক্ষে কোনও প্রমাণ থাকবে না)। অর্থাৎ আনুগত্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পক্ষে কোনও প্রমাণ তার থাকবে না। সে এর পক্ষে কোনও কারণ দর্শাতে পারবে না। ফলে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার অপরাধ সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং এ কারণে তাকে শাস্তি পেতে হবে। কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত আমীর বরখাস্ত হওয়ার শরী'আতসম্মত কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আনুগত্য করেই যেতে হবে। কিছুতেই বিদ্রোহ করা যাবে না। সুতরাং কখনও অবাধ্যতামূলক কোনও কাজ হয়ে গেলে কিংবা বিদ্রোহ করে ফেললে পুনরায় আনুগত্যে ফিরে আসতে হবে। ফিরে আসলে সে ক্ষমার উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। আর যদি ফিরে না আসে, বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা উপরই অবিচল থাকে, তবে তার পরিণতি বড় ভয়ংকর। হাদীছে বলা হয়েছে-
وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً যে ব্যক্তি এরূপ অবস্থায় মারা যাবে যে, তার ঘাড়ে কোনও বায়'আত (আনুগত্যের শপথ) নেই, সে মারা যাবে জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে'। অর্থাৎ তার মৃত্যু হবে পথভ্রষ্টতার উপর। জাহিলী যুগের মানুষ পথভ্রষ্ট ছিল। তাদের পথভ্রষ্টতার একটা দিক ছিল এইও যে, তারা কোনও আমীর ও নেতার আনুগত্য স্বীকার করত না। আনুগত্যস্বীকারকে তারা দূষণীয় মনে করত। তাই শক্তিমানেরা আপন শক্তি অনুযায়ী অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করত। যাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করা হত, তারাও সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বিদ্রোহ করত। ইসলামে এভাবে আপন বাহুবল দিয়ে ক্ষমতা দখল করাও যেমন বিধিসম্মত নয়, তেমনি খেয়াল-খুশিমতো বিদ্রোহ করাও গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে ফেলার পর পুনরায় অবশ্যই আনুগত্যের দিকে ফিরে আসতে হবে। পুনরায় আনুগত্য স্বীকার না করে বিদ্রোহী অবস্থায় মারা গেলে তা হবে পথভ্রষ্টতার মৃত্যু ও গুনাহগার অবস্থায় মৃত্যু। অথচ আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হল-
وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
(সাবধান! অন্য কোনও অবস্থায় যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে, তোমরা মুসলিম। (সূরা আলে 'ইমরান (৩), আয়াত ১০২)
মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে- ،وَمَنْ مَاتَ وَهُوَ مُفَارِقٌ لِلْجَمَاعَةِ فَإِنَّهُ يَمُوْتُ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةٌ (যে ব্যক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মারা যাবে, সে মারা যাবে জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে)। অর্থাৎ সে হয়তো শুরু থেকেই আমীরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি অথবা আনুগত্য প্রকাশ করেছিল বটে, কিন্তু পরে আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী হয়ে গেছে।
জামা'আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ দল ত্যাগ করা। অর্থাৎ মুসলিমদের আমীর ও ইসলামী বাহিনী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। কেউ কেউ বলেছেন এর মানে নামাযের জামা'আত ত্যাগ করা। অর্থাৎ মুসলিমদের জনসমষ্টি ও তাদের নেতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে বিপথগামী ঠাওরিয়ে তাদের সঙ্গে ও তাদের ইমামের পেছনে নামায পড়াকে জায়েয মনে না করা। কেউ সেরকম মনে করলে সে নিজেই পথভ্রষ্ট বলে গণ্য হবে এবং তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কিয়ামত অবধারিত। একদিন সকলকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।
খ. আখিরাতের মুক্তির জন্যও উম্মতের বৈধ শাসকের প্রতি আনুগত্য রক্ষা করা জরুরি।
গ. শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয নয়।
ঘ. বৈধ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহরত অবস্থায় মৃত্যু কাম্য নয়। কেননা তা জাহিলিয়াতের মৃত্যু।
ঙ. দলছুট হয়ে থাকা অর্থাৎ মুসলিম জনসমষ্টি ও তাদের নেতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা জায়েয নয়।
لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا حُجَّةَ لَهُ (সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার পক্ষে কোনও প্রমাণ থাকবে না)। অর্থাৎ আনুগত্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পক্ষে কোনও প্রমাণ তার থাকবে না। সে এর পক্ষে কোনও কারণ দর্শাতে পারবে না। ফলে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার অপরাধ সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং এ কারণে তাকে শাস্তি পেতে হবে। কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত আমীর বরখাস্ত হওয়ার শরী'আতসম্মত কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আনুগত্য করেই যেতে হবে। কিছুতেই বিদ্রোহ করা যাবে না। সুতরাং কখনও অবাধ্যতামূলক কোনও কাজ হয়ে গেলে কিংবা বিদ্রোহ করে ফেললে পুনরায় আনুগত্যে ফিরে আসতে হবে। ফিরে আসলে সে ক্ষমার উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। আর যদি ফিরে না আসে, বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা উপরই অবিচল থাকে, তবে তার পরিণতি বড় ভয়ংকর। হাদীছে বলা হয়েছে-
وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً যে ব্যক্তি এরূপ অবস্থায় মারা যাবে যে, তার ঘাড়ে কোনও বায়'আত (আনুগত্যের শপথ) নেই, সে মারা যাবে জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে'। অর্থাৎ তার মৃত্যু হবে পথভ্রষ্টতার উপর। জাহিলী যুগের মানুষ পথভ্রষ্ট ছিল। তাদের পথভ্রষ্টতার একটা দিক ছিল এইও যে, তারা কোনও আমীর ও নেতার আনুগত্য স্বীকার করত না। আনুগত্যস্বীকারকে তারা দূষণীয় মনে করত। তাই শক্তিমানেরা আপন শক্তি অনুযায়ী অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করত। যাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করা হত, তারাও সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বিদ্রোহ করত। ইসলামে এভাবে আপন বাহুবল দিয়ে ক্ষমতা দখল করাও যেমন বিধিসম্মত নয়, তেমনি খেয়াল-খুশিমতো বিদ্রোহ করাও গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে ফেলার পর পুনরায় অবশ্যই আনুগত্যের দিকে ফিরে আসতে হবে। পুনরায় আনুগত্য স্বীকার না করে বিদ্রোহী অবস্থায় মারা গেলে তা হবে পথভ্রষ্টতার মৃত্যু ও গুনাহগার অবস্থায় মৃত্যু। অথচ আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হল-
وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
(সাবধান! অন্য কোনও অবস্থায় যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে, তোমরা মুসলিম। (সূরা আলে 'ইমরান (৩), আয়াত ১০২)
মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে- ،وَمَنْ مَاتَ وَهُوَ مُفَارِقٌ لِلْجَمَاعَةِ فَإِنَّهُ يَمُوْتُ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةٌ (যে ব্যক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মারা যাবে, সে মারা যাবে জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে)। অর্থাৎ সে হয়তো শুরু থেকেই আমীরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি অথবা আনুগত্য প্রকাশ করেছিল বটে, কিন্তু পরে আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী হয়ে গেছে।
জামা'আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ দল ত্যাগ করা। অর্থাৎ মুসলিমদের আমীর ও ইসলামী বাহিনী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। কেউ কেউ বলেছেন এর মানে নামাযের জামা'আত ত্যাগ করা। অর্থাৎ মুসলিমদের জনসমষ্টি ও তাদের নেতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে বিপথগামী ঠাওরিয়ে তাদের সঙ্গে ও তাদের ইমামের পেছনে নামায পড়াকে জায়েয মনে না করা। কেউ সেরকম মনে করলে সে নিজেই পথভ্রষ্ট বলে গণ্য হবে এবং তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কিয়ামত অবধারিত। একদিন সকলকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।
খ. আখিরাতের মুক্তির জন্যও উম্মতের বৈধ শাসকের প্রতি আনুগত্য রক্ষা করা জরুরি।
গ. শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয নয়।
ঘ. বৈধ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহরত অবস্থায় মৃত্যু কাম্য নয়। কেননা তা জাহিলিয়াতের মৃত্যু।
ঙ. দলছুট হয়ে থাকা অর্থাৎ মুসলিম জনসমষ্টি ও তাদের নেতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা জায়েয নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
