মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৬- শপথ ও মান্নতের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৪৪৫
১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মান্নত
৩৪৪৫। হযরত মুহাম্মাদ ইবনে মুনতাশির (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি মান্নত করিল, যদি আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে দুশমন হইতে রক্ষা করেন তাহা হইলে সে নিজেকে কুরবান করিয়া দিবে। এই ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, মাসরূককে জিজ্ঞাসা কর। সুতরাং লোকটি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল। উত্তরে তিনি বলিলেন, তুমি নিজেকে কুরবানী করিও না। কেননা, যদি তুমি মু'মিন হও তাহা হইলে তুমি একটি মু'মিন জানকে হত্যা করিলে। আর যদি তুমি কাফের হও তাহা হইলে তাড়াতাড়ি নিজেকে জাহান্নামে পৌঁছাইয়া দিলে। অতএব, তুমি একটি দুম্বা খরিদ করিয়া লও এবং মিসকীনদের জন্য যবাহ্ করিয়া দাও। নিশ্চয়ই হযরত ইসহাক (আঃ) তোমার চাইতে অনেক উত্তম ব্যক্তিই ছিলেন, অথচ এতদ্‌সত্ত্বেও তাঁহার বিনিময়ে একটি দুম্বাই কুরবানী করা হইয়াছে। ইহার পর ঐ লোকটি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়া এই কথাটি জানাইলে তিনি বলিলেন, আমিও অনুরূপ ফতোয়া প্রদান করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলাম। —রাযীন
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْتَشِرِ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا نَذَرَ أَنْ يَنْحَرَ نَفْسَهُ إِنْ نَجَّاهُ اللَّهُ مِنْ عَدُوِّهِ فَسَأَلَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَهُ: سَلْ مَسْرُوقًا فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ: لَا تَنْحَرْ نَفْسَكَ فَإِنَّكَ إِنْ كُنْتَ مُؤْمِنًا قَتَلْتَ نَفْسًا مُؤْمِنَةً وَإِنْ كُنْتَ كَافِرًا تَعَجَّلْتَ إِلَى النَّارِ وَاشْتَرِ كَبْشًا فَاذْبَحْهُ لِلْمَسَاكِينِ فَإِنَّ إِسْحَاقَ خَيْرٌ مِنْكَ وَفُدِيَ بِكَبْشٍ فَأَخْبَرَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ: هَكَذَا كُنْتُ أَرَدْتُ أَنْ أُفْتِيَكَ. رَوَاهُ رَزِينٌ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তওরাত কিতাবের মধ্যে উল্লেখ রহিয়াছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বপ্নযোগে যেই পুত্রকে কুরবানী করার নির্দেশ পাইয়াছিলেন, তিনি ছিলেন ইসহাক (আঃ), ইসমাঈল (আঃ) নহেন। অনেকের কাছে এই কথাটিই বেশী মশহুর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ইহা সহীহ্ নহে। কারণ, (ক) নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ انا ابن الذبيحين অর্থ, ‘আমি দুইজন যবাহ্কৃত ব্যক্তির সন্তান।' একজন তাঁহার পিতা আবদুল্লাহ্ এবং অপরজন হইলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। ইমাম সয়ুতী (রঃ) বলিয়াছেন, হযরত ইসহাকের নাম ইহুদীরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাহাদের কিতাবের মধ্যে প্রকাশ করিয়াছে, অন্যথায় হযরত ইসমাঈল (আঃ)-ই ছিলেন ذبيح বা যবাহ্কৃত। ইতিহাসে ইহাও প্রকাশ আছে যে, একদা এক ইহুদী হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ)-এর নিকট আসিয়া এই কথা স্বীকার করিয়াছে যে, প্রকৃতপক্ষে ذبيح যবাহকৃত ছিলেন হযরত ইসমাঈল। কিন্তু আমরা তদস্থলে হযরত ইসহাকের নাম পরিবর্তন করিয়া দিয়াছি। যাহা হউক, এইখানে হাদীসের মূল অর্থ হইল, যখন হযরত ইসহাক বা ইসমাঈল তোমার চেয়ে উত্তম হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার কোরবানীর বিনিময়ে দুম্বা কোরবানী যথেষ্ট হইয়াছে, কাজেই তোমার জানের বিনিময়েও ইহা যথেষ্ট হইবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান