মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৫- গোলাম আযাদ করা সম্পর্কিত
হাদীস নং: ৩৩৮৬
- গোলাম আযাদ করা সম্পর্কিত
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৩৮৬। হযরত গারীফ ইবনে দায়লামী বলেন, একবার আমরা হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা' (রাঃ)-এর নিকট গিয়া বলিলাম, আমাদেরকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যাহার মধ্যে (রাসূলুল্লাহ্ [ﷺ]-এর বর্ণনা হইতে) কম ও বেশী কিছুই যেন না হয়। (অর্থাৎ, অবিকল তাহাই বর্ণনা করুন যাহা তিনি বলিয়াছেন।) এই কথা শুনিয়া তিনি ভীষণ রাগান্বিত হইলেন এবং বলিলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি কোরআন মজীদ পাঠ করে অথচ কোরআন পাক তাহার গৃহে ঝুলন্তাবস্থায় মওজুদ রহিয়াছে। এতদসত্ত্বেও (তাহার পাঠে) কম ও বেশী হইয়া যায়। তখন আমরা বলিলাম, আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হইল এই যে, আপনি সরাসরি নবী (ﷺ) হইতে যেই হাদীসটি স্বয়ং শুনিয়াছেন (তাহা আমাদেরকে বর্ণনা করিয়া শুনান)। এইবার তিনি বলিলেন, একদা আমরা আমাদের এমন এক সঙ্গীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খেদমতে আসিলাম, যে ব্যক্তি অন্য এক লোককে হত্যা করিয়া নিজের জন্য জাহান্নাম অবধারিত করিয়া ফেলিয়াছিল। তখন তিনি আমাদেরকে আদেশ দিলেন যে, তোমরা ঐ লোকটির পক্ষ হইতে একটি গোলাম আযাদ করিয়া দাও, ফলে আল্লাহ্ তা'আলা সেই আযাদকৃত গোলামের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তোমাদের ঐ লোকটির প্রতিটি অঙ্গকে দোযখের আগুন হইতে মুক্ত করিয়া দিবেন। – আবু দাউদ ও নাসায়ী
كتاب العتق
الْفَصْل الثَّالِث
عَن الغريف بن عَيَّاش الديلمي قَالَ: أَتَيْنَا وَاثِلَة بن الْأَسْقَع فَقُلْنَا: حَدِّثْنَا حَدِيثًا لَيْسَ فِيهِ زِيَادَةٌ وَلَا نُقْصَانٌ فَغَضِبَ وَقَالَ: إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَقْرَأُ وَمُصْحَفُهُ مُعَلَّقٌ فِي بَيْتِهِ فَيَزِيدُ وَيَنْقُصُ فَقُلْنَا: إِنَّمَا أَرَدْنَا حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: أَتَيْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَاحِبٍ لَنَا أَوْجَبَ يَعْنِي النَّارَ بِالْقَتْلِ فَقَالَ: «أعتقوا عَنهُ بِعِتْق الله بِكُل عُضْو مِنْهُ عُضْو أَمنه من النَّار» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
তোমাদের কেহ কেহ কোরআন মজীদ পাঠ করে অথচ কোরআন পাক তাহার কাছে বিদ্যমান আছে, এতদ্সত্ত্বেও পাঠে তাহার কম-বেশী হইয়া যায়। সুতরাং আমিও তোমাদের ন্যায় একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নই। যদি তোমাদের বেলায় উহা পাঠকালে কম-বেশী হইতে পারে, তাহা হইলে আমার ব্যাপারেও এমন কিছু হওয়াটা অস্বাভাবিক কিংবা অসম্ভব কিছু নহে। কাজেই আমার উপর উক্ত শর্তটি আরোপ করা উচিত হয় নাই। মোটকথা, অনিচ্ছাবশতঃ মানুষের ভুলভ্রান্তি হওয়া অসম্ভব কিছুই নহে। অথবা হাদীস বর্ণনায় শব্দের মধ্যে কম-বেশী হওয়াটা দূষণীয় নহে। اوجب يعني النار بالقتل এই বাক্যে কোন মু'মিনকে না-হক হত্যা করা উদ্দেশ্য নহে ; বরং অর্থ হইল, সম্ভবতঃ নিহত লোকটি ছিল معاهد (মু'আহিদ) বা নিরাপত্তাপ্রাপ্ত এবং ভুলবশতঃ তাহাকে হত্যা করা হইয়াছে। আর তাহার (হত্যাকারীর) ওলী-ওয়ারিসরা এই ধারণা পোষণ করিয়াছিল যে, নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ভুলবশতঃ হত্যা করিলে জাহান্নাম অবধারিত। কেননা, অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, دمائهم كدمائنا অর্থ, তাহাদের রক্ত (প্রাণ) আমাদের (মুসলমানদের) রক্তের ন্যায় (হারাম)। সুতরাং নবী (ﷺ) তাহাদেরকে একটি গোলাম আযাদ করিবার নির্দেশ প্রদান করিয়া এই দিকে ইংগিত করিয়াছেন যে, এমন লোককেও হত্যা করা বিরাট গুনাহ্। সুতরাং এমন ব্যক্তির নাজাতের জন্য একটি গোলাম আযাদ করিলেই যথেষ্ট। অবশ্য কোন কোন ইমাম بالقتل দ্বারা আত্মহত্যার অর্থ গ্রহণ করিয়াছেন। অর্থাৎ, ঐ লোকটি আত্মহত্যা করিয়াছিল, তাই তাহার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হইয়া গিয়াছে। এই অর্থের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা হইবে যে, গোলাম আযাদ করা দ্বারা তাহার আযাব লাঘব হওয়াটা কেবল সেই লোকটির জন্য খাছ; অন্যান্যের বেলায় আত্মহত্যাকারী যদি মু'মিন হয়, তাহা হইলে সে দীর্ঘকাল জাহান্নামে থাকার পর মুক্তি লাভ করিবে।