মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩২১৯
৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৯। হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) বলেন, আনসারীদের মধ্যে এক ব্যক্তি, যাহার 'কুনিয়াত' ছিল আবু শোআয়ব, তাহার এক গোশত বিক্রয়কারী ক্রীতদাস ছিল। সে ক্রীতদাসকে বলিল, আমার জন্য পাঁচ জনের হয় পরিমাণ খানা তৈয়ার কর। আমি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও পাঁচ জনের একজন হিসাবে দাওয়াত দিতে ইচ্ছা রাখি। সুতরাং সেমতে তাহার জন্য কিছু খানা তৈয়ার করা হইল। অতঃপর সে আসিয়া হুরকে দাওয়াত দিল। পথে তাঁহাদের সাথে এক ব্যক্তি শামিল হইল। (দাওয়াতপাতার বাড়ী পৌঁছিয়া) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন : আবু শোআয়ব। এক ব্যক্তি আমাদের সাথী হইয়াছে। যদি তোমার ইচ্ছা হয় তাহাকে (ঘরে ঢোকার অনুমতি দিতে পার আর যদি ইচ্ছা না হয় বাদও দিতে পার। সে বলিল, না হুযূর আমি তাহাকে অনুমতি দিলাম। – মোত্তাঃ
وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: كَانَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ يُكْنَى أَبَا شُعَيْبٍ كَانَ لَهُ غُلَامٌ لَحَّامٌ فَقَالَ: اصْنَعْ لِي طَعَامًا يَكْفِي خَمْسَةً لَعَلِّي أَدْعُو النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَامِسَ خَمْسَةٍ فَصَنَعَ لَهُ طعيما ثمَّ أتها فَدَعَاهُ فَتَبِعَهُمْ رَجُلٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا شُعَيْبٍ إِنَّ رَجُلًا تَبِعَنَا فَإِنْ شِئْتَ أَذِنْتَ لَهُ وَإِنْ شِئْتَ تركته» . قَالَ: لَا بل أَذِنت لَهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. ইহাতে বুঝা গেল যে, দাওয়াত ব্যতীত, অন্তত অনুমতি ব্যতীত কাহারও খানার যেয়াফতে শরীক হওয়া জায়েয নহে এবং দাওয়াতী মেহমানের পক্ষেও জায়েয নহে দাওয়াতের অতিরিক্ত ব্যক্তিকে খানায় শরীক করা যাবৎ না বুঝিতে পারা যায় যে, ইহাতে খানাওয়ালার সন্তোষ রহিয়াছে—স্পষ্ট শব্দ দ্বারা হউক বা দেশপ্রথা অনুসারে হউক। অবশ্য যদি কেহ কাহারও সাথী হয়, তবে খানাওয়ালার কোন অসুবিধা না হইলে তাহাকে খানায় শরীক করা মোস্তাহাব বা উত্তম। আর বিদায় দিতে হইলেও অন্তত তাহাকে মিষ্টি কথার দ্বারা বিদায় দেওয়া উচিত। খানাওয়ালার মনের সন্তোষের কথা না জানিয়া মেহমানের পক্ষে জায়েয নহে অন্যের জন্য অনুমতি চাওয়া। ইহা তাহার উপর চাপ দেওয়ার শামিল। সে লজ্জায় পড়িয়াও অনুমতি দিতে পারে।

২. এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, দাওয়াতদাতা ছিলেন হযরত আবূ শু‘আয়ব রাযি.। এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামতো কাউকে সঙ্গে নিয়ে দাওয়াতের খাবারে শরীক করাতে পারবে না। কেউ তার সঙ্গে গেলে বা নিজ ইচ্ছায় কাউকে নিয়ে গেলে গৃহকর্তার অনুমতি নিতে হবে। গৃহকর্তা অনুমতি দিলে সে খেতে পারবে, অন্যথায় নয়। অতিথি ব্যস অতিথিই। সে খাবারের মালিক নয় যে, যাকে ইচ্ছা তাকে খাওয়াবে। তার সামনে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা থেকে কেবল সে নিজেই খেতে পারবে। গৃহকর্তার পক্ষ থেকে তার জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার নয়। অনেকে দাওয়াতের খানা নিজ ইচ্ছামতো সঙ্গে করে নিয়েও যায়। গৃহকর্তার অনুমতি ছাড়া এটা কিছুতেই জায়েয নয়।

প্রকাশ থাকে যে, যাকে দাওয়াত করা হয়, সাধারণ নিয়ম অনুসারে দাওয়াতে সে একাই যেতে পারে। সঙ্গে অন্য কাউকে নিতে পারে না। তবে হাঁ, দাওয়াতদাতার সঙ্গে যদি তার ঘনিষ্ঠতা থাকে এবং বুঝতে পারে সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়ে গেলে তাতে সে নারাজ হবে না; বরং খুশিই হবে, তবে এ অবস্থায় সেরকম কাউকে সঙ্গে নেওয়া যাবে। এক বর্ণনায় আছে, একবার এক দর্জির দাওয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আনাস রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো সুন্নত।

খ. যারা খুশিমনে দাওয়াত দেয়, তাদের দাওয়াত কবুল করা উচিত।

গ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ গেলে তার কর্তব্য গৃহকর্তার কাছে তার জন্য অনুমতি চাওয়া।

ঘ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ আসলে এবং তার জন্য অনুমতি চাওয়া হলে গৃহকর্তার তা মঞ্জুর করা উচিত।

ঙ. দাওয়াতদাতা সাধারণ পর্যায়ের কেউ হলে তার দাওয়াত অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

চ. দাওয়াতের খাবার মেহমানের জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার বা সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার নয়। তাই বিনা অনুমতিতে এটা করা যাবে না।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান