মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩০৮০
প্রথম অনুচ্ছেদঃ বিবাহের নীতি ও বিবিধ বিষয়
৩০৮০। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা, উহা চক্ষুকে আনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে রক্ষা করে; আর যে সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোযা রাখে, রোযা হইল তাহার জন্য খোজা হওয়া। মোত্তাঃ
كتاب النِّكَاح: اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বিবাহ ও তালাক পর্ব

‘বিবাহ্’—মূলে ‘নিকাহ' শব্দ রহিয়াছে, যাহার অর্থ, সহবাস ও বিবাহ। এখানে ইহা শেষোক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হইয়াছে। শরীআতে ইহার অর্থ, নারী-পুরুষের একে অন্যকে উপভোগ করার চুক্তি —বিশেষ—যাহাতে ইজাব ও কবূল অর্থাৎ, প্রস্তাব ও সমর্থন এবং দুইজন সাক্ষী থাকা আবশ্যক।

কোরআনে রহিয়াছেঃ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ

“তবে তোমরা তোমাদের পছন্দমত অন্য নারী বিবাহ কর (একটি) দুইটি তিনটি বা চারিটি।” (সূরা নিসা, আয়াত ৩) এই আয়াত হইতে যাহেরিয়াগণ বলেন, যে ব্যক্তি সহবাস ও খোরপোষদানে সমর্থ, তাহার পক্ষে বিবাহ করা ফরযে আইন। আমাদের হানাফীদের মতে সহীহতর কথা হইল, উহা সুন্নতে মুআক্কাদা। নফল এবাদতে মশগুল হওয়া অপেক্ষা বিবাহ করিয়া সংসার জীবন যাপন করাই উত্তম। নবী করীম (ﷺ) বলিয়াছেন, 'ইসলামে বৈরাগ্য নাই।' তবে যাহার খোরপোষদানের সামর্থ্য নাই তাহার পক্ষে বিবাহ করা মাকরূহ। তাহার পক্ষে রোযা রাখাই বাঞ্ছনীয়, কিন্তু ইমাম শাফেয়ীর মতে সংযমশীল ব্যক্তির পক্ষে বিবাহ করা অপেক্ষা এবাদতে মশগুল হওয়াই উত্তম।
উপরোক্ত আয়াত হইতে ইহাও বুঝা গিয়াছে যে, পুরুষের পক্ষে চারি সীমার মধ্যে থাকিয়া একাধিক বিবাহ করা জায়েয। কারণ, পুরুষেরা সাধারণত নারীদের তুলনায় শক্তিবান। অতএব, কোন কোন পুরুষের পক্ষে কোন কোন সময়ে একাধিক নারী গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। যুদ্ধের পর নারীদের আবশ্যকেও ইহা জরুরী হইয়া দাড়ায়। যেসকল দেশে ও জাতিতে একাধিক পত্নী রাখার রেওয়াজ নাই, সেসকল দেশ ও জাতিতে একাধিক উপপত্নী রাখার নিয়ম রহিয়াছে। সাধারণভাবে, বিশেষ করিয়া যুদ্ধের পর যেসকল দেশ অনাচারে ছাইয়া যায়, সেসকল দেশে অবৈধ গর্ভপাতের এবং অবৈধ সন্তান জন্মের হার ইহার সাক্ষী। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ১৯৫৯ সালের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হইয়াছেঃ “ইনসেলুডোর, ডুমানিকান রিপাবলিক, হণ্ডুরাস, গোয়েতেমালা ও পানামায় অবৈধ সন্তানের হার শতকরা ৬০। পানামায় তো প্রত্যেক চারিটি সন্তানের মধ্যে তিনটিই (অর্থাৎ, শতকরা ৭৫টিই) পাদ্রীদের হস্তক্ষেপ বা সিভিল মেরিজ রেজেষ্টারী ব্যতীতই জন্মগ্রহণ করিতেছে। লেটিন আমেরিকায় অবৈধ সন্তানের হার সর্বাপেক্ষা অধিক।” মুসলিম দেশসমূহের উল্লেখ করিয়া বলা হইয়াছে যে, “সর্বাপেক্ষা আধুনিক ধরনের দেশ মিসরে অবৈধ সন্তানের হার শতকরা একেরও কম।" অবশেষে ইহার কারণ সম্পর্কে বলা হইয়াছে, “যেহেতু মুসলিম দেশসমূহে একাধিক বিবাহের প্রচলন রহিয়াছে, সেহেতু ঐ সকল দেশে অবৈধ সন্তান প্রসবের হার এত কম।” – (পারিবারিক আইন — মুফতী শফী, পৃঃ ৩৩) অথচ আজ দেশের আধুনিকতাবাদীরা সেসকল দেশের অনুকরণে একাধিক বিবাহের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করিতেছে। ইহাকে কালের পরিহাস ছাড়া আর কি বলা যাইতে পারে?
আরবদের মধ্যে বিবাহের ব্যাপারে কোন সীমা নির্ধারিত ছিল না, যাহার যত ইচ্ছা বিবাহ করিতে পারিত। আজকালও কোন কোন দেশে এই নিয়ম প্রচলিত রহিয়াছে। সোয়াজিল্যাণ্ডের রাজা দ্বিতীয় সডুজার এক হাজার একশত সাতাইশ জন স্ত্রী মিছিল সহকারে এক ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগদান করিয়াছে বলিয়া এই সেদিনও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। (দৈনিক আজাদ, ৭/৬/৬৮ ইং) এক্ষেত্রে ইসলাম একদিকে যেমন নারী লইয়া অযথা বিলাসিতা করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছে, অপরদিকে তেমন পুরুষ সমাজের যথার্থ প্রয়োজনের প্রতিও লক্ষ্য রাখিয়াছে।
ইসলাম চারি বিবাহের অনুমতি যেখানে দিয়াছে সেখানে ইহার জন্য কঠোর শর্তও আরোপ করিয়াছে। খোরপোষ, বাসস্থান ইত্যাদি যাবতীয় ব্যাপারে সকলের সাথে সুবিচার করা এবং রাত্রি যাপনে সকলের জন্য সমানভাবে পালা বণ্টন করাকে ফরয করিয়া দিয়াছে, যাহার ফলে একাধিক বিবাহ কার্যত অসম্ভব হইয়া গিয়াছে। (ইহার বিস্তারিত বিবরণ ও নবী করীম (ﷺ)-এর একাধিক বিবাহকরণ সম্মুখের 'বিবিদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা' অধ্যায়ে দেখুন।)

‘রোযা হইল খোজা হওয়া' – অর্থাৎ, রোযার উপবাস সহবাস প্রবৃত্তিকে দমন করে। ইহা পরীক্ষিত বিষয়। এ হাদীস হইতে বুঝা গেল, সামর্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষে বিবাহ করাটাই উত্তম।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩০৮০ | মুসলিম বাংলা