আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৮৬
২১৯২. রাজী, রিল, যাকওয়ান, বিরে মাউনার যুদ্ধ এবং আযাল, কারাহ, আসিম ইবনে সাবিত, খুবাইব (রাযিঃ) ও তার সঙ্গীদের ঘটনা। ইবনে ইসহাক (রাহঃ) বলেন, আসিম ইবনে উমর (রাযিঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাজীর যুদ্ধ উহুদের যুদ্ধের পর সংঘটিত হয়েছিল
৩৭৮৬। ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ) (মুশরীকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসিম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)- এর নানা আসিম ইবনে সাবিত আনসারী (রাযিঃ)- এর নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল কোথাও প্রেরণ করলেন। যেতে যেতে তারা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বনী লিহইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর বনী লিহইয়ানের প্রায় একশ তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছলো, যে স্থানে অবতরণ করে সাহাবীগণ খেজুর খেয়েছিলেন। তারা সেখানে খেজুরের আটি দেখতে পেল যা সাহাবীগণ মদীনা থেকে পাথেয়রূপে এনেছিলেন। তখন তারা বলল, এগুলো তো ইয়াসরিবের খেজুর (এর আঁটি)।
এরপর তারা পদচিহ্ন ধরে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল এসে তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহলে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম (রাযিঃ) বললেন, আমি কোনো কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ আপনার রাসূলের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলের প্রতি আক্রমণ করল এবং তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। এভাবে তারা আসিম (রাযিঃ)-সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল।
এখন শুধু বাকী রইলেন খুবাইব (রাযিঃ), যায়দ (রাযিঃ) এবং অপর একজন সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক) (রাযিঃ)। পুনরায় তারা তাদের কে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক) (রাযিঃ) বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হলেন না। অবশেষে কাফেররা তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়দ (রাযিঃ)- কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রয় করে দিল।
বনী হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফাল গোত্রের লোকেরা খুবাইব (রাযিঃ)- কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব (রাযিঃ) হারিস কে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিন বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার দৃঢ় পরিকল্পনা করলে তিনি নাভির নীচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলমান হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি।
খুবাইব (রাযিঃ) তা বুঝতে পেরে বললেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইনশাআল্লাহ আমি তা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবাইব (রাযিঃ) থেকে উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোনো ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আব্দ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য হারাম শরীফের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ দাও। (নামায আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে শংকিত হয়ে পড়ছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে তাহলে আমি (নামাযকে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দু’রাকআত নামায আদায়ের সুন্নত প্রবর্তন করেছেন সর্বপ্রথম তিনিই।
এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখুন। এরপর তিনি দু’টি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করলেন, “যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোনো শংকা নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যেকোনো পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি”। “আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি, তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন”। এরপর উকবা ইবনে হারিস তাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আসিম (রাযিঃ)- এর শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ আসিম (রাযিঃ) বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসিম (রাযিঃ)-কে রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহ থেকে কোনো অংশ নিতে সক্ষম হল না।
এরপর তারা পদচিহ্ন ধরে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল এসে তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহলে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম (রাযিঃ) বললেন, আমি কোনো কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ আপনার রাসূলের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলের প্রতি আক্রমণ করল এবং তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। এভাবে তারা আসিম (রাযিঃ)-সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল।
এখন শুধু বাকী রইলেন খুবাইব (রাযিঃ), যায়দ (রাযিঃ) এবং অপর একজন সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক) (রাযিঃ)। পুনরায় তারা তাদের কে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক) (রাযিঃ) বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হলেন না। অবশেষে কাফেররা তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়দ (রাযিঃ)- কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রয় করে দিল।
বনী হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফাল গোত্রের লোকেরা খুবাইব (রাযিঃ)- কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব (রাযিঃ) হারিস কে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিন বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার দৃঢ় পরিকল্পনা করলে তিনি নাভির নীচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলমান হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি।
খুবাইব (রাযিঃ) তা বুঝতে পেরে বললেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইনশাআল্লাহ আমি তা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবাইব (রাযিঃ) থেকে উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোনো ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আব্দ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য হারাম শরীফের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ দাও। (নামায আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে শংকিত হয়ে পড়ছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে তাহলে আমি (নামাযকে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দু’রাকআত নামায আদায়ের সুন্নত প্রবর্তন করেছেন সর্বপ্রথম তিনিই।
এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখুন। এরপর তিনি দু’টি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করলেন, “যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোনো শংকা নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যেকোনো পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি”। “আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি, তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন”। এরপর উকবা ইবনে হারিস তাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আসিম (রাযিঃ)- এর শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ আসিম (রাযিঃ) বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসিম (রাযিঃ)-কে রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহ থেকে কোনো অংশ নিতে সক্ষম হল না।
