আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৭৯
২১৯০. যে সব মুসলমান উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব,(হুযাইফার পিতা), ইয়ামান আনাস ইবনে নযর এবং মুস‘আব ইবনে উমায়র (রাযিঃ)।
৩৭৮০। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের দু’জনকে একই কাপড়ে (একই কবরে) দাফন করেছিলেন। কাফনে জড়ানোর পর তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, এদের মধ্যে কে কুরআন শরীফ সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত? যখন কোনো একজনের প্রতি ইঙ্গিত করা হত তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলতেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষ্য হব। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাযার নামায ও আদায় করা হয়নি-১ এবং তাদেরকে গোসলও দেওয়া হয়নি।-২
(অন্য এক সনদে) আবুল ওয়ালী (রাহঃ) .... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহাদাত বরণ করার পর (তাঁর শোকে) আমি কাঁদতে লাগলাম এবং বারবার তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নবী কারীম (ﷺ)- এর সাহাবীগণ আমাকে এ থেকে বারণ করছিলেন। তবে নবী কারীম (ﷺ) (এ ব্যাপারে) আমাকে নিষেধ করেননি। অধিকন্তু নবী কারীম (ﷺ) (আব্দুল্লাহর ফুফুকে বলেছেন) তোমরা তার জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত ফিরিশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করছিলেন।
১- শহীদের জানাযার নামায আদায় করা সম্পর্কে কোনো কোনো ইমামের মত হল, তাদের জন্য জানাযার নামাযের কোনো দরকার নেই। তারা আলোচা হাদীসকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করে থাকেন। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতে শহীদদের জানাযার নামায আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদের শহীদদের উপর জানাযার নামায আদায় করেছিলেন বলেও কতিপয় হাদীসে বর্ণিত আছে। অবশ্য সংক্ষেপ করণার্থে তিনি সাত সাত জনের জানাযা একত্রে আদায় করেছিলেন। পৃথক পৃথকভাবে আদায় করেননি। এ বিষয়টিকেই আলোচ্য হাদীসে জানাযার নামায আদায় করেননি বলে প্রকাশ করা হয়েছে।
২- এ বিষয়ে সকল ইমাম একমত যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তিকে তার রক্ত রঞ্জিত দেহে রক্তাক্ত কাপড় চোপড়ে দাফন করতে হবে। তাকে গোসল দেয়া যাবে না। এ অবস্থায়ই তাকে কবরে রাখা হবে এবং এই অবস্থায়ই কিয়ামতে তার উত্থান হবে।
(অন্য এক সনদে) আবুল ওয়ালী (রাহঃ) .... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহাদাত বরণ করার পর (তাঁর শোকে) আমি কাঁদতে লাগলাম এবং বারবার তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নবী কারীম (ﷺ)- এর সাহাবীগণ আমাকে এ থেকে বারণ করছিলেন। তবে নবী কারীম (ﷺ) (এ ব্যাপারে) আমাকে নিষেধ করেননি। অধিকন্তু নবী কারীম (ﷺ) (আব্দুল্লাহর ফুফুকে বলেছেন) তোমরা তার জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত ফিরিশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করছিলেন।
১- শহীদের জানাযার নামায আদায় করা সম্পর্কে কোনো কোনো ইমামের মত হল, তাদের জন্য জানাযার নামাযের কোনো দরকার নেই। তারা আলোচা হাদীসকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করে থাকেন। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতে শহীদদের জানাযার নামায আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদের শহীদদের উপর জানাযার নামায আদায় করেছিলেন বলেও কতিপয় হাদীসে বর্ণিত আছে। অবশ্য সংক্ষেপ করণার্থে তিনি সাত সাত জনের জানাযা একত্রে আদায় করেছিলেন। পৃথক পৃথকভাবে আদায় করেননি। এ বিষয়টিকেই আলোচ্য হাদীসে জানাযার নামায আদায় করেননি বলে প্রকাশ করা হয়েছে।
২- এ বিষয়ে সকল ইমাম একমত যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তিকে তার রক্ত রঞ্জিত দেহে রক্তাক্ত কাপড় চোপড়ে দাফন করতে হবে। তাকে গোসল দেয়া যাবে না। এ অবস্থায়ই তাকে কবরে রাখা হবে এবং এই অবস্থায়ই কিয়ামতে তার উত্থান হবে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে উহুদ যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের দাফনকার্য সম্পর্কিত একটি বিশেষ তথ্য দেওয়া হয়েছে। উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল হিজরী ৪র্থ সনে। এতে ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন অনেকেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ভীষণভাবে আহত হন। যখন দাফন-কাফনের পালা আসে, তখন সাহাবায়ে কেরামকে যে কঠোর-কঠিন সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তারা ছিলেন নেহায়েত গরীব। সকল শহীদের পূর্ণাঙ্গ কাফনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সকলেই ছিলেন আহত ও ক্ষত-বিক্ষত। এতগুলো কবর তাদের পক্ষে কিভাবে খনন করা সম্ভব? আনসারগণ এসে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো ক্ষত-বিক্ষত, সংকটাপন্ন। তিনি বললেন, তোমরা একটু প্রশস্ত গর্ত কর এবং প্রতি কবরে দুই-তিনজন করে দাফন কর। তা-ই করা হয়েছিল। এমনকি একই কবরে পুরুষ ও নারীকেও স্থান দেওয়া হয়েছিল। মাঝখানে মাটি দিয়ে আড়াল করা হয়েছিল। একেকজনের কাফন এতই ছোট ছিল যে,মাথা ঢাকলে পা ঢাকে না, পা ঢাকলে মাথা ঢাকে না। অগত্যা মাথা ঢেকে পায়ের উপর ঘাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যাহোক যখন দু-দু'জনকে একেক কবরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে জেনে নিচ্ছিলেন যে, তাদের মধ্যে কুরআন বেশি কে জানে। যার দিকে ইশারা করা হত যে সে বেশি জানে, তাকে কেবলার দিকে সামনে রাখা হতো। অপরজনকে রাখা হত তার পেছনে। অর্থাৎ এ অগ্রগণ্যতা বয়স বা অন্য কোনও বিচারে বিবেচনা করা হত না; তা বিবেচনা করা হত কুরআন কম-বেশি জানার ভিত্তিতে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. প্রয়োজনে একাধিক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা যেতে পারে।
খ. কুরআন যে বেশি জানে তার মর্যাদাও বেশি। এমনকি দাফনের ক্ষেত্রেও সে মর্যাদা বিবেচনাযোগ্য।
যাহোক যখন দু-দু'জনকে একেক কবরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে জেনে নিচ্ছিলেন যে, তাদের মধ্যে কুরআন বেশি কে জানে। যার দিকে ইশারা করা হত যে সে বেশি জানে, তাকে কেবলার দিকে সামনে রাখা হতো। অপরজনকে রাখা হত তার পেছনে। অর্থাৎ এ অগ্রগণ্যতা বয়স বা অন্য কোনও বিচারে বিবেচনা করা হত না; তা বিবেচনা করা হত কুরআন কম-বেশি জানার ভিত্তিতে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. প্রয়োজনে একাধিক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা যেতে পারে।
খ. কুরআন যে বেশি জানে তার মর্যাদাও বেশি। এমনকি দাফনের ক্ষেত্রেও সে মর্যাদা বিবেচনাযোগ্য।
