মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১২- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮৪৮
৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - নিষিদ্ধ বস্তু ক্রয়-বিক্রয়
২৮৪৮। হযরত আবু হুরায়য়া (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন যাহারা বাজারে বিক্রি করার জন্য পণ্যদ্রব্য লইয়া আসিতেছে, আগাইয়া গিয়া তাহাদের সঙ্গে মিলিত হইবে না। যদি কেহ এইরূপ করে এবং কোন বস্তু ক্রয় করে, তবে ঐ বিক্রেতা মালিক বাজারে পৌঁছিবার পর অবকাশ পাইবে (উক্ত বিক্রয়কে ভঙ্গ করার)। -মুসলিম
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَلَقَّوُا الْجَلَبَ فَمَنْ تَلَقَّاهُ فَاشْتَرَى مِنْهُ فَإِذَا أَتَى سَيِّدُهُ السُّوقَ فَهُوَ بالخَيارِ» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হানাফী মাযহাব মতে উক্ত অবকাশ একতরফা বাধ্যতামূলক হইবে তখন, যখন ক্রেতার কোন কথায় বিক্রেতা ধোকা খাইয়া থাকে। যেমন, ক্রেতা বলিয়াছে, বাজারে এই জিনিসের দর পাঁচ টাকা সের আছে। এই কথায় বিক্রেতা তাহাকে পাঁচ টাকায় দিয়াছে। অথচ বাজারে ঐ বস্তু ছয় টাকা সের। এমতাবস্থায় বিক্রেতার জন্য এখতিয়ার থাকিবে বিক্রয় ভঙ্গ করার। ১ নম্বরের নিষেধাজ্ঞাটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাত্র। কারণ, ঐরূপ করিলে হাত-বদল বেশী হয়, এতদ্ভিন্ন ক্রয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয় এবং গুদামজাত করার সুযোগ হয়। এইসব কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
৩ নম্বরের বিষয়টির উদ্দেশ্য একটি ষড়যন্ত্রমূলক কৌশলের প্রতিরোধ। অনেক বিক্রেতা তাহার পক্ষে কিছু লোক রাখে; তাহারা কৃত্রিমরূপে ক্রেতা সাজিয়া মূল্য বলিয়া থাকে। মূল্য বলায় তাহাদের উদ্দেশ্য ক্রয় করা নহে, বরং প্রকৃত ক্রেতাকে প্রতারিত করা। কৃত্রিম ক্রেতা যে মূল্য বলিয়াছে, বিক্রেতা তাহাকে সেই মূল্যে দেয় নাই—ইহা দেখিয়া প্রকৃত ক্রেতা আরও কিছু অতিরিক্ত মূল্য বলে। এইভাবে অতিরিক্ত মূল্যের জন্য ক্রেতাকে প্রতারিত করা হয়। এই প্রতারণার দালালীকেই নিষিদ্ধ করা হইয়াছে ।
৪ নম্বরের বিষয়টিও দ্রব্যমূল্যের নিম্নগতি রাখারই উদ্দেশ্যে। গ্রাম্য লোকগণ তাহাদের উৎপন্ন পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করিতে আসিয়া শহরে-বন্দরে বেশী সময় অবস্থান করিতে পারে না। তাই তাহারা কিছু কম মূল্যে বিক্রি করায় অভ্যস্ত হয়; তাহাতে সাধারণ ক্রেতাগণ উপকৃত হয়। শহরের ফড়িয়াগণ যদি ঐ শ্রেণীর গ্রামবাসী বিক্রেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পায় যে, তোমাদের পণ্যদ্রব্য তোমরা বাজারে বিক্রি করিতে পারিবে না; আমাদের মাধ্যমে বিক্রি করিতে হইবে, তবে সাধারণ ক্রেতাগণ যে গ্রাম্য বিক্রেতাদের নিকট হইতে সস্তা দরে ক্রয় করার সুযোগ পাইত, উহা হইতে তাহারা বঞ্চিত হইবে। শহুরে ফড়িয়াগণ যদি গ্রাম্য বিক্রেতাদেরে না ঠকায় এবং দ্রব্যমূল্য বাড়াইয়া জনসাধারণকে কষ্ট না দেয়; বরং উভয় ক্ষেত্রে তাহারা উচিত নিয়মে কাজ করে, তবে তাহা উক্ত নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হইবে না।
৫ নম্বরের বিষয়টি হানাফী মাযহাব মতে এইরূপ যে, ঐ পশুর বিক্রেতা যদি প্রবঞ্চনামূলক কথা বলিয়া ক্রেতাকে প্রতারিত করিয়া থাকে। যেমন, যদি বলিয়া থাকে যে, দৈনিক দশ সের দুধ দেয়, অথচ পশুটি মাত্র পাঁচ সের দুধ দিয়া থাকে। বিক্রেতা প্রবঞ্চনাপূর্বক দুই-তিন দিনের দুগ্ধ জমা রাখিয়া উহার স্তন ফুলাইয়াছে এবং দশ সের দুধ দেওয়ার মিথ্যা কথা বলিয়া ক্রেতাকে প্রতারিত করিয়াছে, তবে ক্রেতার অবকাশ থাকিবে উক্ত ক্রয়কে ভঙ্গ করার। আর যদি বিক্রেতা মুখে কিছু না বলিয়া থাকে, ক্রেতা শুধু কুচ (স্তন) বড় দেখিয়া দশ সের দুধের ধারণা করিয়া থাকে, তবে সেইরূপ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ক্রয়-বিক্রয় ভঙ্গ করার অবকাশ থাকিবে না। অবশ্য শাসন কর্তৃপক্ষ যদি ঐরূপ প্রতারণামূলক কার্য বন্ধ করার জন্য ঐ ক্ষেত্রে ক্রয়-ভঙ্গ অবকাশের আইন করিয়া দেয়, তবে তাহা বলবৎ হইবে ।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২৮৪৮ | মুসলিম বাংলা