মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১০- যাবতীয় দোয়া-যিক্‌র

হাদীস নং: ২২৬৭
- যাবতীয় দোয়া-যিক্‌র
১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতাআলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ
২২৬৭ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: আল্লাহর একদল ফিরিশতা রহিয়াছেন যাঁহারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া আল্লাহর স্মরণকারীদের তালাশ করেন। যখন তাহারা কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করিতে দেখিতে পান, তখন একে অন্যকে বলেন, আস তোমাদের কাম্য বস্তু এখানেই। হুযূর বলেন, অতঃপর তাঁহারা তাহাদিগকে আপন ডানা দ্বারা ঘিরিয়া লন এই নিকটতম আসমান পর্যন্ত। হুযূর বলেন, তখন তাহাদিগকে প্রভু পরওয়ারদেগার জিজ্ঞাসা করেন— অথচ তিনি তাহাদের অবস্থা অধিক অবগত আছেন- আমার বান্দারা কি বলিতেছে? হুযূর বলেন, তখন তাঁহারা বলেন, তাহারা তোমার পবিত্রতা বর্ণনা, মহত্ত্ব ঘোষণা, প্রশংসাবাদ ও মর্যাদা বর্ণনা করিতেছে। হুযুর বলেন, তখন আল্লাহ্ বলেন, তাহারা কি আমাকে দেখিয়াছে ? হুযূর বলেন, তখন ফেরেস্তাগণ বলেন, কসম তোমার, তাহারা কখনও তোমাকে দেখে নাই। হুযুর বলেন, তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করেন, যদি তাহারা আমাকে দেখিত কেমন হইত ? হুযুর বলেন, তখন ফিরিশতাগণ বলেন, খোদা যদি তাহারা তোমাকে দেখিত, তবে তাহারা তোমার আরও বেশী এবাদত করিত এবং আরও বেশী মর্যাদা বর্ণনা ও পবিত্রতা ঘোষণা করিত। হুযূর বলেন, তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করেন, তাহারা কি চায়? ফিরিশতাগণ বলেন, তোমার নিকট তাহারা বেহেশত চায়। হুযূর বলেন, তখন আল্লাহ্ বলেন, তাহারা কি উহা দেখিয়াছে? ফিরিশতাগণ বলেন, হে রব! তোমার কসম, তাহারা উহাকে কখনও দেখে নাই। হুযূর বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, কেমন হইত যদি তাহারা উহা দেখিত ? হুযূর বলেন, ফিরিশতাগণ উত্তর দেন, যদি তাহারা উহা দেখিত, নিশ্চয় তাহারা উহার প্রচণ্ড লোভ করিত, উহার প্রার্থনা জানাইত অধিক এবং উহার আগ্রহ বেশী প্রকাশ করিত। (হুয়ূর বলেন,) তখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন, তাহারা কোন্ জিনিস হইতে আশ্রয় চায়? হুযুর বলেন,ফিরিশতাগণ উত্তর দেন, দোযখ হইতে। হুযুর বলেন, তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করেন, তাহারা কি উহা দেখিয়াছে? হুযূর বলেন, ফিরিশতাগণ উত্তর করেন, হে রব। তোমার কসম, তাহারা কখনও উহা দেখে নাই। হুযুর বলেন, তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করেন, কেমন হইত যদি তাহারা উহা দেখিত? হুযুর বলেন, ফিরিশতাগণ উত্তর করেন, যদি তাহারা উহা দেখিত, তবে উহা হইতে বেশী ভাগিত এবং উহা হইতে বেশী ভয় করিত। হুযুর বলেন, তখন তিনি বলেন, আমি তোমাদিগকে সাক্ষী করিতেছি যে, আমি তাহাদিগকে মাফ করিয়া দিলাম। হুযুর বলেন, তখন ফিরিশতাদের একজন বলিয়া উঠেন, তাহাদের অমুক ব্যক্তি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত নহে। সে তো শুধু তাহার কোন কাজেই আসিয়াছে। তখন আল্লাহ বলেন, তাহারা এমন সভাসদ যাহাদের। কোন সদস্যই হতভাগা হয় না। -বুখারী
মুসলিমের এক বর্ণনায় রহিয়াছে - আল্লাহ তা'আলার একদল অতিরিক্ত পর্যটক ফিরিশতা রহিয়াছেন, যাহারা যিকিরের মজলিস তালাশ করিয়া বেড়ান। যখন এমন কোন মজলিস পান যাহাতে আল্লাহর যিকির হইতেছে, তাহারা তাহাদের সাথে বসিয়া যান এবং একে অন্যের সাথে পাখা মিলাইয়া যিকিরকারীদের হইতে এই নিকটতম আসমান পর্যন্ত সমস্ত স্থানকে ঘিরিয়া লন। যখন যিকিরকারীগণ মজলিস ত্যাগ করিয়া বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়ে, ফিরিশতাগণ আকাশের দিকে অতঃপর আরও উপরের দিকে উঠিয়া যান। হুযুর বলেন, তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি অবগত আছেন, তোমরা কোথা হইতে আসিলে তাহারা বলেন, আমরা তোমার এমন বান্দাদের নিকট হইতে আসিয়াছি যাহারা যমীনে আছে এবং তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করিতেছে, মহত্ত্ব ও একত্ব ঘোষণা করিতেছে, প্রশংসাবাদ করিতেছে ও তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছে। তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করেন, তাহারা আমার নিকট কি প্রার্থনা করিতেছে? ফিরিশতাগণ বলেন, তোমার জান্নাত প্রার্থনা করিতেছে। তখন আল্লাহ্ বলেন, তাহারা কি আমার জান্নাত দেখিয়াছে ? তাহারা বলেন, না, হে পরওয়ারদেগার! তখন তিনি বলেন, কেমন হইত যদি তাহারা আমার জান্নাত দেখিত? অতঃপর ফিরিশতাগণ বলেন, তাহারা তোমার নিকট পানাহও চাহিতেছে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন, কোন জিনিস হইতে পানাহ চাহিতেছে? তাঁহারা বলেন, তোমার দোযখ হইতে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তাহারা কি আমার দোযখ দেখিয়াছে ? তাহারা উত্তর করেন, না, হে খোদা তখন তিনি জিজ্ঞাসা করেন, কেমন হইত যদি তাহারা আমার দোযখ দেখিত। অতঃপর তাহারা বলেন, তাহারা তোমার নিকট ক্ষমাও চাহিতেছে। হুযূর বলেন, তখন আল্লাহ্ বলেন, আমি তাহাদিগকে ক্ষমা করিয়া দিলাম এবং দান করিলাম যাহা তাহারা আমার নিকট চাহিতেছে, আর পানাহ্ দিলাম যাহা হইতে তাহারা পানাহ্ চাহিতেছে। হুযূর বলেন, তখন ফিরিশতাগণ বলেন, প্রভু হে, তাহাদের মধ্যে অমুক তো অত্যন্ত গোনাহগার বান্দা, সে পথ দিয়া যাইতেছিল আর তাহাদের সাথে বসিয়া গিয়াছে। হুযূর বলেন, তখন আল্লাহ্ বলেন, আমি তাহাকেও মাফ করিয়া দিলাম। তাহারা এমন দল যাহাদের সাথী হতভাগা হয় না।
كتاب الدعوات
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ قَالَ: «فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا» قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ: مَا يَقُولُ عِبَادِي؟ قَالَ: يَقُولُونَ: يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيُحَمِّدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: هَلْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ مَا رَأَوْكَ قَالَ فَيَقُولُ: كَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيدًا وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحًا قَالَ: فَيَقُولُ: فَمَا يَسْأَلُونَ؟ قَالُوا: يسألونكَ الجنَّةَ قَالَ: يَقُول: وَهل رأوها؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا قَالَ: فَيَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يقولونَ: لَو أنَّهم رأوها كَانُوا أَشد حِرْصًا وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا وَأَعْظَمَ فِيهَا رَغْبَةً قَالَ: فممَّ يتعوذون؟ قَالَ: يَقُولُونَ: مِنَ النَّارِ قَالَ: يَقُولُ: فَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: «لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا» قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: «يَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً» قَالَ: فَيَقُولُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ قَالَ: يَقُولُ مَلَكٌ مِنَ الْمَلَائِكَةِ: فِيهِمْ فُلَانٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ قَالَ: هُمُ الْجُلَسَاءُ لَا يَشْقَى جَلِيسُهُمْ . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سَيَّارَةً فُضْلًا يَبْتَغُونَ مَجَالِسَ الذِّكْرِ فَإِذَا وَجَدُوا مَجْلِسًا فِيهِ ذِكْرٌ قَعَدُوا معَهُم وحفَّ بعضُهم بَعْضًا بأجنحتِهم حَتَّى يملأوا مَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَإِذَا تَفَرَّقُوا عَرَجُوا وَصَعِدُوا إِلَى السَّمَاءِ قَالَ: فَيَسْأَلُهُمُ اللَّهُ وَهُوَ أَعْلَمُ: مِنْ أَيْنَ جِئْتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: جِئْنَا مِنْ عِنْدِ عِبَادِكَ فِي الْأَرْضِ يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيُهَلِّلُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ وَيَحْمَدُونَكَ وَيَسْأَلُونَكَ قَالَ: وَمَاذَا يَسْأَلُونِي؟ قَالُوا: يَسْأَلُونَكَ جَنَّتَكَ قَالَ: وَهَلْ رَأَوْا جَنَّتِي؟ قَالُوا: لَا أَيْ رَبِّ قَالَ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا جَنَّتِي؟ قَالُوا: وَيَسْتَجِيرُونَكَ قَالَ: وَمِمَّ يَسْتَجِيرُونِي؟ قَالُوا: مِنْ نَارِكَ قَالَ: وَهَلْ رَأَوْا نَارِي؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا نَارِي؟ قَالُوا: يَسْتَغْفِرُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ فَأَعْطَيْتُهُمْ مَا سَأَلُوا وَأَجَرْتُهُمْ مِمَّا اسْتَجَارُوا قَالَ: يَقُولُونَ: رَبِّ فِيهِمْ فُلَانٌ عَبْدٌ خَطَّاءٌ وَإِنَّمَا مَرَّ فَجَلَسَ مَعَهُمْ قَالَ: «فَيَقُولُ وَلَهُ غَفَرْتُ هم الْقَوْم لَا يشقى بهم جليسهم»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'এই নিকটতম আসমান'–কোরআনে রহিয়াছেঃ “আমি এই নিকটতম আসমানকে বাতিরাজি (নক্ষত্ররাজি) দ্বারা সুশোভিত করিয়াছি।” যাহাতে বুঝা গেল যে, এই মহাশূন্য, অগণিত নক্ষত্র ও সৌরজগতসমূহ এই নিকটতম আসমানের মধ্যেই অবস্থিত এবং উহা এ সকলের ঊর্ধ্বে। আধুনিককালের বিজ্ঞানীগণ যে বলেন, দূরবীক্ষণে আসমান বলিয়া কোন জিনিস দেখা যায় না। ইহার জবাবে বলা যায় যে, আসমান যে তাহাদের বর্তমান দূরবীক্ষণের নাগালের বাহিরে, আরও ঊর্ধ্বে বা দূরে নহে তাহা কে বলিল ?
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান