মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১০- যাবতীয় দোয়া-যিক্‌র

হাদীস নং: ২২৬৫
১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতাআলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ
২২৬৫। হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, যে আমার নিকট একটি ভাল কাজ লইয়া উপস্থিত হইবে, তাহার জন্য উহার দশ গুণ পুরস্কার রহিয়াছে। আর আমি বেশীও দিব। আর যে একটি মন্দ কাজ লইয়া উপস্থিত হইবে, উহার প্রতিফল উহার অনুরূপ এক গুণই রহিয়াছে অথবা আমি মাফ করিয়া দিব। যে আমার এক বিঘত নিকটে আসে, আমি তাহার এক হাত নিকটে যাই। আর যে আমার এক হাত নিকটে আসে, আমি তাহার এক বাম নিকটে হই। যে আমার নিকট হাটিয়া আসে, আমি তাহার নিকট দৌড়িয়া যাই এবং যে আমার নিকট পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ লইয়া আসে আমার সাথে কাহাকেও শরীক না করিয়া-- আমি তাহার সহিত সাক্ষাৎ করি ঐ পরিমাণ ক্ষমা লইয়া। —মুসলিম
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وأزيد وَمن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فجزاء سَيِّئَة مِثْلُهَا أَوْ أَغْفِرُ وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي شِبْرًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ ذِرَاعًا وَمِنْ تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَمَنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً وَمَنْ لَقِيَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطِيئَةً لَا يُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَقِيتُهُ بِمِثْلِهَا مَغْفِرَةً . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি একটি হাদীছে কুদসী। এর ভাষা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং ভাব ও মর্ম আল্লাহ তা'আলার। আর সে হিসেবে তিনি আল্লাহ তা'আলাকেই এর বক্তা বলেছেন। এ হাদীছে বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলা যে কত মেহেরবান ও দয়ালু, কয়েকটি নীতির উল্লেখ দ্বারা তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বান্দার সৎকর্মের প্রতিদান দেওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার নীতি
এতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর একটি নীতি বয়ান করেছেন এই যে
(যে ব্যক্তি একটি সৎকর্ম করবে, তার জন্য রয়েছে তার দশগুণ বা আরও বেশি ছাওয়াব)। অর্থাৎ কেউ একটি সৎকর্ম করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে তার দশগুণ বদলা তো দেনই, এমনকি তা বৃদ্ধি করতে করতে সাতশ' গুণ বরং তারচেও অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।
কুরআন মাজীদে এর একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে এভাবে যে-
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنُبُلَةٍ مِائَةً
حَبَّةٍ وَاللهُ يُطْعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন একটি শস্যদানা সাতটি শীষ উদ্‌গত করে (এবং) প্রতিটি শীর্ষে একশ' দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (ছাওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।

এক হাদীছে আছে, যখন এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজ উম্মতের জন্য আরও বেশি প্রতিদান চাইলেন। তখন আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেন-
مَن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضعِفهُ لَذَ أَضْعَافًا كَثِيرَةٌ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسطُ وَإِلَيْهِ
'কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার কল্যাণে তা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন? আল্লাহই সংকট সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সচ্ছলতা দান করেন, আর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।'
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মতকে আরও বেশি দিন। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন-
إِنَّمَا يُوَفَّ الصُّبِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
"যারা সবর অবলম্বন করে তাদেরকে তাদের ছাওয়াব দেওয়া হবে অপরিমিত।"

মহান আল্লাহ অতি সহজ সহজ আমলের বিনিময়েও বান্দাকে অপরিমিত ছাওয়াব দিয়ে থাকেন। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে-
مَنْ دَخَلَ السُّوْقَ، فَقَالَ : لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ
يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لا يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، كَتَبَ الله لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ، وَمَحَا عَنْهُ أَلْفِ أَلْفِ سَيِّئَةِ، وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ دَرَجَةٍ
'কোনও ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে যদি এই দু'আ পাঠ করে-
لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لا يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনও শরীক নেই। সার্বভৌমত্ব তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসাও তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি জীবন্ত, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁরই হাতে সমস্ত কল্যাণ। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ হাজার
নেকী দান করেন এবং তার দশ হাজার গুনাহ মাফ করেন আর তার মর্যাদা দশ হাজার স্তর উন্নীত করেন।

হযরত তামীম দারী রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দশবার পাঠ করে-
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، إلهَا وَاحِدًا أَحَدًا صَمَدًا، لَمْ يَتَّخِذُ صَاحِبَةً وَلا وَلَدًا، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনও শরীক নেই। তিনি এক অদ্বিতীয় মাবুদ, যিনি কারও মুখাপেক্ষী নন; বরং সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর কোনও স্ত্রী নেই এবং কোনও সন্তানও নেই আর তাঁর সমতুল্য নেই কেউ।) আল্লাহ তা'আলা তার জন্য চার লাখ নেকী লিপিবদ্ধ করেন।

অসৎকর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার নীতি
অপরদিকে, অসৎকর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা সাধারণত ন্যায়-ইনসাফ ও ক্ষমার আচরণ করে থাকেন। বলা হয়েছে (আর যে ব্যক্তি একটি অসৎকর্ম করবে, তার জন্য রয়েছে অনুরূপ একটি অসৎকর্মের শাস্তি অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব)। কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছে-
مَن جَاءَ بِالحَسَنَةِ فَلَه عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَ مَن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لا يُظْلَمُون
'যে ব্যক্তি কোনও পুণ্য নিয়ে আসবে, তার জন্য অনুরূপ তার দশগুণ (সাওয়াব) রয়েছে। আর যে ব্যক্তি কোনও অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে কেবল তারই সমান প্রতিফল দেওয়া হবে। আর তাদের প্রতি কোনও জুলুম করা হবে না।

আল্লাহু আকবার! কতইনা মেহেরবান আমাদের মহানুভব মাওলা। একদিকে তিনি সৎকর্মের প্রতিদান দেন অনেক অনেক গুণ বেশি, অন্যদিকে অসৎকর্ম করলে হয় তিনি তা ক্ষমা করে দেন, নয়তো বড়জোর সমপরিমাণ শাস্তিদান করেন। তিনি এ ঘোষণা দ্বারা সৎকর্মশীল বান্দাকে অধিকতর সৎকর্মে আগ্রহী করে তুলতে চাচ্ছেন, আর পাপী বান্দাকে তাঁর রহমত ও মাগফিরাতের প্রতি আশান্বিত করতে চাচ্ছেন, যাতে সে হতাশার শিকার না হয়ে পড়ে। এরপরও কি আমরা পাপকর্ম ছেড়ে সৎকর্মের প্রতি ধাবিত হব না? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ،رجيم، من هم بحَسَنةِ فَلَمْ يَعْمَلُهَا، كُتبت له حسنة فَإِن عَمِلَهَا، كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا، إلى سبع مائة إلى أضعاف كثيرة، ومن هم بو فَلَمْ يَعْمَلُهَا، كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً، فإنْ عَمِلَها كُتِبَتْ لَهُ وَاحِدَةً، أَوْ يَمْحُوهَا اللهُ، وَلَا يَهْلِك عَلَى اللَّهِ تَعَالَى إِلَّا هَالِكٌ
"তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু। যে ব্যক্তি কোনও সৎকর্মের ইচ্ছা করে, সেটি বাস্তবে কার্যকর না করলেও তার জন্য একটি নেকী লেখা হয়। আর যদি সেটি বাস্তবে কার্যকর করে, তবে তার জন্য দশটি থেকে সাতশ' পর্যন্ত বরং তারচে'ও বহু বেশি পরিমাণে নেকী লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোনও অসৎকর্মের ইচ্ছা করে আর সেটি বাস্তবে কার্যকর না করে, তবে তার জন্য একটি নেকী লেখা হয়। আর যদি বাস্তবে কার্যকর করে, তবে একটি পাপই লেখা হয় অথবা আল্লাহ সেটি ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহর এতটা রহমত ও দয়া সত্ত্বেও ধ্বংস হয় কেবল ওই ব্যক্তি, ধ্বংস হওয়াই যার সংকল্প ।

আল্লাহর দিকে অগ্রগামীর প্রতি আল্লাহ তা'আলার গুণগ্রাহী আচরণ
আল্লাহ তা'আলার কোনও বান্দা তাঁর পথে অগ্রসর হলে আল্লাহ তা'আলা তার অভাবনীয় মূল্যায়ন করেন। বান্দা যে গতিতে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তা'আলার রহমত ও তাওফীক তার দিকে ততধিক গতিতে এগিয়ে আসে। এ হাদীছ জানাচ্ছে- “যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হবে, আমি একহাত পরিমাণ তার নিকটবর্তী হব। যে ব্যক্তি একহাত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হবে, আমি দুই হাতের বিস্তার পরিমাণ তার নিকটবর্তী হব। যে ব্যক্তি আমার দিকে আসবে হেঁটে হেঁটে, আমি তার দিকে দৌড়ে আসব”
ইমাম নববী রহ. এর অর্থ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার দিকে এগিয়ে আসে আমার আনুগত্য দ্বারা, আমি তার দিকে এগিয়ে যাই নিজ রহমত দ্বারা। সে যতবেশি আনুগত্য করে, আমি ততবেশি রহমত নিয়ে এগিয়ে যাই। সে যদি আমার আনুগত্যের দিকে হেঁটে হেঁটে আসে, আমি তাঁর প্রতি আমার রহমত ঢেলে দিই এবং তার আনুগত্যের চেয়েও দ্রুতগতিতে আমি তার কাছে রহমত পৌঁছে দিই। ফলে মাকসূদ ও লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে তার খুব বেশি হাঁটার প্রয়োজন হয় না।

এ ব্যাখ্যা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আল্লাহর দিকে বান্দার এগিয়ে যাওয়া ও বান্দার দিকে আল্লাহর এগিয়ে আসার দ্বারা শারীরিকভাবে এগোনোর কথা বোঝানো হয়নি। এমনিভাবে আল্লাহর দিকে হেঁটে যাওয়া এবং বান্দার দিকে আল্লাহর হেঁটে বা দৌড়ে আসার অর্থও বাস্তবিক পা সঞ্চালন নয়। কেননা আল্লাহ তা'আলার সত্তা শরীর ও অঙ্গের ধারণা থেকে ঊর্ধ্বে। তাই তাঁর সম্পর্কে এরূপ অর্থ গ্রহণের কোনও অবকাশ নেই। সুতরাং আল্লাহর দিকে বান্দার এগোনো ও হেঁটে যাওয়ার অর্থ হল ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহ তা'আলার হুকুম-আহকাম পালন করা, তাঁর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা এবং ইবাদত-বন্দেগীতে আপন সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে থাকা। আর বান্দার দিকে আল্লাহ তা'আলার এগিয়ে আসার অর্থ তাকে ইবাদত-বন্দেগীর তাওফীক দেওয়া, তা কবুল করা, তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করা এবং ছাওয়াব ও প্রতিদান দেওয়া।

উলামায়ে কেরাম বলেন, বান্দার সঙ্গে আল্লাহ জাল্লা শানুহুর নৈকট্য তিন প্রকার -

ক. আমসাধারণের সঙ্গে নৈকট্য। বান্দার সঙ্গে আল্লাহ তা'আলার এ নৈকট্য স্থাপিত রয়েছে তাঁর ইলম ও জ্ঞান দ্বারা।

খ. বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নৈকট্য। এটা হল বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার রহমতের নৈকট্য।

গ. অতি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নৈকট্য। আল্লাহ তা'আলা তাঁর বিশেষ প্রিয় বান্দাদের উপর যে খাস করুণার দৃষ্টি রাখেন, যা দ্বারা তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে হেফাজত করেন, শয়তান ও নফসের প্রতারণা থেকে রক্ষা করেন, তাদের অন্তরে ইবাদত-বন্দেগীর উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগ্রত রাখেন এবং ইবাদতের মজা ও ঈমানের প্রশান্তি সঞ্চার করেন। অতি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এটাই আল্লাহ তা'আলার বিশেষ নৈকট্যের স্বরূপ।

গুনাহদারদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার মাগফিরাতের বিস্তার
আল্লাহ তা'আলা অত্যন্ত ক্ষমাপরায়ণ। তাঁর ক্ষমাশীলতার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। এ হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
(যে ব্যক্তি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার সঙ্গে এ অবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, আমার সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করেনি, আমি অনুরূপ ক্ষমা নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করব)। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা বান্দার অন্তরে ক্ষমাপ্রাপ্তির আশা সঞ্চার করছেন, যাতে বান্দা যত বড় গুনাহগারই হোক, আল্লাহর রহমত থেকে যেন হতাশ না হয় । কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ يُعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى الفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
'বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'

বস্তুত আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে নিরাশ করতে চান না। বান্দার গুনাহ যত বেশিই হোক ও যত কঠিনই হোক, আল্লাহ তা'আলার রহমতের সামনে তা কিছুই নয়। আল্লাহ তা'আলার রহমতকে প্রতিহত করতে পারে জগতে এমন কিছুই নেই। ঘোরতর পাপীও অনুতপ্ত মনে যখন ‘ইয়া রব্ব' বলে ডেকে ওঠে, মুহূর্তেই আল্লাহ তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। কাফের-মুশরিক পর্যন্ত তাওবা করলে তাদেরকেও তিনি ক্ষমা করেন।

উলামায়ে কেরাম বলেন, আলোচ্য হাদীছটি সর্বাপেক্ষা বেশি আশা জাগানিয়া হাদীছ। তবে এর ভিত্তিতে কারও ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। এমন বলা উচিত নয় যে, আল্লাহ তা'আলার কাছে যখন ক্ষমার আশা আছে, তখন যতবেশি পারি গুনাহ করে নিই। কেননা হাদীছটি দ্বারা মূল উদ্দেশ্য তো বান্দাকে হতাশ হতে না দেওয়া; গুনাহের প্ররোচনা দেওয়া নয়। আল্লাহ তা'আলা যেমন ক্ষমাশীল, তেমনি শাস্তিদাতাও বটে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
نبى عِبَادِى أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ) وَأَنَّ عَذَانِ هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ
'আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও, নিশ্চয় আমিই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং এটাও জানিয়ে দাও যে, আমার শাস্তিই মর্মস্তুদ শাস্তি।

এটা সত্য যে, আল্লাহর ক্রোধের উপর তাঁর রহমত প্রবল এবং তাঁর শাস্তি অপেক্ষা ক্ষমাই প্রশস্ত। কিন্তু কারও তো জানা নেই তাকে ক্ষমা করা হবে না শাস্তি দেওয়া হবে। কাজেই প্রত্যেকের অস্তরে ভয়ও রাখা উচিত এবং আশাও।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বান্দার সৎকর্মে আল্লাহ তা'আলা বড়ই খুশি হন। তাই প্রতিদান দেন বহুগুণ বেশি। সুতরাং আমাদের যথাসম্ভব বেশি বেশি সৎকর্মে অগ্রগামী থাকা উচিত।

খ. বান্দার পাপকর্ম আল্লাহ তা'আলার নিতান্তই অপসন্দ। তার আমলনামায় বেশি বেশি পাপ লিপিবদ্ধ থাকুক, আল্লাহ তা'আলার তা কাম্য নয়। সুতরাং আমরা যথাসম্ভব নিজেদেরকে পাপকর্ম থেকে বিরত রাখব।

গ. নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যত বেশিই পাপকর্ম হয়ে যাক, কিছুতেই ক্ষমা পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ হতে নেই। আল্লাহ তা'আলার রহমতের বিস্তার বান্দার পাপের পরিসর অপেক্ষা অনেক অনেক বেশি।

ঘ. আল্লাহ তা'আলার অপরিমিত ক্ষমাশীলতার কারণে ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। তিনি শাস্তিদাতাও বটে। তাই আশার পাশাপাশি অন্তরে ভয়ও রাখা উচিত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২২৬৫ | মুসলিম বাংলা