আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৩৬৬৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯৫০
২১৬৪. বদর যুদ্ধে নিহতদের ব্যাপারে নবী কারীম
(ﷺ)- এর ভবিষ্যৎ বাণী
৩৬৬৫। আহমাদ ইবনে উসমান (রাহঃ) .... সা‘দ ইবনে মু‘আয (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, তাঁর ও উমাইয়া ইবনে খালফের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উমাইয়া মদীনায় আসলে সা‘দ ইবনে মু‘আযের অতিথি হত এবং সা‘দ (রাযিঃ) মক্কায় গেলে উমাইয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় হিজতর করার পর একদা সা‘দ (রাযিঃ) উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা গেলেন এবং উমাইয়ার বাড়ীতে অবস্থান করলেন। তিনি উমাইয়াকে বললেন, আমাকে এমন একটি নিরিবিলি সময়ের কথা বল যখন আমি (শান্তভাবে) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারব। তাই দ্বি-প্রহরের সময় একদিন উমাইয়া তাঁকে সাথে নিয়ে বের হল, তখন তাঁদের সাথে আবু জেহেলের দেখা হল। তখন সে (আবু জেহেল উমাইয়াকে লক্ষ্য করে) বলল, হে আবু সাফওয়ান! তোমার সাথে ইনি কে? সে বলল, ইনি সা‘দ (ইবনে মু‘আয)। তখন আবু জেহেল তাকে (সা‘দ ইবনে মু‘আযকে) লক্ষ্য করে বলল, আমি তোমাকে নিঃশঙ্ক চিত্তে ও নিরাপদে মক্কায় (বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ করতে দেখেছি অথচ তোমরা ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দান করেছ এবং তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছ। আল্লাহর কসম, (এ মুহূর্তে) তুমি আবু সাফওয়ানের (উমাইয়া) সঙ্গে না থাকলে তোমার পরিজনদের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতে না।
সা‘দ (রাযিঃ)- এর চেয়েও অধিক উচ্চস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি এতে যদি আমাকে বাঁধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি ব্যাপারে তোমাকে বাঁধা দেব যা তোমার জন্য এর চেয়েও ভীষণ কঠিন হবে। আর তা হল, মদীনার উপকন্ঠ দিয়ে তোমার (ব্যবসা বাণিজ্যের বৃহত্তম কেন্দ্র সিরিয়ার) যাতায়াতের রাস্তা (বন্ধ করে দেব)। তখন উমাইয়া তাকে বলল, হে সা‘দ (রাযিঃ) এ উপত্যাকার প্রধান সর্দার আবুল হাকামের (আবু জেহেলের) সাথে এরূপ উচ্চস্বরে কথা বলিও না। তখন সা‘দ (রাযিঃ) বললেন, হে উমাইয়া! তুমি চুপ কর। আল্লাহর কসম, আমি রাসূলুল্লাহ(ﷺ)- কে বলতে শুনেছি যে, তারা তোমার হত্যাকারী। উমাইয়া জিজ্ঞাসা করল, মক্কার বুকে? সা‘দ (রাযিঃ) বললেন, তা জানি না। উমাইয়া এতে ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। এরপর উমাইয়া বাড়ী গিয়ে তার (স্ত্রীকে ডেকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান! সা‘দ আমার সম্পর্কে কি বলছে জানো? সে বলল, সা‘দ তোমাকে কি বলেছে? উমাইয়া বলল, সে বলেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি মক্কায়? সে (সা‘দ) বলল, তা আমি জানি না। এরপর উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম, আমি কখনো মক্কা থেকে বের হব না।
কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন সমাগত হলে আবু জেহেল সর্বস্তরের জনসাধারণকে সদলবলে বের হওয়ার আহবান জানিয়ে বলল, তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়া (মক্কা ছেড়ে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবু জেহেল এসে তাকে বলল, হে আবু সাফওয়ান। তুমি এ উপত্যাকার আধিবাসিদের (একজন) নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে (তুমি যুদ্ধ যাত্রায়) পেছনে বয়ে গেছ তখন তারাও তোমার সাথে এ বলে পেছনেই থেকে যাবে। এ বলে আবু জেহেল তার সাথে পীড়াপীড়ি করতে থাকলে সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলেছ তাই খোদার কসম অবশ্যই আমি এমন একটি উষ্ট্র ক্রয় করব যা মক্কার সবচাইতে ভাল। এরপর উমাইয়া (তার স্ত্রীকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান; আমার সফরের ব্যবস্থা কর। তখন তার স্ত্রী তাকে বলল, হে আবু সাফওয়ান! তোমার মদীনাবাসী ভাই যা বলেছিলেন তা তুমি ভুলে গিয়েছ কি? সে বলল, না। আমি তাদের সাথে কিছু দূর যেতে চাই মাত্র। রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় যে মনযিলেই উমাইয়া কিছুক্ষণ অবস্থান করেছে সেখানেই সে তার উট বেঁধে রেখেছে, গোটা পথেই এরূপ সে করল পরিশেষে বদর প্রান্তরে আল্লাহর হুকুমে সে মারা গেল।
باب ذِكْرُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يُقْتَلُ بِبَدْرٍ
3950 - حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا شُرَيْحُ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ مَيْمُونٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حَدَّثَ، عَنْ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ أَنَّهُ قَالَ: كَانَ صَدِيقًا لِأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ، وَكَانَ أُمَيَّةُ إِذَا مَرَّ بِالْمَدِينَةِ نَزَلَ عَلَى سَعْدٍ، وَكَانَ سَعْدٌ إِذَا مَرَّ بِمَكَّةَ نَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ، فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ انْطَلَقَ سَعْدٌ مُعْتَمِرًا، فَنَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ بِمَكَّةَ، فَقَالَ لِأُمَيَّةَ: انْظُرْ لِي سَاعَةَ خَلْوَةٍ لَعَلِّي أَنْ أَطُوفَ بِالْبَيْتِ، فَخَرَجَ بِهِ قَرِيبًا مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ، فَلَقِيَهُمَا أَبُو جَهْلٍ، فَقَالَ: يَا أَبَا صَفْوَانَ، مَنْ هَذَا مَعَكَ؟ فَقَالَ هَذَا سَعْدٌ، فَقَالَ لَهُ أَبُو جَهْلٍ: أَلَا أَرَاكَ تَطُوفُ بِمَكَّةَ آمِنًا، وَقَدْ أَوَيْتُمُ الصُّبَاةَ، وَزَعَمْتُمْ أَنَّكُمْ تَنْصُرُونَهُمْ وَتُعِينُونَهُمْ، أَمَا وَاللَّهِ لَوْلَا أَنَّكَ مَعَ أَبِي صَفْوَانَ مَا رَجَعْتَ إِلَى أَهْلِكَ سَالِمًا، فَقَالَ لَهُ سَعْدٌ وَرَفَعَ صَوْتَهُ عَلَيْهِ [ص:72]: أَمَا وَاللَّهِ لَئِنْ مَنَعْتَنِي هَذَا لَأَمْنَعَنَّكَ مَا هُوَ أَشَدُّ عَلَيْكَ مِنْهُ، طَرِيقَكَ عَلَى المَدِينَةِ، فَقَالَ لَهُ أُمَيَّةُ: لَا تَرْفَعْ صَوْتَكَ يَا سَعْدُ عَلَى أَبِي الحَكَمِ، سَيِّدِ أَهْلِ الوَادِي، فَقَالَ سَعْدٌ: دَعْنَا عَنْكَ يَا أُمَيَّةُ، فَوَاللَّهِ لَقَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُمْ قَاتِلُوكَ» ، قَالَ: بِمَكَّةَ؟ قَالَ: لاَ أَدْرِي، فَفَزِعَ لِذَلِكَ أُمَيَّةُ فَزَعًا شَدِيدًا، فَلَمَّا رَجَعَ أُمَيَّةُ إِلَى أَهْلِهِ، قَالَ: يَا أُمَّ صَفْوَانَ، أَلَمْ تَرَيْ مَا قَالَ لِي سَعْدٌ؟ قَالَتْ: وَمَا قَالَ لَكَ؟ قَالَ: زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا أَخْبَرَهُمْ أَنَّهُمْ قَاتِلِيَّ، فَقُلْتُ لَهُ: بِمَكَّةَ، قَالَ: لَا أَدْرِي، فَقَالَ أُمَيَّةُ: وَاللَّهِ لَا أَخْرُجُ مِنْ مَكَّةَ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ اسْتَنْفَرَ أَبُو جَهْلٍ النَّاسَ، قَالَ: أَدْرِكُوا عِيرَكُمْ؟ فَكَرِهَ أُمَيَّةُ أَنْ يَخْرُجَ، فَأَتَاهُ أَبُو جَهْلٍ فَقَالَ: يَا أَبَا صَفْوَانَ، إِنَّكَ مَتَى مَا يَرَاكَ النَّاسُ قَدْ تَخَلَّفْتَ، وَأَنْتَ سَيِّدُ أَهْلِ الوَادِي، تَخَلَّفُوا مَعَكَ، فَلَمْ يَزَلْ بِهِ أَبُو جَهْلٍ حَتَّى قَالَ: أَمَّا إِذْ غَلَبْتَنِي، فَوَاللَّهِ لَأَشْتَرِيَنَّ أَجْوَدَ بَعِيرٍ بِمَكَّةَ، ثُمَّ قَالَ أُمَيَّةُ: يَا أُمَّ صَفْوَانَ جَهِّزِينِي، فَقَالَتْ لَهُ: يَا أَبَا صَفْوَانَ، وَقَدْ نَسِيتَ مَا قَالَ لَكَ أَخُوكَ اليَثْرِبِيُّ؟ قَالَ: لَا مَا أُرِيدُ أَنْ أَجُوزَ مَعَهُمْ إِلَّا قَرِيبًا، فَلَمَّا خَرَجَ أُمَيَّةُ أَخَذَ لَا يَنْزِلُ مَنْزِلًا إِلَّا عَقَلَ بَعِيرَهُ، فَلَمْ يَزَلْ بِذَلِكَ حَتَّى قَتَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بِبَدْرٍ "
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)