আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৯১২
২১৫৪. নবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীদের মদীনা হিজরত।
৩৬৩১। ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) .... উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে মুহাজিরদের জন্য চার কিস্তিতে বাৎসরিক চার হাজার দেরহাম ধার্য করলেন, এবং (তাঁর ছেলে) ইবনে উমরের জন্য ধার্য করলেন তিন হাজার পাঁচশ। তাঁকে বলা হল, তিনিও তো মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর জন্য চার হাজার থেকে কম কেন করলেন? তিনি বললেন। সে তো তাঁর পিতামাতার সাথে হিজরত করেছে। কাজেই ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারে না যে একাকী হিজরত করেছে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
الْمُهَاجِرُونَ الْأَوَّلُونَ (প্রথমদিকের মুহাজির) কারা, সে সম্পর্কে ৩টি মত পাওয়া যায়।
ক. যারা কিবলা পরিবর্তনের আগে মদীনায় হিজরত করেছেন। এভাবেও বলা যায় যে, যারা বায়তুল মুকাদ্দাস ও কা'বা শরীফ উভয় কিবলায় নামায পড়েছেন। কিবলা পরিবর্তন হয়েছে হিজরী ২য় সনের মধ্যরজবে। কাজেই যারা এর আগে আগে হিজরত করেছেন, তারাই ‘আল-মুহাজিরূন আল-আউওয়ালুন’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
খ. যেসকল মুহাজির বায়‘আতুর রিযওয়ানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বায়‘আতুর রিযওয়ান হয়েছিল হুদায়বিয়ার সফরে হিজরী ৬ষ্ঠ সনে। সুতরাং এ তারিখের আগে যারা হিজরত করেছেন, তাদেরকেই আল-মুহাজিরূন আল-আউওয়ালুন বলা হবে।
গ. আরেক মত অনুযায়ী যেসকল মুহাজির বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই এর অন্তর্ভুক্ত।
হযরত উমর রাযি. বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) প্রতিষ্ঠা করার পর তাতে মুসলিমসাধারণের জন্য ভাতা ধার্য করেছিলেন। তা তিনি করেছিলেন দীনী মর্যাদা অনুযায়ী। দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যাদের ত্যাগ ও কুরবানী যত বেশি ছিল, ভাতা নির্ধারণে তাদের সে অনুপাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং এ ত্যাগ ও কুরবানীতে যেহেতু প্রথমদিকের মুহাজিরগণ সর্বাপেক্ষা অগ্রগামী ছিলেন, তাই তাদের ভাতাও ধার্য করা হয়েছিল সর্বাপেক্ষা বেশি। তাদের প্রত্যেকের ভাতা ছিল বার্ষিক চার হাজার দিরহাম।
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাযি.-এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাযি.-ও প্রথমদিকের মুহাজির ছিলেন। সে হিসেবে তাঁর ভাতাও চার হাজার দিরহাম হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ৫০০ দিরহাম কমিয়ে তাঁর ভাতা ধার্য করেন সাড়ে তিন হাজার দিরহাম। এ নিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন যে, তাকে ৫০০ দিরহাম কম দেওয়া হচ্ছে কেন, অথচ তিনিও প্রথমদিকেরই একজন মুহাজির?
হযরত উমর রাযি. এর যে উত্তর দেন, তা ছিল তাঁর সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাকওয়ার পরিচায়ক এবং তা কঠোর ন্যায়-নীতির নির্দেশক। তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ তো তাঁর পিতা-মাতার সঙ্গে হিজরত করেছে। আর বাকিরা হিজরত করেছেন নিজে নিজে। অর্থাৎ হিজরতের যে কষ্ট-ক্লেশ এবং তাতে ত্যাগ-তিতিক্ষার যে যন্ত্রণা, তা আব্দুল্লাহকে তাদের মতো পোহাতে হয়নি। সে পিতা-মাতার ছায়াতলে ছিল। তখন তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর। পিতা-মাতা তাঁকে নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। অন্য মুহাজিরগণ এ আনুকূল্য ও সুবিধা পায়নি। তাই আব্দুল্লাহ রাযি.-কে তাদের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
হযরত উমর রাযি. ছিলেন সারা মুসলিম জাহানের খলীফা। রাষ্ট্রের শাখাবিশেষের প্রধান নন। বিশেষ কোনও প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ কোনও দল ও সংগঠনের পরিচালক নন। বর্তমানকালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে সমাসীন ব্যক্তিগণ তো বটেই, বিশেষ কোনও শাখা বা প্রতিষ্ঠানের যারা পরিচালক, তারা সুবিধাদি প্রদান ও বণ্টনে কী নীতি অবলম্বন করে থাকে? হযরত উমর রাযি. হিজরতের বাহ্যিক দিক বিবেচনা করে নিজ পুত্রকে অন্যদের সমান অধিকার দিলেও কোনও দোষ ছিল না। তা ন্যায় ও ইনসাফসম্মতই হতো। তা সত্ত্বেও তিনি সূক্ষ্ম দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিবেচনা করে নিজ পুত্রকে অন্যদের থেকে একধাপ নামিয়ে দিয়েছেন, যে কারণে তাঁর বিচার-বণ্টনে অন্যায় পক্ষপাতের অভিযোগ কোনও শত্রুর পক্ষেও তোলা সম্ভব নয়। সবারই জানা, আত্মীয়-স্বজন বা কোনও প্রিয়জনের সেখানে অন্যায় সুবিধাভোগের কোনও সুযোগ ছিল না। এর সঙ্গে বর্তমানকালের ক্ষমতাসীনদের বিচার-বিবেচনা তুলনা করুন। ক্ষমতাসীনদের বাদ দিন, আপন কর্তৃত্ববলয়ে আমরা প্রত্যেকে সুবিধাদির বিলি-বণ্টনে কতটুকু ইনসাফ রক্ষা করি, তা একবার খতিয়ে দেখুন। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে ন্যায়-নীতি অনুসরণের তাওফীক দান করুন।
এ তো গেল নিজ পুত্রের ক্ষেত্রে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাযি.-এর সূক্ষ্ম নীতিবোধের দৃষ্টান্ত। এবার তাঁর নবীপ্রেম ও আহলে বায়তের ভালোবাসার নজিরও লক্ষ করুন। হযরত হাসান রাযি. ও হযরত হুসায়ন রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র। বয়সে তাঁরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর চেয়ে ১৪-১৫ বছরের ছোট। তাদের জন্মই হিজরতের কয়েক বছর পর। তা সত্ত্বেও আহলে বায়তের ভালোবাসায় হযরত উমর রাযি. তাঁদের ভাতা ধার্য করেছিলেন বার্ষিক চার হাজার দিরহাম। অর্থাৎ প্রথমদিকের মুহাজিরদের অনুরূপ এবং তাঁদের পিতা হযরত আলী রাযি. ও স্বয়ং খলীফা উমর রাযি.-এর সমান। তাঁদের ভাতাও ছিল চার হাজার দিরহামই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দীনের জন্য হিজরত করা অতীব মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ একটি আমল।
খ. প্রথমদিকে যারা হিজরত করেছিলেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তাদের মর্যাদা সর্বোচ্চ।
গ. দীনের ক্ষেত্রে যারা অগ্রগামী, তাদেরকে বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা উচিত।
ঘ. দীনের কাজে ত্যাগ ও কুরবানীদাতাগণ সরকারি বিশেষ আনুকূল্য পাওয়ার অধিকার রাখে।
ঙ. অর্থবণ্টন ও সরকারি সুবিধাদি প্রদানে ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করা অবশ্যকর্তব্য।
চ. হযরত উমর রাযি. ছিলেন ন্যায়-ইনসাফের মূর্তপ্রতিক। ইনসাফ রক্ষায় তাঁর বিবেচনা ছিল অতি সূক্ষ্ম।
ছ. আহলে বায়তের প্রতি হযরত উমর রাযি.-এর মহব্বত ছিল অতি গভীর।
ক. যারা কিবলা পরিবর্তনের আগে মদীনায় হিজরত করেছেন। এভাবেও বলা যায় যে, যারা বায়তুল মুকাদ্দাস ও কা'বা শরীফ উভয় কিবলায় নামায পড়েছেন। কিবলা পরিবর্তন হয়েছে হিজরী ২য় সনের মধ্যরজবে। কাজেই যারা এর আগে আগে হিজরত করেছেন, তারাই ‘আল-মুহাজিরূন আল-আউওয়ালুন’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
খ. যেসকল মুহাজির বায়‘আতুর রিযওয়ানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বায়‘আতুর রিযওয়ান হয়েছিল হুদায়বিয়ার সফরে হিজরী ৬ষ্ঠ সনে। সুতরাং এ তারিখের আগে যারা হিজরত করেছেন, তাদেরকেই আল-মুহাজিরূন আল-আউওয়ালুন বলা হবে।
গ. আরেক মত অনুযায়ী যেসকল মুহাজির বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই এর অন্তর্ভুক্ত।
হযরত উমর রাযি. বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) প্রতিষ্ঠা করার পর তাতে মুসলিমসাধারণের জন্য ভাতা ধার্য করেছিলেন। তা তিনি করেছিলেন দীনী মর্যাদা অনুযায়ী। দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যাদের ত্যাগ ও কুরবানী যত বেশি ছিল, ভাতা নির্ধারণে তাদের সে অনুপাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং এ ত্যাগ ও কুরবানীতে যেহেতু প্রথমদিকের মুহাজিরগণ সর্বাপেক্ষা অগ্রগামী ছিলেন, তাই তাদের ভাতাও ধার্য করা হয়েছিল সর্বাপেক্ষা বেশি। তাদের প্রত্যেকের ভাতা ছিল বার্ষিক চার হাজার দিরহাম।
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাযি.-এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাযি.-ও প্রথমদিকের মুহাজির ছিলেন। সে হিসেবে তাঁর ভাতাও চার হাজার দিরহাম হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ৫০০ দিরহাম কমিয়ে তাঁর ভাতা ধার্য করেন সাড়ে তিন হাজার দিরহাম। এ নিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন যে, তাকে ৫০০ দিরহাম কম দেওয়া হচ্ছে কেন, অথচ তিনিও প্রথমদিকেরই একজন মুহাজির?
হযরত উমর রাযি. এর যে উত্তর দেন, তা ছিল তাঁর সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাকওয়ার পরিচায়ক এবং তা কঠোর ন্যায়-নীতির নির্দেশক। তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ তো তাঁর পিতা-মাতার সঙ্গে হিজরত করেছে। আর বাকিরা হিজরত করেছেন নিজে নিজে। অর্থাৎ হিজরতের যে কষ্ট-ক্লেশ এবং তাতে ত্যাগ-তিতিক্ষার যে যন্ত্রণা, তা আব্দুল্লাহকে তাদের মতো পোহাতে হয়নি। সে পিতা-মাতার ছায়াতলে ছিল। তখন তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর। পিতা-মাতা তাঁকে নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। অন্য মুহাজিরগণ এ আনুকূল্য ও সুবিধা পায়নি। তাই আব্দুল্লাহ রাযি.-কে তাদের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
হযরত উমর রাযি. ছিলেন সারা মুসলিম জাহানের খলীফা। রাষ্ট্রের শাখাবিশেষের প্রধান নন। বিশেষ কোনও প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ কোনও দল ও সংগঠনের পরিচালক নন। বর্তমানকালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে সমাসীন ব্যক্তিগণ তো বটেই, বিশেষ কোনও শাখা বা প্রতিষ্ঠানের যারা পরিচালক, তারা সুবিধাদি প্রদান ও বণ্টনে কী নীতি অবলম্বন করে থাকে? হযরত উমর রাযি. হিজরতের বাহ্যিক দিক বিবেচনা করে নিজ পুত্রকে অন্যদের সমান অধিকার দিলেও কোনও দোষ ছিল না। তা ন্যায় ও ইনসাফসম্মতই হতো। তা সত্ত্বেও তিনি সূক্ষ্ম দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিবেচনা করে নিজ পুত্রকে অন্যদের থেকে একধাপ নামিয়ে দিয়েছেন, যে কারণে তাঁর বিচার-বণ্টনে অন্যায় পক্ষপাতের অভিযোগ কোনও শত্রুর পক্ষেও তোলা সম্ভব নয়। সবারই জানা, আত্মীয়-স্বজন বা কোনও প্রিয়জনের সেখানে অন্যায় সুবিধাভোগের কোনও সুযোগ ছিল না। এর সঙ্গে বর্তমানকালের ক্ষমতাসীনদের বিচার-বিবেচনা তুলনা করুন। ক্ষমতাসীনদের বাদ দিন, আপন কর্তৃত্ববলয়ে আমরা প্রত্যেকে সুবিধাদির বিলি-বণ্টনে কতটুকু ইনসাফ রক্ষা করি, তা একবার খতিয়ে দেখুন। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে ন্যায়-নীতি অনুসরণের তাওফীক দান করুন।
এ তো গেল নিজ পুত্রের ক্ষেত্রে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাযি.-এর সূক্ষ্ম নীতিবোধের দৃষ্টান্ত। এবার তাঁর নবীপ্রেম ও আহলে বায়তের ভালোবাসার নজিরও লক্ষ করুন। হযরত হাসান রাযি. ও হযরত হুসায়ন রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র। বয়সে তাঁরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর চেয়ে ১৪-১৫ বছরের ছোট। তাদের জন্মই হিজরতের কয়েক বছর পর। তা সত্ত্বেও আহলে বায়তের ভালোবাসায় হযরত উমর রাযি. তাঁদের ভাতা ধার্য করেছিলেন বার্ষিক চার হাজার দিরহাম। অর্থাৎ প্রথমদিকের মুহাজিরদের অনুরূপ এবং তাঁদের পিতা হযরত আলী রাযি. ও স্বয়ং খলীফা উমর রাযি.-এর সমান। তাঁদের ভাতাও ছিল চার হাজার দিরহামই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দীনের জন্য হিজরত করা অতীব মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ একটি আমল।
খ. প্রথমদিকে যারা হিজরত করেছিলেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তাদের মর্যাদা সর্বোচ্চ।
গ. দীনের ক্ষেত্রে যারা অগ্রগামী, তাদেরকে বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা উচিত।
ঘ. দীনের কাজে ত্যাগ ও কুরবানীদাতাগণ সরকারি বিশেষ আনুকূল্য পাওয়ার অধিকার রাখে।
ঙ. অর্থবণ্টন ও সরকারি সুবিধাদি প্রদানে ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করা অবশ্যকর্তব্য।
চ. হযরত উমর রাযি. ছিলেন ন্যায়-ইনসাফের মূর্তপ্রতিক। ইনসাফ রক্ষায় তাঁর বিবেচনা ছিল অতি সূক্ষ্ম।
ছ. আহলে বায়তের প্রতি হযরত উমর রাযি.-এর মহব্বত ছিল অতি গভীর।
