মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১২৯৪
৩৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দুআ কুনূত
১২৯৪। একদা হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইল (উহা রুকুর পূর্বে কি পরে), তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রুকুর পরে কুনূত পড়িয়াছেন। অপর বর্ণনায় আছে, রুকূর পূর্বে ও উহার পরে (উভয় রকমে পড়িয়াছেন)। —ইবনে মাজাহ্
وَسُئِلَ أَن بْنُ مَالِكٍ عَنِ الْقُنُوتِ. فَقَالَ: قَنَتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ الرُّكُوعِ وَفِي رِوَايَةٍ: قَبْلَ الرُّكُوعِ وَبَعْدَهُ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'রুকূর পূর্বে ও রুকুর পরে'—ইমাম আ'যম আবু হানীফার মতে ইহার অর্থ, রুকুর পূর্বে সর্বদা এবং রুকুর পরে শুধু এক মাস — যখন হুযূর রেল ও যাকওয়ান প্রভৃতি গোত্রের প্রতি বদ দো'আ করিতেছিলেন। আসেমের হাদীস (১২১৬) ও ইবনে আব্বাসের হাদীস (১২১৭) ইহা বুঝাইতেছে। আর ইমাম শাফেয়ীর মতে ইহার অর্থ, রুকূর পূর্বে কখনও এবং রুকুর পরে সর্বদা।
‘রমযানের শেষার্ধ আরম্ভ হওয়া ব্যতীত কুনূত পড়িতেন না' – বিতির নামাযে কুনূত পড়া সম্পর্কীয় হাদীসের সংখ্যা অনেক, আর বিতির নামায হইল বার মাসের একটি স্থায়ী নামায ; সুতরাং কুনূতও বার মাসের একটি স্থায়ী দো'আ—ইহাই হইল হানাফীগণের মত। অর্থাৎ, তাঁহারা এ হাদীসের এই অংশ অপেক্ষা অপরাপর হাদীসকে গ্রহণ করাই শ্রেয় মনে করেন।

পরিশিষ্ট

নবী করীম (ﷺ) বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শব্দে দো'আ করিয়াছেন ও শিক্ষা দিয়াছেন। তিনি যে বিষয়ে যে সময়ের জন্য যে শব্দে দো'আ করিয়াছেন বা শিক্ষা দিয়াছেন, আমাদের পক্ষে তাহার অনুসরণ করাই শ্রেয়, অন্যথায় কোন না কোন ভুলে পতিত হওয়ার আশংকাই অধিক। একদা এক ব্যক্তি 'সবর' (ধৈর্য) প্রার্থনা করিতেছিল। হুযূর (ﷺ) শুনিয়া বলিলেন, তুমি তো বিপদ প্রার্থনা করিতেছ। কেননা, সবর বিপদেই হইয়া থাকে। তবে যাহারা আরবী বুঝে না তাহাদের পক্ষে নামায ব্যতীত অপর সময়ের দো'আ নিজের মাতৃভাষায় করাই মনের ভাব প্রকাশের পক্ষে সহায়ক। হুযূর (ﷺ) যে দো'আ কুনূত হযরত ইমাম হাসানকে শিক্ষা দিয়াছেন তাহা এইঃ

اللهم اهدني فيمن هديت وعافني فيمن عافيت وتولني فيمن توليت وبارك لي فيما أعطيت وقني شرما قضيت فإنك تقضي ولا يُقضى عليك ـ إنّه لايذل من واليت ولا يعز من عاديت تباركت ربنا وتعاليت

[অনুবাদ পূর্ব অধ্যায়ে হযরত হাসানের হাদীসে (১২০১) দেওয়া হইয়াছে।] ইমাম শাফেয়ী (রঃ) ইহাকেই গ্রহণ করিয়াছেন। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালেক (রঃ) নিম্নলিখিত দো'আটিকেই পছন্দ করিয়াছেন। তাবারানী প্রমুখ মোহাদ্দেসগণ ইহা বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য হানাফী ওলামাগণ ইহার সহিত উপরিউক্ত দো'আটিকেও যোগ করিয়া পড়া উত্তম মনে করেনঃ

اللهم إنا نستعينك ونستغفرك ونؤمن بك ونتوكل عليك ونتني عليك الخير ونشكرك ولا تكفرك ونخلع ونترك من يفجرك ـ اللهم إياك نعبد ولك نصلي ونسجد . وإليك تسعى ونحفد ونرجوا رحمتك ونخشى عذابك، إن عذابك بالكفار ملحق -

“হে খোদা! আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি, তোমার উপর নির্ভর করি, তোমার প্রতি ভাল গুণ আরোপ করি, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তোমাকে অস্বীকার করি না এবং যে তোমার অবাধ্যতা করে তাহাকে ত্যাগ ও বর্জন করি। হে খোদা! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি ও সজদা করি এবং তোমারই দিকে ধাবিত হই ও ত্বরা করি। আমরা তোমার রহমত প্রত্যাশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি! নিশ্চয়, তোমার আযাব কাফের অবাধ্যদের প্রতিই বৰ্তিবে।”
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ১২৯৪ | মুসলিম বাংলা