আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৮৯৩
২১৫২. মক্কায় (থাকাকালীন) নবী কারীম (ﷺ)- এর নিকট আনসারের প্রতিনিধি দল এবং আকাবার বায়‘আত
৩৬১৪। কুতায়বা (রাহঃ) .... উবাদা ইবনে সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঐ মনোনীত প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা তাঁর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলাম জান্নাত লাভের জন্য যদি আমরা এই কাজগুলো করি এই শর্তে যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করব না, ব্যভিচারে লিপ্ত হব না, চুরি করব না, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে না হক হত্যা করব না,লুটতরাজ করব না, এবং নাফরমানী করব না। আর যদি আমরা এর মধ্যে কোনটিতে লিপ্ত হই, তবে এর ফয়সালা আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা

সর্বপ্রথম বলা হয়েছে— الإشراك بالله (আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা)। এর দ্বারা বোঝানে উদ্দেশ্য সর্বপ্রকার কুফরী কর্ম। যেমন আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব অস্বীকার করা, দেব-দেবীর পূজা করা, আল্লাহর দেওয়া দীন প্রত্যাখ্যান করা, নবী-রাসূলকে অমান্য করা, কুরআন মাজীদকে আল্লাহ তাআলার কালাম বলে স্বীকার না করা ইত্যাদি।
যে ব্যক্তি শিরকে লিপ্ত হয় এবং মুশরিক অবস্থায় মারা যায়, তার পরিণাম স্থায়ী জাহান্নামবাস। তাকে কখনও ক্ষমা করা হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এ বিষয়কে ক্ষমা করেন না যে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করা হবে। এর চেয়ে নিচের যে-কোনও বিষয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে, সে এক গুরুতর পাপে লিপ্ত হলো।
আরও ইরশাদ হয়েছে إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ 'নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম।

অন্যায় নরহত্যা
قتل النفس (নরহত্যা) অর্থাৎ শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা অতি ভয়ানক পাপ, তাতে যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হলো সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, পুরুষ হোক বা নারী, শিশু হোক বা বয়স্ক এবং স্বাধীন ব্যক্তি হোক বা গোলাম। শরীআত কেবল চার শ্রেণীর লোককে হত্যা করার অনুমতি দেয়। ক. কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে শাস্তিস্বরূপ তাকেও হত্যা করা হবে। খ. কোনও মুসলিম ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে গেলে অর্থাৎ ইসলাম পরিত্যাগ করলে প্রথমে তাকে তাওবা করতে বলা হবে, সে তাওবা করতে সম্মত না হলে তাকেও হত্যা করা হবে। গ. কোনও বিবাহিত নর-নারী ব্যভিচার করলে তাদেরকেও হত্যা করা হবে। ঘ. জিহাদকালে অনুসলিম ব্যক্তিকে যুদ্ধক্ষেত্রে বা বন্দী অবস্থায় হত্যা করা।

এর মধ্যে প্রথম তিন শ্রেণীর লোককে হত্যা করা হবে শাস্তিস্বরূপ। বলাবাহুল শাস্তিদান করার অধিকার কেবলই সরকারের বা আদালতের। তাই এরূপ হত্যা কেবলই আদালতের এখতিয়ারাধীন থাকবে। অন্য কেউ এ শাস্তি আরোপ করার অধিকার রাখে না। কেউ তা করলে অন্যায় নরহত্যারূপে গণ্য হবে।
ইসলামে অন্যায় নরহত্যা সম্পূর্ণ নিষেধ। এটা কঠিনতম পাপ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ 'আর আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন, তাকে যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা করো না।

অন্যত্র ইরশাদ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا “কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল।

আরও ইরশাদ হয়েছে وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا “যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমকে জেনেশুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যাকে সে সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি গযব নাযিল করবেন ও তাকে লানত করবেন। আর আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল কোনও কোনও গুনাহ অন্যান্য গুনাহ'র তুলনায় বেশি বড়। এরকম গুনাহ'র ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি।

খ. আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা যেহেতু সর্বাপেক্ষা বেশি কঠিন গুনাহ, যার পরিণাম স্থায়ী জাহান্নামবাস, তাই প্রত্যেকের সাবধান থাকা চাই যাতে তার দ্বারা কোনও অবস্থায়ই শিরকী গুনাহ না হয়ে যায়।

গ. অন্যায় নরহত্যা অতি ভয়ংকর পাপ। কোনও মুসলিম ব্যক্তি এটা করতে পারে না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন