মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ৭৯০
১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৭৯০। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে নামায পড়লেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন মসজিদের এক পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। লোকটি নামায পড়ে তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি তাকে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, যাও গিয়ে আবার নামায পড়। তোমার নামায হয় নি। লোকটি পুনরায় নামায পড়ে তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তাকে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, যাও আবার নামায পড়। তোমার নামায হয় নি। এভাবে তৃতীয়বার কিংবা চতুর্থবারের পর লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনি আমাকে নামাযের রীতি শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়ানোর ইচ্ছা করবে, প্রথমে উত্তমরূপে অজু করে কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে এবং তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর কুরআনে পাকের যা তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পাঠ করবে। তারপর রুকূ করবে এবং রুকুতে স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর সিজদাহ করবে এবং সিজদায় স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং স্থিরভাবে বসবে। তারপর (দ্বিতীয়) সিজদাহ করবে এবং সিজদায় স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং স্থির হয়ে বসবে। বর্ণনান্তরে রয়েছে, অতঃপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর তোমার সমস্ত নামাযেই এরূপ করবে। -বুখারী, মুসলিম
بَابُ صِفَةِ الصَّلَوةِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «وَعَلَيْك السَّلَام ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» . فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلَامُ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَأَسْبِغِ الْوُضُوءَ ثُمَّ اسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِّيَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا ثمَّ افْعَل ذَلِك فِي صَلَاتك كلهَا»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকু-সিজদায় স্থির হওয়া ওয়াজিব। রুকু-সিজদায় গিয়ে সর্বনি্ম কতটুকু সময় অপেক্ষা করলে ওয়াজিব আদায় হয় এ ব্যাপারে উপরিউক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, مِقْدَارُ الرُّكُوعِ أَنْ يَرْكَعَ حَتَّى يَسْتَوِيَ رَاكِعًا وَمِقْدَارُ السُّجُودِ أَنْ يَسْجُدَ حَتَّى يَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، فَهَذَا مِقْدَارُ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ الَّذِي لَا بُدَّ مِنْهُ . রুকু এবং সিজদায় যে পরিমাণ দেরি না করলেই নয় তা হলো, রুকু-সিজদায় গিয়ে স্থির হওয়া। (ত্বহাবী শরীফ-১৩৯২ নং হাদীসের আলোচনায়, খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৭) ইমাম ত্বহাবীর এ বক্তব্য থেকেও সর্বসাধারণের নিকট ধীরস্থিরের পরিমাণ নির্ধারণ করা কষ্টকর হতে পারে। তাই তাদের জন্য আরো সহজ করে বলা যেতে পারে যে, একবার তাসবীহ পাঠ করা যায় এই পরিমাণ সময় রুকু-সিজদায় অপেক্ষা করলে সেটাকে স্থিরতা বলা যায় এবং এর দ্বারা রুকু-সিজদা পূর্ণ হয়ে যায়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ৪৬৪) তবে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতে এ ধরণের তাড়াহুড়া কোনক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করার মতো সময় অপেক্ষা করা উচিত।
