মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ৭৪৮
৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান
৭৪৮। হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের নামাযে আমাদের নিকট অনুপস্থিত রইলেন—যখন পর্যন্ত না আমরা সূর্যগোলক দেখতে পাওয়ার কাছাকাছি হলাম। একটু পরেই তিনি তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলেন। সাথে সাথে নামাযের একামত বলা হল, তিনি (ﷺ) নামায পড়ালেন এবং তা (খুবই) সংক্ষেপ করলেন। যখন সালাম ফেরালেন, সকলকে ডেকে বললেন, তোমরা যে যেভাবে আছ সেভাবেই কাতারে বসে থাক। এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেন, শোন, আজ ভোরে তোমাদের নিকট আমার আসতে কি প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা বলছি। আমি রাত্রে উঠে অযু করলাম। তারপর আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হলো নামায পড়লাম; কিন্তু নামাযের মধ্যেই আমাকে তন্দ্রায় চেপে ধরল। আমি যেন অচল হয়ে পড়লাম। এই সময় আমি দেখলাম, আমার মহান প্রতিপালকের নিকট আমি পৌঁছে গিয়েছি এবং তিনি খুবই উত্তম অবস্থায় বিরাজ করছেন। তিনি আমাকে সম্বোধন করছেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আমি হাজির। তিনি বললেন, আমার শীর্ষ স্থানীয় ফিরিশতাগণ কি ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করছে? আমি বললাম, তা আমি অবগত নই। তিনি আমাকে এরূপ তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। তারপর তিনি তাঁর কুদরতের হাত আমার দুই স্কন্ধের মধ্যস্থলে রাখলেন। আমার মনে হল, তাঁর পবিত্র কুদরতি অঙ্গুলিসমূহের শীতলতা আমার বক্ষকেও শীতল করে দিয়েছে। তখন (আসমান-যমিনের) সকল কিছুই যেন আমার গোচরে এসে গেল এবং আমি সকল কিছুই অবগত হলাম। সকল বস্তু আমার নিকট পরিস্ফুট হয়ে উঠল। তারপর তিনি আমাকে পুনরায় সম্বোধন করলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি জবাবে বললাম, আমি উপস্থিত আছি, হে আমার প্রতিপালক। তখন তিনি বললেন, তুমি এখন বল, আমার বড় বড় ফিরিশতারা কি ব্যাপারে বিতর্ক করছে? আমি বললাম, কাফফারার ব্যাপারে। তিনি বললেন, সে সকল কি? আমি বললাম, পায়ে হেঁটে জামাতে যাওয়া আর নামাযের পর মসজিদে বসে থাকা, আর কষ্ট হলেও পূর্ণভাবে আর উত্তমরূপে অজু করা। তিনি আবার বললেন, তাছাড়া তারা আর কি নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি বললাম, মর্যাদার বিষয়সমূহ নিয়ে। তিনি বললেন, তা কি? আমি বললাম, অপরকে খাদ্য দান করা, নিজ কথাবার্তা ভদ্রতাসুলভ করা এবং রাত্রে নামায আদায় করা, লোকেরা যখন নিদ্রায় অচেতন থাকে। অতঃপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমার নিকট কি প্রার্থনা কর? আমি বললাম, হে প্রতিপালক! আমি চাই তোমার নিকট নেক আমল করতে, বদ আমল বর্জন করতে এবং দীন-দুঃখীকে ভালবাসতে (আর চাই) তুমি আমাকে মাফ কর, আমার প্রতি রহম কর। আর যখন মানুষ ফেতনায় লিপ্ত হয় তখন আমাকে ফেতনামুক্ত অবস্থায় উঠিয়ে নাও। এছাড়া আরও চাই, আমি যেন তোমাকে ভালবাসি এবং তোমাকে যে ভালবাসে তাকে ভালবাসি। আর যে কাজ তোমার ভালবাসার দিকে আমাকে এগিয়ে নিবে যেন সেই কাজকেও ভালবাসি। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এই ঘটনাটি ধ্রুব সত্য। তোমরা এটা লিখে রাখ এবং অপরকেও জানিয়ে দাও। -আহমদ, তিরমিযী
তিরমিযী বলেছেন, এই হাদীস হাসান ও ছহীহ এবং আমি এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই হাদীসকে ছহীহ বলেছেন।
তিরমিযী বলেছেন, এই হাদীস হাসান ও ছহীহ এবং আমি এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই হাদীসকে ছহীহ বলেছেন।
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: احْتَبَسَ عَنَّا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاة عَن صَلَاة الصُّبْح حَتَّى كدنا نتراءى عين الشَّمْس فَخرج سَرِيعا فثوب بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَجَوَّزَ فِي صَلَاتِهِ فَلَمَّا سَلَّمَ دَعَا بِصَوْتِهِ فَقَالَ لَنَا عَلَى مَصَافِّكُمْ كَمَا أَنْتُمْ ثُمَّ انْفَتَلَ إِلَيْنَا ثُمَّ قَالَ أَمَا إِنِّي سَأُحَدِّثُكُمْ مَا حَبَسَنِي عَنْكُمُ الْغَدَاةَ إِنِّي قُمْتُ مِنَ اللَّيْلِ فَتَوَضَّأْتُ وَصَلَّيْتُ مَا قُدِّرَ لِي فَنَعَسْتُ فِي صَلَاتِي حَتَّى اسْتَثْقَلْتُ فَإِذَا أَنَا بِرَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ قُلْتُ لَبَّيْكَ رَبِّ قَالَ فِيمَ يخْتَصم الْمَلأ الْأَعْلَى قلت لَا أَدْرِي رب قَالَهَا ثَلَاثًا قَالَ فَرَأَيْتُهُ وَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَ أَنَامِلِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَتَجَلَّى لِي كُلُّ شَيْءٍ وَعَرَفْتُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ قُلْتُ لَبَّيْكَ رَبِّ قَالَ فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلأ الْأَعْلَى قلت فِي الْكَفَّارَات قَالَ مَا هُنَّ قُلْتُ مَشْيُ الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ وَالْجُلُوسُ فِي الْمَسَاجِد بَعْدَ الصَّلَوَاتِ وَإِسْبَاغُ الْوَضُوءِ حِينَ الْكَرِيهَاتِ قَالَ ثُمَّ فِيمَ؟ قُلْتُ: فِي الدَّرَجَاتِ. قَالَ: وَمَا هن؟ إطْعَام الطَّعَام ولين الْكَلَام وَالصَّلَاة وَالنَّاس نيام. ثمَّ قَالَ: سل قل اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةً قوم فتوفني غير مفتون أَسأَلك حَبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يَحْبُكُ وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُنِي إِلَى حبك . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا حَقٌّ فَادْرُسُوهَا ثُمَّ تَعَلَّمُوهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَسَأَلْتُ مُحَمَّد ابْن إِسْمَاعِيل عَن هَذَا الحَدِيث فَقَالَ: هَذَا حَدِيث صَحِيح
হাদীসের ব্যাখ্যা:
(খাবার খাওয়ানো)। তিনি সাধারণভাবে খাবার খাওয়ানোর হুকুম দিয়েছেন। এর দ্বারা ব্যাপকতা বোঝা যায়। খাদ্যবস্তুরও ব্যাপকতা এবং খাদ্য গ্রহণকারীরও ব্যাপকতা। অর্থাৎ আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলকে খাওয়াও। প্রতিবেশীকেও খাদ্যদান করো এবং দূরের ব্যক্তিকেও। ক্ষুধার্তকেও খাদ্যদান করো এবং সচ্ছল ব্যক্তিকেও। এটা ভিন্ন কথা যে, অভাবগ্রস্ত ও ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর গুরুত্ব বেশি। অভাব-অনটনের সময় খাদ্যদানের প্রতি আলাদাভাবে উৎসাহও দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ
'অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা।' (সূরা বালাদ, আয়াত ১৪)
আরও ইরশাদ হয়েছে-
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
'তারা আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকীন, এতিম ও বন্দীদেরকে খাবার দান করে’। ( সূরা দাহর, আয়াত ৮)
এমনিভাবে আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হকও অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই খাদ্যদানের ক্ষেত্রেও তারা অবশ্যই অগ্রগণ্য হবে। কিন্তু খাদ্যদানের কাজ এদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা হবে সকলের জন্যই অবারিত।
খাবার খাওয়ানো দ্বারা যে কেবল ক্ষুধা নিবারণ হয় তাই নয়; বরং এটা পারস্পরিক মহব্বত ও ভালোবাসারও নিদর্শন। তাই এটা সকলের জন্যই অবারিত থাকা উচিত। ইসলামে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার খাওয়ানোর দ্বারা যেহেতু পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, তাই খাওয়ানোর ভেতর সকলকেই শরীক রাখা উচিত।
অন্নদান করা ব্যক্তির উদারতা ও বদান্যতারও পরিচায়ক। এটা এক মহৎ গুণ। এ গুণ ইসলামের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ চারিত্রিক শিক্ষা। তাই অন্নদানকে ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যখন যাকে পাওয়া যায় তাকেই নিজ খাবারে শরীক রাখা উচিত।
তাছাড়া অন্নদান করাটা সহমর্মিতারও প্রকাশ। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করাও ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা। তাই ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর প্রতি বিশেষভার লক্ষ রাখা উচিত, সে ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যেই হোক না কেন। সে যদি অনাত্মীয়ও হয়, এমনকি অমুসলিমও যদি হয়, তবুও তার ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করা ঈমানের দাবি। বরং পশু-পাখির ক্ষুধা নিবারণ করাও অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ।
কাকে খাওয়ানো হবে তা যেমন ব্যাপক, তেমনি কী খাওয়ানো হবে তাও ব্যাপক ও সাধারণভাবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এটা নির্ভর করে যে খাওয়াবে তার সামর্থ্যের উপর। সে যা পারে তাই খাওয়াবে। খাওয়ানোর ছাওয়াব পাওয়ার জন্য দামি খাবার খাওয়ানো বা মুখরোচক খাবার খাওয়ানোর শর্ত নেই। নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যা খাওয়ানো হবে তাতেই ছাওয়াব পাওয়া যাবে এবং তা দ্বারাই এ হাদীছের আদেশ পালন করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। এ কারণেই কোনও খাবারকে তুচ্ছ মনে করতে নেই। খুব সাধারণ খাবার বলে এমন মনে করতে নেই যে, এটা আবার কেমনে খাওয়াব। ব্যক্তির সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাই বড় কথা। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে অতি সামান্য খাবার বা অতি অল্পদামের খাবার খাওয়ানোও আল্লাহ তা'আলার কাছে অনেক মূল্য রাখে। এমনিভাবে যাকে খাওয়ানো হবে তারও খাবারের মান ও পরিমাণের দিকে লক্ষ করা উচিত নয়। আন্তরিকতাপূর্ণ হাদিয়া হিসেবে পরম আগ্রহের সঙ্গে তা গ্রহণ করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
يا نساء المسلمات لا تحقرن جارة لجارتها، ولو فرسن شاة
‘হে মুসলিম নারীগণ! কোনও প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর জন্য তুচ্ছ মনে না করে, তা বকরির একটা পায়া হলেও’।
(সহীহ বুখারী: ২৫৬৬; সহীহ মুসলিম: ১০৩০; জামে তিরমিযী: ২১৩০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৫৯১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৫৬২; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা : ১১৩২৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬৪১)
তাঁর তৃতীয় হুকুম হল- وَصِلُوا الْأَرْحَامَ (আত্মীয়তা রক্ষা করো)। যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে, তা পিতার দিক থেকে হোক বা মায়ের দিক থেকে, তারা সকলেই আত্মীয়। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করা জরুরি। এটা ফরয। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ
'এবং আল্লাহকে ভয় করো, যার অছিলা দিয়ে তোমরা একে অন্যের কাছে (নিজেদের হক) চেয়ে থাক। এবং আত্মীয়দের (অধিকার খর্ব করা)-কে ভয় করো’। ( সূরা নিসা, আয়াত ১)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার আত্মীয়তা রক্ষা করে’। (সহীহ বুখারী: ৬১৩৮)
আত্মীয়তা রক্ষার অর্থ তাদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করা- কথায়ও এবং কাজেও। তাদের খোঁজখবর নেওয়া। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ও তাদেরকে দেখতে যাওয়া। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ও তাদের কল্যাণসাধনের চেষ্টা করা। এসব না করার দ্বারা আত্মীয়তা ছিন্ন করা হয়।
আত্মীয়তা ছিন্ন করা কঠিন পাপ। আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। তার জন্য আখিরাতের শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়াবী শাস্তিরও সতর্কবাণী রয়েছেন নারী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ تَعَالَى لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِى الدُّنْيَا - مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِى الآخِرَةِ - مِثْلُ الْبَغْىِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ
'জুলুম করা ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার চেয়ে অন্য কোনও গুনাহ এর বেশি উপযুক্ত নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য আখিরাতে যে শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন তার সঙ্গে দুনিয়ায়ও তাকে নগদ শাস্তি দান করবেন।'
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৯০২; জামে তিরমিযী: ২৫১১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২১১; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী : ৯২১; মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ১৪৮৯; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৬৭; মুসনাদুল বাযযার: ৩৬৭৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৫৯৯৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৫৫; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৩৫৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ২১০৮২ )
আত্মীয়তা রক্ষা করা অনেক বড় পুণ্যের কাজ। আখিরাত তো বটেই, দুনিয়ায়ও এর সুফল পাওয়া যায়। এর দ্বারা রিযিকে বরকত হয়। আয়ু বাড়ে। অশুভ মৃত্যু থেকে আত্মরক্ষা হয়। সুতরাং অতি আগ্রহের সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদেশটি পালন করা উচিত। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُمَدَّ لَهُ فِي عُمْرِهِ ، وَيُوَسَّعَ لَهُ فِي رِزْقِهِ ، وَيُدْفَعَ عَنْهُ مِيتَةُ السُّوءِ ، فَلْيَتَّقِ اللَّهَ وَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
'যে ব্যক্তি কামনা করে তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, তার রিযিক প্রশস্ত করা হোক এবং তার থেকে অপমৃত্যু রোধ করা হোক, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তার আত্মীয়তা রক্ষা করে।' (মুসনাদে আহমাদ: ১২১৩; মুসনাদুল বাযযার: ৬৯৩)
(এবং মানুষ যখন ঘুমে থাকে তখন নামায পড়া)। অর্থাৎ নফল নামায পড়ো। এর দ্বারা বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের নামায বোঝানো হয়েছে। এটা আল্লাহ তা'আলার বিশিষ্ট মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রশংসায় বলেন-
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا
'(রাতের বেলা) তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং তারা নিজ প্রতিপালককে ভয় ও আশার (মিশ্রিত অনুভূতির) সাথে ডাকে’।(সূরা সাজদা, আয়াত ১৬)
বিছানা পৃথক হওয়ার মানে ঘুম থেকে জেগে নফল নামাযে রত হওয়া। তাহাজ্জুদ নামাযের বিপুল ফযীলত। তাই বিভিন্ন হাদীছে এ নামাযের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى، وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، رَحِمَ اللَّهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ، وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ
'আল্লাহ ওই ব্যক্তির প্রতি রহমত করুন, যে রাত্রে উঠে নামায পড়ে এবং স্ত্রীকে জাগায় আর সেও নামায পড়ে। যদি সে জাগতে না চায়, তবে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ওই নারীর প্রতি রহমত করুন, যে রাত্রে উঠে নামায পড়ে এবং স্বামীকে জাগায় আর সেও নামায পড়ে। যদি সে জাগতে না চায়, তবে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়’। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৫০; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ: ৭৩৬২: মুসনাদুল বাযযার: ৮৯২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ১৮৪৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৫৬৭; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ১১৬৪)
আরেক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ينزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر يقول: من يدعوني، فأستجيب له من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فأغفر له
'আমাদের মহান প্রতিপালক প্রত্যেক রাতের যখন এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তখন বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে তার প্রার্থিত বিষয় দেব? কে আছে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব’?
(সহীহ বুখারী : ১১৪৫; সহীহ মুসলিম: ৭৫৮; সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৩৩; জামে' তিরমিযী: ৪৪৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৩৬৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৭২০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ২১০৬; মুসনাদে আহমাদ: ৭৫০১; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২১২; তাবারানী, আলা মু'জামুল কাবীর : ৪৫৫৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৪৬৫২)
কোনও কোনও বর্ণনায় অর্ধরাতের পরও এরূপ আহ্বানের কথা বর্ণিত আছে। মোটকথা রাতে ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা অনেক বড় ফযীলতের আমল। হিম্মতের সঙ্গে এ আমল করা চাই। যাদের কাছে এটা বেশি কঠিন মনে হয় তারা অন্ততপক্ষে ঘুমের আগে দু'-চার রাকাত নফল পড়ে নিতে পারে। এটা পুরোপুরি তাহাজ্জুদের মতো না হলেও তার এক রকম বিকল্প হতে পারে। উলামায়ে কেরাম এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যকে খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। কাজেই আপন সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে খাবার খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহ রাখতে হবে।
খ. গোটা রাত ঘুম ও আলস্যে না কাটিয়ে কিছুটা সময় ইবাদত-বন্দেগীও করা উচিত, বিশেষত শেষরাতে।
أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ
'অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা।' (সূরা বালাদ, আয়াত ১৪)
আরও ইরশাদ হয়েছে-
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
'তারা আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকীন, এতিম ও বন্দীদেরকে খাবার দান করে’। ( সূরা দাহর, আয়াত ৮)
এমনিভাবে আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হকও অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই খাদ্যদানের ক্ষেত্রেও তারা অবশ্যই অগ্রগণ্য হবে। কিন্তু খাদ্যদানের কাজ এদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা হবে সকলের জন্যই অবারিত।
খাবার খাওয়ানো দ্বারা যে কেবল ক্ষুধা নিবারণ হয় তাই নয়; বরং এটা পারস্পরিক মহব্বত ও ভালোবাসারও নিদর্শন। তাই এটা সকলের জন্যই অবারিত থাকা উচিত। ইসলামে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার খাওয়ানোর দ্বারা যেহেতু পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, তাই খাওয়ানোর ভেতর সকলকেই শরীক রাখা উচিত।
অন্নদান করা ব্যক্তির উদারতা ও বদান্যতারও পরিচায়ক। এটা এক মহৎ গুণ। এ গুণ ইসলামের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ চারিত্রিক শিক্ষা। তাই অন্নদানকে ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যখন যাকে পাওয়া যায় তাকেই নিজ খাবারে শরীক রাখা উচিত।
তাছাড়া অন্নদান করাটা সহমর্মিতারও প্রকাশ। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করাও ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা। তাই ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর প্রতি বিশেষভার লক্ষ রাখা উচিত, সে ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যেই হোক না কেন। সে যদি অনাত্মীয়ও হয়, এমনকি অমুসলিমও যদি হয়, তবুও তার ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করা ঈমানের দাবি। বরং পশু-পাখির ক্ষুধা নিবারণ করাও অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ।
কাকে খাওয়ানো হবে তা যেমন ব্যাপক, তেমনি কী খাওয়ানো হবে তাও ব্যাপক ও সাধারণভাবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এটা নির্ভর করে যে খাওয়াবে তার সামর্থ্যের উপর। সে যা পারে তাই খাওয়াবে। খাওয়ানোর ছাওয়াব পাওয়ার জন্য দামি খাবার খাওয়ানো বা মুখরোচক খাবার খাওয়ানোর শর্ত নেই। নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যা খাওয়ানো হবে তাতেই ছাওয়াব পাওয়া যাবে এবং তা দ্বারাই এ হাদীছের আদেশ পালন করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। এ কারণেই কোনও খাবারকে তুচ্ছ মনে করতে নেই। খুব সাধারণ খাবার বলে এমন মনে করতে নেই যে, এটা আবার কেমনে খাওয়াব। ব্যক্তির সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাই বড় কথা। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে অতি সামান্য খাবার বা অতি অল্পদামের খাবার খাওয়ানোও আল্লাহ তা'আলার কাছে অনেক মূল্য রাখে। এমনিভাবে যাকে খাওয়ানো হবে তারও খাবারের মান ও পরিমাণের দিকে লক্ষ করা উচিত নয়। আন্তরিকতাপূর্ণ হাদিয়া হিসেবে পরম আগ্রহের সঙ্গে তা গ্রহণ করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
يا نساء المسلمات لا تحقرن جارة لجارتها، ولو فرسن شاة
‘হে মুসলিম নারীগণ! কোনও প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর জন্য তুচ্ছ মনে না করে, তা বকরির একটা পায়া হলেও’।
(সহীহ বুখারী: ২৫৬৬; সহীহ মুসলিম: ১০৩০; জামে তিরমিযী: ২১৩০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৫৯১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৫৬২; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা : ১১৩২৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬৪১)
তাঁর তৃতীয় হুকুম হল- وَصِلُوا الْأَرْحَامَ (আত্মীয়তা রক্ষা করো)। যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে, তা পিতার দিক থেকে হোক বা মায়ের দিক থেকে, তারা সকলেই আত্মীয়। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করা জরুরি। এটা ফরয। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ
'এবং আল্লাহকে ভয় করো, যার অছিলা দিয়ে তোমরা একে অন্যের কাছে (নিজেদের হক) চেয়ে থাক। এবং আত্মীয়দের (অধিকার খর্ব করা)-কে ভয় করো’। ( সূরা নিসা, আয়াত ১)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার আত্মীয়তা রক্ষা করে’। (সহীহ বুখারী: ৬১৩৮)
আত্মীয়তা রক্ষার অর্থ তাদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করা- কথায়ও এবং কাজেও। তাদের খোঁজখবর নেওয়া। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ও তাদেরকে দেখতে যাওয়া। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ও তাদের কল্যাণসাধনের চেষ্টা করা। এসব না করার দ্বারা আত্মীয়তা ছিন্ন করা হয়।
আত্মীয়তা ছিন্ন করা কঠিন পাপ। আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। তার জন্য আখিরাতের শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়াবী শাস্তিরও সতর্কবাণী রয়েছেন নারী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ تَعَالَى لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِى الدُّنْيَا - مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِى الآخِرَةِ - مِثْلُ الْبَغْىِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ
'জুলুম করা ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার চেয়ে অন্য কোনও গুনাহ এর বেশি উপযুক্ত নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য আখিরাতে যে শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন তার সঙ্গে দুনিয়ায়ও তাকে নগদ শাস্তি দান করবেন।'
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৯০২; জামে তিরমিযী: ২৫১১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২১১; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী : ৯২১; মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ১৪৮৯; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৬৭; মুসনাদুল বাযযার: ৩৬৭৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৫৯৯৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৫৫; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৩৫৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ২১০৮২ )
আত্মীয়তা রক্ষা করা অনেক বড় পুণ্যের কাজ। আখিরাত তো বটেই, দুনিয়ায়ও এর সুফল পাওয়া যায়। এর দ্বারা রিযিকে বরকত হয়। আয়ু বাড়ে। অশুভ মৃত্যু থেকে আত্মরক্ষা হয়। সুতরাং অতি আগ্রহের সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদেশটি পালন করা উচিত। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُمَدَّ لَهُ فِي عُمْرِهِ ، وَيُوَسَّعَ لَهُ فِي رِزْقِهِ ، وَيُدْفَعَ عَنْهُ مِيتَةُ السُّوءِ ، فَلْيَتَّقِ اللَّهَ وَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
'যে ব্যক্তি কামনা করে তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, তার রিযিক প্রশস্ত করা হোক এবং তার থেকে অপমৃত্যু রোধ করা হোক, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তার আত্মীয়তা রক্ষা করে।' (মুসনাদে আহমাদ: ১২১৩; মুসনাদুল বাযযার: ৬৯৩)
(এবং মানুষ যখন ঘুমে থাকে তখন নামায পড়া)। অর্থাৎ নফল নামায পড়ো। এর দ্বারা বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের নামায বোঝানো হয়েছে। এটা আল্লাহ তা'আলার বিশিষ্ট মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রশংসায় বলেন-
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا
'(রাতের বেলা) তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং তারা নিজ প্রতিপালককে ভয় ও আশার (মিশ্রিত অনুভূতির) সাথে ডাকে’।(সূরা সাজদা, আয়াত ১৬)
বিছানা পৃথক হওয়ার মানে ঘুম থেকে জেগে নফল নামাযে রত হওয়া। তাহাজ্জুদ নামাযের বিপুল ফযীলত। তাই বিভিন্ন হাদীছে এ নামাযের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى، وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، رَحِمَ اللَّهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ، وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ
'আল্লাহ ওই ব্যক্তির প্রতি রহমত করুন, যে রাত্রে উঠে নামায পড়ে এবং স্ত্রীকে জাগায় আর সেও নামায পড়ে। যদি সে জাগতে না চায়, তবে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ওই নারীর প্রতি রহমত করুন, যে রাত্রে উঠে নামায পড়ে এবং স্বামীকে জাগায় আর সেও নামায পড়ে। যদি সে জাগতে না চায়, তবে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়’। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৫০; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ: ৭৩৬২: মুসনাদুল বাযযার: ৮৯২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ১৮৪৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৫৬৭; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ১১৬৪)
আরেক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ينزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر يقول: من يدعوني، فأستجيب له من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فأغفر له
'আমাদের মহান প্রতিপালক প্রত্যেক রাতের যখন এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তখন বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে তার প্রার্থিত বিষয় দেব? কে আছে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব’?
(সহীহ বুখারী : ১১৪৫; সহীহ মুসলিম: ৭৫৮; সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৩৩; জামে' তিরমিযী: ৪৪৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৩৬৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৭২০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ২১০৬; মুসনাদে আহমাদ: ৭৫০১; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২১২; তাবারানী, আলা মু'জামুল কাবীর : ৪৫৫৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৪৬৫২)
কোনও কোনও বর্ণনায় অর্ধরাতের পরও এরূপ আহ্বানের কথা বর্ণিত আছে। মোটকথা রাতে ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা অনেক বড় ফযীলতের আমল। হিম্মতের সঙ্গে এ আমল করা চাই। যাদের কাছে এটা বেশি কঠিন মনে হয় তারা অন্ততপক্ষে ঘুমের আগে দু'-চার রাকাত নফল পড়ে নিতে পারে। এটা পুরোপুরি তাহাজ্জুদের মতো না হলেও তার এক রকম বিকল্প হতে পারে। উলামায়ে কেরাম এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যকে খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। কাজেই আপন সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে খাবার খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহ রাখতে হবে।
খ. গোটা রাত ঘুম ও আলস্যে না কাটিয়ে কিছুটা সময় ইবাদত-বন্দেগীও করা উচিত, বিশেষত শেষরাতে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
