মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৬৭
প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৭। হযরত আনাস (রাযিঃ)* হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছি; সুতরাং আমা প্রতি তা প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে তার সেই কাজ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। ইতোমধ্যে নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে লোকটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে নামায আদায় করল। নামায শেষে লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছি। আমার প্রতি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত দণ্ড প্রদান করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামায আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ্ পাক তোমার জন্য তোমার গুনাহ বা দণ্ড ক্ষমা করে দিয়েছেন। —বুখারী, মুসলিম

* হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাযিঃ) এর নাম-আনাস, উপনাম আবু হামযা, আবু উমাইয়া, আবু উসামা, আবু উসায়মা।
উপাধি-খাদিমু রাসূলিল্লাহ, পিতার নাম মালেক ইবনে নযর, মাতার নাম উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান।
হযরত আনাস (রাযিঃ) সর্বমোট ১২৮৬ খানা হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি ৯০/৯২/৯৩ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। প্রাগুক্ত
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فأقمه عَليّ قَالَ وَلم يسْأَله عَنهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاة قَامَ إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فأقم فِي كتاب الله قَالَ أَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ أَو قَالَ حدك

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে যে সাহাবীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, তিনি এতটাই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন যে, নিজ অপরাধকে হদ্দের উপযুক্ত গণ্য করে ফেলেন। হদ্দ বলা হয় শরী'আত প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট শাস্তি, যেমন চুরির ক্ষেত্রে হাত কাটা, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে বিবাহিত হলে পাথর মেরে হত্যা করা, অবিবাহিত হলে একশ দোররা মারা। অথচ তিনি এ পর্যায়ের পাপ করেননি।

ইমাম নববী রহ. বলেন, اصبت حدا (আমি হদ্দের উপযুক্ত অপরাধ করেছি)-এর অর্থ এমন অপরাধ, যে কারণে তা'যীর (বিচারকের বিবেচনা অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তি) আরোপিত হয়। এর দ্বারা প্রকৃত শরী'আতী হদ্দ (সুনির্দিষ্ট শাস্তি) বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। যেমন ব্যভিচারের শাস্তি মদপানের শাস্তি ইত্যাদি। কেননা এসকল শাস্তি নামায দ্বারা রহিত হয় না এবং ইমামের জন্য তা মওকুফ করাও জায়েয হয় না।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু তার উপর হদ্দ জারি করেননি; বরং তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে, নামায পড়ার দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, তাই বোঝা যাচ্ছে তার দ্বারা চূড়ান্ত পর্যায়ের গুনাহ হয়নি। তিনি তার কৃত গুনাহকে প্রকৃত অবস্থার চেয়েও কঠিনরূপে দেখেছেন নিজ অনুশোচনার তীব্রতা ও আল্লাহভীতির গভীরতার কারণে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গুনাহ সগীরা হোক বা কবীরা, কোনওটাতেই জড়ানো উচিত নয়। কেননা আল্লাহ তা ঘৃণা করেন। আর এ কারণেই নিজ দয়ায় তিনি তা মোচনের ব্যবস্থা করেছেন।

খ. যে-কোনও পাপকর্ম হয়ে যাওয়ার পর নিশ্চিন্তে বসে থাকতে নেই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার আশায় অতিদ্রুত লজ্জা ও অনুতাপের সঙ্গে তাওবা করে ফেলা চাই।

গ. পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ে যত্নবান থাকা চাই। কেননা এ নামায আমাদের পাপমোচনের ব্যবস্থাও বটে।

ঘ. এ হাদীছ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের আশান্বিত করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫৬৭ | মুসলিম বাংলা