আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল
৩৫৪৮। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) নবী কারীম (ﷺ)- এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ঐ যে খাদীজা (রাযিঃ) একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাবার দ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসাদের সু-সংবাদ দিবেন যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মুতি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার হট্টগোল; না কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।
ইসমাঈল ইবনে খলীল (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার খাদীজার বোন হালা বিনতে খুওয়ায়লিদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মনে করলেন খাদীজার অনুমতি প্রর্থনার কথা। এজন্য তিনি খুশি হয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ্, হালা (এর কি খবর)? আয়েশা (রাযিঃ) বললেন এতে আমি অভিমান করে বললাম, আপনি কি কুরাইশ বংশের লাল গণ্ডধারী এক বৃদ্ধার স্মরণ করছেন, যে অনেক আগে মৃত্যু বরণ করেছে? আল্লাহ তো আপনাকে তার চেয়ে উত্তম মহিলা দান করেছেন!
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
(খাদীজা রাযি.-এর বোন হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন)। হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাযি. ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় কন্যা হযরত যায়নাব রাযি.-এর শ্বাশুড়ি। অর্থাৎ নবী-জামাতা আবুল আস রাযি. ইবন রাবী'র মা। আবুল আস রাযি.-এর পিতার নাম রাবী' ইবন আব্দুল উয্যা। ঐতিহাসিকগণ হালাঃ বিনত খুওয়াইলিদ রাযি.-কে সাহাবীরূপে উল্লেখ করেছেন। আলোচ্য হাদীছ দ্বারাও তা অনুমিত হয়। তিনি এসে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চিনতে পারলেন। এখানে বলা হয়েছে- فعرف (খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা তাঁর স্মরণ হলো)। সাধারণত এক বোনের কন্ঠস্বরের সঙ্গে অন্য বোনের কণ্ঠস্বরের মিল থাকে। হযরত খাদীজা রাযি.-এর কন্ঠস্বরের সঙ্গে বোন হালাঃ রাযি.-এর কন্ঠস্বরের মিল ছিল। সুতরাং তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হযরত খাদীজা রাযি.-এর কথা মনে পড়ে গেল। এ কণ্ঠস্বর যে তাঁর বড় পরিচিত! হুবহু এরকম স্বর ও সুরেই যে এককালে বহুদিনের জীবনসঙ্গিনী, দুর্দিনের সমব্যথিনী হযরত খাদীজা রাযি.-ও অনুমতি চাইতেন! পুরোনো স্মৃতি তাজা হয়ে উঠল। অতীত দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল, যে দিনগুলোয় মহিয়সী আম্মাজান মনপ্রাণ উজাড় করে তাঁর খেদমতে নিয়োজিত থেকেছেন এবং নিজের সর্বস্ব তাঁর সেবাই উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং فارتاح لذلك ، فقال : اللهم هالة بنت خويلد (তিনি আনন্দোৎফুল্ল হলেন। বলে উঠলেন, ইয়া আল্লাহ! হালাঃ বিনত খুওয়ায়লিদ?)। অর্থাৎ এ যে খুওয়াইলিদের কন্যা হালাঃ! তোমরা একে অভ্যর্থনা জানাও। সম্মানজনকভাবে গ্রহণ কর। তাঁকে এ সম্মান দেখানো প্রকারান্তরে আম্মাজান খাদীজা রাযি.-এর প্রতিই সম্মানপ্রদর্শন। এভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্মানিতা জান্নাতবাসিনী স্ত্রীর সম্মানার্থে তাঁর জীবিত বোনকে সম্মান দেখালেন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. আগত অতিথিকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। খ. মরহুমা স্ত্রীর সম্মানার্থে তার জীবিত আত্মীয়-স্বজনকেও সম্মান করা উচিত।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন