মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৪- পাক-পবিত্রতার অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৪৭
২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৪৭। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের জন্য পুত্রের প্রতি পিতার ন্যায়। আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দান করি তোমরা পায়খানায় গিয়ে কিবলাকে সামনেও রাখবে না, পিছনেও রাখবে না। এছাড়া তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহার করতে বললেন এবং শুকনা গোবর মাটিতে খাওয়া হাড় ইস্তেঞ্জায় ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন। ডান হাতে ইস্তেঞ্জা করতেও বারণ করলেন। -ইবনে মাজাহ, দারেমী

* আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নিজেকে মুমিনের জন্য পিতার সমতুল্য ঘোষণা দিয়েছেন। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে পিতা সদাসর্বদা সন্তানের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানের প্রকার সাফল্য, মর্যাদা, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি সব ধরনের উন্নতির জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকেন এটা সন্তানের প্রতি পিতার অগাধ স্নেহ ও ভালবাসার কারণেই হয়ে থাকে। পিতা সন্তানের জন্য যতটুকু স্নেহশীল থাকেন দয়ালু নবী (ﷺ) তারচেয়ে শত শত গুণ স্নেহপরায়ণ ছিলেন মু'মিনদের উপর। মহানবী (ﷺ) দয়াপরবশ হয়ে মু'মিনদের জীবন চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করে গেছেন দয়ালু পিতার ন্যায়। তাই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন যে, নবী হলেন মু'মিনদের নিকট তাদের জীবনের চেয়ে অধিক প্রিয়।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ أُعَلِّمُكُمْ إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَأَمَرَ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ وَالرِّمَّةِ وَنَهَى أَنْ يَسْتَطِيبَ الرَّجُلُ بِيَمِينِهِ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা. হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ করেছেন যে, সিরিয়ার ইসিত্মঞ্জাখানাগুলো কিবলার দিকে ফিরিয়ে নির্মিত ছিল। তাঁরা তা ব্যবহারের সময় শরীর ঘুরিয়ে বসতেন, তার পরও আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এ থেকে বুঝা গেলো যে, খোলা ময়দানের মত ইসিত্মঞ্জাখানার ভেতরেও কিবলার প্রতি সম্মান দেখানো জরম্নরী এবং ওযর ব্যতীত কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করা মাকরূহ। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (আলমগিরী: ১/৫০)
এর বিপরীতে হযরত ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত হাফসার ঘরের ছাদে উঠে রসূল স.কে ইসিত্মঞ্জাখানার মধ্যে কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করতে দেখেছেন। (বুখারী-১৪৭) এ হাদীসের তুলনায় আমরা পূর্ববর্ণিত হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা.-এর হাদীসকে এ কারণে প্রাধান্য দিয়ে থাকি যে, কা’বার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে ইসিত্মঞ্জা করার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সকলের জন্য ব্যাপক। আর হযরত ইবনে উমার রা. কর্তৃক বর্ণিত রসূল স.-এর উক্ত কাজটি তাঁর ব্যক্তিগত। সুতরাং হতে পারে এটা রসূল স.-এর বৈশিষ্ট্য যা অন্যদের জন্য বৈধ নয়। অথবা এটা তিনি কোন ওযরের কারণে করেছেন। উপরন্তু হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা.-এর হাদীস অনুসরণ করলে কা’বার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩৪৭ | মুসলিম বাংলা