মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৪- পাক-পবিত্রতার অধ্যায়
হাদীস নং: ৩১৯
১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩১৯। সাহাবী হযরত বুসরা বিনতে ছাফওয়ান (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,* তোমাদের কেউ যখন পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করবে তখন সে যেন অজু করে। -মালেক, আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, দারেমী
*পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করায় অজু ভঙ্গ হওয়াব ব্যাপাবে উলামায়ে কিরামের মতভেদ রয়েছে।
(১) ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ (রহ) এর এক মতে কোনো আবরণ ছাড়া পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাদের দলীল উল্লিখিত হাদীস।
(২) ইমাম আজম আবু হানিফা (বহ) এর মতে কোনো অবস্থাতেই পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু বিনষ্ট হবে না। দলীলঃ হযরত ত্বালাক বিন আলী হতে বর্ণিত হাদীস যা নিম্নে পেশ করা হলঃ
عن طلق بن علي رضي الله عنه قال شيل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن من الرجل ذكرة بعدما يتوضأقال وهل هو إلا بضعة منه অর্থাৎ হযরত ত্বালাক ইবন আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, অজু করার পর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা সম্পর্কে। রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন- ওটাতো তার একটি টুকরো। হযরত ইমাম তাহাবী (রহ) বলেন, হযবত ত্বালক্ব (রাযিঃ)-এর হাদীস বুসরাব হাদীস হতে অধিকতর নির্ভরযোগ্য।
*পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করায় অজু ভঙ্গ হওয়াব ব্যাপাবে উলামায়ে কিরামের মতভেদ রয়েছে।
(১) ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ (রহ) এর এক মতে কোনো আবরণ ছাড়া পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাদের দলীল উল্লিখিত হাদীস।
(২) ইমাম আজম আবু হানিফা (বহ) এর মতে কোনো অবস্থাতেই পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু বিনষ্ট হবে না। দলীলঃ হযরত ত্বালাক বিন আলী হতে বর্ণিত হাদীস যা নিম্নে পেশ করা হলঃ
عن طلق بن علي رضي الله عنه قال شيل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن من الرجل ذكرة بعدما يتوضأقال وهل هو إلا بضعة منه অর্থাৎ হযরত ত্বালাক ইবন আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, অজু করার পর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা সম্পর্কে। রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন- ওটাতো তার একটি টুকরো। হযরত ইমাম তাহাবী (রহ) বলেন, হযবত ত্বালক্ব (রাযিঃ)-এর হাদীস বুসরাব হাদীস হতে অধিকতর নির্ভরযোগ্য।
وَعَن بسرة قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مَسَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه والدارمي
হাদীসের ব্যাখ্যা:
পুরুষ তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কি না সে বিষয়ে পরস্পর বিপরীত বক্তব্য সম্বলিত দু'টি হাদীস পাওয়া যায়। নিম্নে হাদীসগুলো পেশ করা হলোঃ ১. তলক ইবন আলী (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস :
عَنْ طَلْقٍ بن عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ هَلْ هُوَ الَّا مُضغةٌ منْهُ أَوْ بَضْعَةٌ مِّنْهُ رواه الترمذي وقال حديث ملازم بن عمرو عن عبد الله بن بدر أصح وأحسن وهذا الحديث أحسن شئ روى في هذا الباب
প্রখ্যাত সাহাবী তলক ইবন আলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) (এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে) ইরশাদ করেন, এটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়?"
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, এ সম্পর্কিত সকল হাদীসের মাঝে এটিই সনদ হিসাবে সর্বাধিক সুন্দর। উপরোক্ত হাদীসটি অপরাপর হাদীস গ্রন্থে কিছুটা বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ
عن طلق بن عَلَى رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ مسسْتُ ذَكَري أَوْ قَالَ الرجلُ يَمَسَّ ذَكَرَهُ فِى الصَّلوة أعلَيْهِ وَصَوْهُ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَا إِنَّمَا هُوَ بضعَةٌ مِّنْهُ . أخرجه الخمسة وصححه ابن حبان وقال ابن المديني هو أحسن من حديث بسرة رضى الله عنها
খ. তল্ক ইবন আলী (রা) বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করল নামাযে রত থাকা অবস্থায় আমি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে বা (বর্ণনাকারী সন্দেহ) কোন লোক তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তাকে পুনরায় অযূ করতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা) তার জবাবে বললেন, না, সেটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়।
২. বুসরাহ বিনত সাফওয়ান (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ رَضِى اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِي ﷺ قَالَ مَنْ مس ذكرهُ فَلَا يُصَلِّ حَتَّى يَوضا قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح
বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে সে যেন অযূ করা ব্যতীত নামায না পড়ে।
সমপর্যায়ের দু'টি হাদীসে বৈপরিত্য পরিদৃষ্ট হলে তার সমাধানের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে :
ক. এ পর্যায়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ সাহাবী তলক (রা)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আমল করেছেন । এমন কি ইমাম তাহাভী (র) তো এ পর্যন্ত দাবী করেছেন যে, এ ক্ষেত্রে অযূ ওয়াজিব হওয়ার রায় একমাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) প্রদান করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আলী, সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস, আবূ মূসা আশ'আরী, আম্মার ইবন ইয়াসির, হুযায়ফাহ, আনাস ও ইমরান ইবন হুসাইন (রা) প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবী লজ্জাস্থান স্পর্শ করাকে অযূ ভঙ্গকারী বলে গণ্য করেন নি।
খ. কিয়াস দ্বারাও হানাফী মাযহাবের প্রাধান্য সম্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে একটি কিয়াস তো নবী করীম (সা) স্বয়ং করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে তোমার শরীরের একটি অঙ্গ নয়? অর্থাৎ শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ স্পর্শ করলে যেমন অযূ ভঙ্গের কোন প্রশ্ন উদয় হয় না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণেও অযূ নষ্ট হবে না। উলামায়ে কিরাম এক্ষেত্রে আরো একাধিক কিয়াস করেছেন। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত কিয়াসটি লক্ষণীয়, মলমূত্র নাপাক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো হাতে লাগলে অযূ নষ্ট হয় না। তাহলে নিজ লজ্জাস্থান, যা সাধারণত পাক পবিত্ৰই থাকে, তা স্পর্শ করলে অযূ নষ্ট হবে কেন?
হানাফী বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বলেন, যদিও তল্ক ইবন আলী (রা)-এর হাদীসটি এভাবে বিভিন্নভাবে প্রাধান্য পাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সতর্কতা হিসাবে পুনরায় অযু করে নেওয়াই উত্তম। বিশেষত এক্ষেত্রে অযূ করার দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কামভাব হ্রাস পাবে এবং এর ফলে নিজ নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করার প্রবণতা কমে যাবে। হানাফীগণের পরবর্তী উলামায়ে কিরাম এভাবে আমল করা পছন্দ করেছেন।
عَنْ طَلْقٍ بن عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ هَلْ هُوَ الَّا مُضغةٌ منْهُ أَوْ بَضْعَةٌ مِّنْهُ رواه الترمذي وقال حديث ملازم بن عمرو عن عبد الله بن بدر أصح وأحسن وهذا الحديث أحسن شئ روى في هذا الباب
প্রখ্যাত সাহাবী তলক ইবন আলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) (এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে) ইরশাদ করেন, এটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়?"
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, এ সম্পর্কিত সকল হাদীসের মাঝে এটিই সনদ হিসাবে সর্বাধিক সুন্দর। উপরোক্ত হাদীসটি অপরাপর হাদীস গ্রন্থে কিছুটা বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ
عن طلق بن عَلَى رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ مسسْتُ ذَكَري أَوْ قَالَ الرجلُ يَمَسَّ ذَكَرَهُ فِى الصَّلوة أعلَيْهِ وَصَوْهُ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَا إِنَّمَا هُوَ بضعَةٌ مِّنْهُ . أخرجه الخمسة وصححه ابن حبان وقال ابن المديني هو أحسن من حديث بسرة رضى الله عنها
খ. তল্ক ইবন আলী (রা) বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করল নামাযে রত থাকা অবস্থায় আমি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে বা (বর্ণনাকারী সন্দেহ) কোন লোক তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তাকে পুনরায় অযূ করতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা) তার জবাবে বললেন, না, সেটি তোমার শরীরের একটি অংশ বৈ আর কিছু নয়।
২. বুসরাহ বিনত সাফওয়ান (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ رَضِى اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِي ﷺ قَالَ مَنْ مس ذكرهُ فَلَا يُصَلِّ حَتَّى يَوضا قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح
বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে সে যেন অযূ করা ব্যতীত নামায না পড়ে।
সমপর্যায়ের দু'টি হাদীসে বৈপরিত্য পরিদৃষ্ট হলে তার সমাধানের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে :
ক. এ পর্যায়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ সাহাবী তলক (রা)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আমল করেছেন । এমন কি ইমাম তাহাভী (র) তো এ পর্যন্ত দাবী করেছেন যে, এ ক্ষেত্রে অযূ ওয়াজিব হওয়ার রায় একমাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) প্রদান করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আলী, সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস, আবূ মূসা আশ'আরী, আম্মার ইবন ইয়াসির, হুযায়ফাহ, আনাস ও ইমরান ইবন হুসাইন (রা) প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবী লজ্জাস্থান স্পর্শ করাকে অযূ ভঙ্গকারী বলে গণ্য করেন নি।
খ. কিয়াস দ্বারাও হানাফী মাযহাবের প্রাধান্য সম্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে একটি কিয়াস তো নবী করীম (সা) স্বয়ং করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে তোমার শরীরের একটি অঙ্গ নয়? অর্থাৎ শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ স্পর্শ করলে যেমন অযূ ভঙ্গের কোন প্রশ্ন উদয় হয় না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করার কারণেও অযূ নষ্ট হবে না। উলামায়ে কিরাম এক্ষেত্রে আরো একাধিক কিয়াস করেছেন। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত কিয়াসটি লক্ষণীয়, মলমূত্র নাপাক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো হাতে লাগলে অযূ নষ্ট হয় না। তাহলে নিজ লজ্জাস্থান, যা সাধারণত পাক পবিত্ৰই থাকে, তা স্পর্শ করলে অযূ নষ্ট হবে কেন?
হানাফী বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বলেন, যদিও তল্ক ইবন আলী (রা)-এর হাদীসটি এভাবে বিভিন্নভাবে প্রাধান্য পাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সতর্কতা হিসাবে পুনরায় অযু করে নেওয়াই উত্তম। বিশেষত এক্ষেত্রে অযূ করার দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কামভাব হ্রাস পাবে এবং এর ফলে নিজ নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ করার প্রবণতা কমে যাবে। হানাফীগণের পরবর্তী উলামায়ে কিরাম এভাবে আমল করা পছন্দ করেছেন।
