মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩- ইলমের অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৯
প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৯। হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাহনটি চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, আমাকে একটি বাহনের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বললেন, এখন তো আমার নিকট কোন বাহন নেই। তখন এক লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাকে একজন লোকের কথা বলতে পারি, যে তাকে বাহনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কেউ কোন সৎকাজের পথ দেখিয়ে দিলে সৎকাজ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব তার আমলনামায় লিখিত হয়। -মুসলিম
الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
عَن أبي مَسْعُود الْأَنْصَارِيِّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي أُبْدِعَ بِي فَاحْمِلْنِي فَقَالَ مَا عِنْدِي فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا أَدُلُّهُ عَلَى مَنْ يَحْمِلُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مثل أجر فَاعله» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে জানানো হয়েছে, কেউ যদি কাউকে কোনও ভালো কাজের কথা বলে দেয়, তবে সে ব্যক্তি কাজটি করার দ্বারা যে ছাওয়াব পাবে, অনুরূপ ছাওয়াব ওই ব্যক্তিও পারে যে তাকে বলে দিল। যেমন, কোথাও একটি মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। মসজিদটির কাজ শেষ করার জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন। এক ব্যক্তির একান্ত ইচ্ছা মসজিদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করবে। কিন্তু তার সে সামর্থ্য নেই। এ অবস্থায় সে যদি কোনও সামর্থ্যবান ব্যক্তির কাছে গিয়ে মসজিদটির প্রয়োজন সম্পর্কে জানায় আর তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে ব্যক্তি মসজিদে দান করে, তবে দান করার দ্বারা সে যে ছাওয়াব পাবে, অনুরূপ ছাওয়াব ওই ব্যক্তির আমলনামায়ও লেখা হবে, যে তাকে উদ্বুদ্ধ করল। এমনিভাবে কোনও ইয়াতীম, বিধবা, আর্ত ও অনাথ ব্যক্তির সাহায্য করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি নিজে অসমর্থ হয়েও তাদেরকে সাহায্য করার ছাওয়াব পেতে পারে, যদি সে কোনও সামর্থ্যবানকে তাদের সাহায্য করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। তাতে সাহায্যকারী ব্যক্তির ছাওয়াব কিছুমাত্র কমবে না।

উৎসাহদাতা ও উদ্বুদ্ধকারী ব্যক্তিকে কাজটি সম্পাদনকারীর সমান ছাওয়াব দেবেন, না কম, নাকি বেশি তা আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা। আল্লাহ তা'আলার ভান্ডারে কোনওকিছুর কমতি নেই। তিনি বান্দার সঙ্গে আচরণ করেন বান্দার ইখলাস অনুযায়ী। এটাও অসম্ভব নয় যে, ইখলাস না থাকার কারণে কার্যসম্পাদনকারী ব্যক্তি কোনও ছাওয়াব পেল না, অথচ ইখলাস থাকার কারণে উৎসাহদাতা পূর্ণ ছাওয়াব পেয়ে গেল। আল্লাহ তা'আলা তো কেবল নিয়তের কারণেও ছাওয়াব দিয়ে থাকেন। যেমন এক হাদীছে আছে-
وَعَبدٍ رَزَقَهُ اللهُ عِلْمًا, وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً, فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ, يَقُولُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلاَنٍ, فَهُوَ بِنِيَّتِهِ, فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ
‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহ ইলম দান করেছেন কিন্তু মাল দান করেননি, আর সে খালেস নিয়তে কামনা করে- যদি আমার কাছে মাল থাকত তাহলে আমিও অমুকের মতো কাজ করতাম (নেক কাজে খরচ করতাম), তো এ ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী ছাওয়াব পাবে। সে এবং খরচকারী মালদার ব্যক্তি সমান ছাওয়াবের অধিকারী হবে।' (জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩২৫)

এ হাদীছে স্পষ্টভাবেই উভয়ের ছাওয়াব সমান বলা হয়েছে। এ সমতার কারণ উভয়ের ইখলাস। আলোচ্য হাদীছ দ্বারাও বাহ্যত উভয়ে সমান ছাওয়াব পাবে বলেই বোঝা যায়। সাহায্যদাতা ও তার উৎসাহদাতা উভয়ে সমান ইখলাসের অধিকারী হলে এটাই স্বাভাবিক যে, তারা সমপরিমাণ ছাওয়াবের অধিকারী হবে। এটা আল্লাহ তা'আলার খাস রহমত যে, গরীব ও সামর্থ্যহীন লোকদের জন্যও তিনি নেকী পাওয়ার দরজা খোলা রেখেছেন। সামর্থ্যবান ব্যক্তি নেকী লাভ করতে পারে ইখলাসের সঙ্গে অর্থ ব্যয় করে, আর সামর্থ্যহীন ব্যক্তি তা পেতে পারে ইখলাসের সঙ্গে উৎসাহদানের মাধ্যমে। অবশ্য অর্থব্যয় যেমন একটি কাজ, তেমনি উৎসাহ দান করাও একটি কাজই বটে। এমনিভাবে অভাবী ব্যক্তিকে সামর্থ্যবান দাতার খোঁজখবর দেওয়াও একটি কাজ। তাই বলা যায় এ ক্ষেত্রেও ছাওয়াব হয় ইখলাসের সঙ্গে কাজ করার দ্বারা। কিন্তু উপরে যে হাদীছটি উল্লেখ করা হল সেখানে বাহ্যিক কোনও কাজও নেই। কেবল মনের আক্ষেপ ও নিয়তের দ্বারাই আল্লাহ তা'আলা কার্য সম্পাদনের ছাওয়াব দিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! ছাওয়াব দানেও আল্লাহ তা'আলার রহমত কত অবারিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যার সরাসরি কোনও ক্ষেত্রে অর্থব্যয়ের মাধ্যমে নেকী অর্জনের ক্ষমতা নেই, নেকী লাভের জন্য তার উচিত যার সে ক্ষমতা আছে তাকে সেক্ষেত্রে অর্থব্যয়ে উৎসাহ দেওয়া।

খ. কোনও অভাবগ্রস্ত বা দুঃখী ও পীড়িত ব্যক্তিকে নিজে সাহায্য করতে না পারলে অন্ততপক্ষে তাদেরকে এমন কোনও ব্যক্তির খোঁজখবর দেওয়া চাই, যে এরূপ লোকদের প্রতি দরদ রাখে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতাও করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২০৯ | মুসলিম বাংলা