আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৮১
২১১৩. নবী করীম (ﷺ) কর্তৃক মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
৩৫১০। কুতায়বা (রাহঃ) .... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) হিজরত করে আমাদের কাছে এলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ও সা‘দ ইবনে রাবী (রাযিঃ)- এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দিলেন। তিনি (সা‘দ) (রাযিঃ)) ছিলেন অধিক সম্পদশালী ব্যক্তি। সা‘দ (রাযিঃ) বললেন, সকল আনসারগণ জানেন যে, আমি তাঁদের মধ্যে অধিক বিত্তবান ব্যক্তি। আমি অচিরেই আমার ও তোমার মাঝে আমার সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিব দুই ভাগে। আমার দু’জন স্ত্রী রয়েছে; তোমার যাকে পছন্দ হয় বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত পালন শেষ হলে তুমি তাকে বিয়ে করে নিবে। আব্দুর রহমান (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহ্ আপনার পরিবার পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন। (এরপর তিনি বাজারে গিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন) বাজার থেকে মুনাফা স্বরূপ ঘি ও পনীর সাথে নিয়ে ফিরলেন।
অল্প কয়েকদিন পর তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর খেদমতে হাজির হলেন। তখন তাঁর শরীরে ও কাপড়ে হলুদ রংয়ের চিহ্ন ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাঁকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি অথবা (বলেছেন) একটি আটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ওলীমা বলা হয় ওই দাওয়াতের অনুষ্ঠানকে, যা বিবাহের পর ছেলের বাড়িতে করা হয়ে থাকে। এটা করা সুন্নত। হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বিবাহ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে হুকুম করলেন أولم ولو بشاة “তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি ছাগল দ্বারা হয়।২৯৫
ওলীমার অনুষ্ঠান যখন সুন্নত, তখন সামর্থ্য অনুযায়ী এটা করা উচিত। আর এটা যেহেতু সুন্নত, তখন করাও উচিত সুন্নতের মর্যাদা রক্ষা করে শরীআতবিরোধী কোনও কর্মকাণ্ড তাতে যুক্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। ওলীমার অনুষ্ঠান যদি শরীআতবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়, তবে তার দাওয়াত কবুল করা চাই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها ‘তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তাতে আসে।২৯৬

ওলীমার দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়। ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না। তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনও কিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। একবার হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওলীমা করা সুন্নত।

খ. সামর্থ্য অনুযায়ী ওলীমা করা উচিত।

২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২০৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১০৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৩৫১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬৮৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১০৪১০; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৫৯

২৯৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৩৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৫১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৩
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন