মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২- ঈমানের অধ্যায়
হাদীস নং: ১১৫
৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১১৫। হযরত ইবনে দায়লামী (রহ) বলেন, আমি হযরত উবাই ইবন কা'ব (রাযিঃ)-এর নিকটে এলাম এবং বললাম, তাকদীর সম্পর্কে আমার মনে কিছু প্রশ্ন উদয় হয়েছে। অতএব এ সম্বন্ধে আমাকে কিছু বলুন, হয়তো আল্লাহ তাআলা আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দিবেন। তিনি বললেন, যদি আল্লাহ পাক আসমানবাসী ও জমিনবাসী সবাইকে আযাব দেন, তো দিবেন, তাতে তিনি অত্যাচারী হবেন না। আর তিনি যদি সকলকে দয়া করেন, তা হলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের আমলের চেয়ে উত্তম হবে। অতএব তুমি যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর পথে ব্যয় কর, তা আল্লাহ পাক কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরে বিশ্বাস করবে এবং তুমি বিশ্বাস করবে, যা তোমার উপর ঘটেছে তা কখনও লঙ্ঘিত হবার নয়। আর যা তোমাকে লঙ্ঘন করেছে কিছুতেই তুমি তা পাওয়ার ছিলে না। যদি তুমি এর বিপরীত বিশ্বাসে মৃত্যুবরণ কর তবে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। ইবনে দায়লামী (রহ) বলেন, অতঃপর আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাযিঃ)-এর কাছে এলাম, তিনিও অনুরূপ বললেন। তারপর আমি হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিঃ)-এর নিকট গেলাম, তিনিও একই কথা বললেন। অবশেষে আমি হযরত যায়েদ বিন সাবেতের (রাযিঃ) নিকট এলাম, তিনি আমাকে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
وَعَنِ ابْنِ الدَّيْلَمِيِّ قَالَ: أَتَيْتُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ فَقُلْتُ لَهُ: قَدْ وَقَعَ فِي نَفْسِي شَيْء من الْقدر فَحَدثني بِشَيْء لَعَلَّ الله أَن يذهبه من قلبِي قَالَ لَو أَن الله عَذَّبَ أَهْلَ سَمَاوَاتِهِ وأَهْلَ أَرْضِهِ عَذَّبَهُمْ وَهُوَ غَيْرُ ظَالِمٍ لَهُمْ وَلَوْ رَحِمَهُمْ كَانَتْ رَحْمَتُهُ خَيْرًا لَهُمْ مِنْ أَعْمَالِهِمْ وَلَوْ أَنْفَقْتَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا قَبِلَهُ اللَّهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ وَتَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَأَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ وَلَوْ مُتَّ عَلَى غَيْرِ هَذَا لَدَخَلْتَ النَّارَ قَالَ ثُمَّ أَتَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ قَالَ ثُمَّ أَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ فَقَالَ مثل ذَلِك قَالَ ثُمَّ أَتَيْتُ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ فَحَدَّثَنِي عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
তাকদীরে বিশ্বাসের এ সুফলের প্রতি ইশারা করে বলা হয়েছে যে- জেনে রেখো, যা তোমার হাতছাড়া হয়ে গেছে, তা তুমি কখনও পাওয়ার ছিলে না। আর যা তোমার হস্তগত হয়েছে, তা তোমার কখনও হস্তচ্যুত হওয়ার ছিল না। বস্তুত তাকদীরে বিশ্বাস মানুষকে হতাশা থেকে রক্ষা করে। তাকদীরে বিশ্বাস মানুষের মনে সাহস যোগায়। তাকদীরে বিশ্বাস মানুষের অন্তর থেকে সৃষ্টির ভয়-ভীতি দূর করে। যার অন্তরে তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস থাকে, সে অহংকার-অহমিকার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ তাকদীরে বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলেরও শিক্ষা দান করে। তাকদীরে যা লেখা হয়েছে, তার বাইরে কারও কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাকদীরের বাইরে না কোনও দুশমন কোনও ক্ষতি করতে পারে, না কোনও বন্ধু কিছু উপকার করতে পারে। সুতরাং মানুষকে ভয় না করে ও মানুষের কাছে আশাবাদী না হয়ে বান্দার কর্তব্য আল্লাহরই উপর নির্ভর করা ও তাকদীরে অবিচল আস্থা রাখা।
খ. তাকদীরের কোনও পরিবর্তন নেই। তা চূড়ান্ত হয়ে আছে। তাতে যা লেখা আছে তাই হবে। তবে বেকার না থেকে কাজকর্ম করতে হবে এবং আসবাব-উপকরণ অবলম্বন করতে হবে, যেহেতু তা করা আল্লাহর হুকুম।
গ. চেষ্টার পর কাঙ্ক্ষিত বিষয় না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, যেহেতু তাকদীরে ছিল না বলে তা পাওয়া যায়নি এবং পাওয়া সম্ভবই ছিল না। এমনিভাবে আশানুরূপ ফল লাভ হলেও দর্পিত ও উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই, যেহেতু তাকদীরে ছিল বলে তা পাওয়া গেছে এবং পাওয়া যেতই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ তাকদীরে বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলেরও শিক্ষা দান করে। তাকদীরে যা লেখা হয়েছে, তার বাইরে কারও কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাকদীরের বাইরে না কোনও দুশমন কোনও ক্ষতি করতে পারে, না কোনও বন্ধু কিছু উপকার করতে পারে। সুতরাং মানুষকে ভয় না করে ও মানুষের কাছে আশাবাদী না হয়ে বান্দার কর্তব্য আল্লাহরই উপর নির্ভর করা ও তাকদীরে অবিচল আস্থা রাখা।
খ. তাকদীরের কোনও পরিবর্তন নেই। তা চূড়ান্ত হয়ে আছে। তাতে যা লেখা আছে তাই হবে। তবে বেকার না থেকে কাজকর্ম করতে হবে এবং আসবাব-উপকরণ অবলম্বন করতে হবে, যেহেতু তা করা আল্লাহর হুকুম।
গ. চেষ্টার পর কাঙ্ক্ষিত বিষয় না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, যেহেতু তাকদীরে ছিল না বলে তা পাওয়া যায়নি এবং পাওয়া সম্ভবই ছিল না। এমনিভাবে আশানুরূপ ফল লাভ হলেও দর্পিত ও উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই, যেহেতু তাকদীরে ছিল বলে তা পাওয়া গেছে এবং পাওয়া যেতই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
