আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১১৫৯
৫৪৬. কুয়ার কিনারে পা লাহগাইয়া বসা
১১৫৯. হযরত আবু মুসা আশ্‌'আরী (রাযিঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) মদিনার কোন এক খেজুর বঙে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে গেলেন। আমিও তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিলাম। যখন তিনি খেজুর বনে প্রবেশ করিলেন তখন আমি উহার দ্বারদেশে বসিয়া পড়িলাম এবং বলিলাম, আজ আমি অবশ্যই নবী করীম (ﷺ)-এর দ্বাররক্ষী হইব। অবশ্য, তিনি এজন্য আমাকে আদেশ দেন নাই। নবী করীম (ﷺ) গেলেন এবং তাঁহার প্রয়োজন চুকাইয়া কূপের কিনারে গিয়া বসিলেন। তিনি তাঁহার পায়ের গোছাদ্বয় অনাবৃত করিলেন এবং কূপের ভিতর উহা ঝুলাইয়া বসিলেন। তখন আবু বকর (রাযিঃ) আসিলেন। তিনি আমার মাধ্যমে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করিতে চাহিলেন। আমি বলিলাম, একটু দাঁড়ান আমি আপনার অনুমতি লইয়া আসিতেছি। তিনি দাঁড়াইলেন এবং আমি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে গিয়া বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আবু বকর আপনার কাছে আসিবার অনুমতি প্রার্থনা করিতেছেন। বলিলেন, তাহাকে আসিতে দাও এবং তাহাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও! তিনি আসিলেন এবং পায়ের গোছাদ্বয় অনাবৃত করিয়া পদদ্বয় কূপে ঝুলাইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ (ﷺ)-এর ডানপার্শ্বে বসিয়া পড়িলেন। অতঃপর উমর (রাযিঃ) আসিয়া অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। আমি তাহাকেও বলিলামঃ একটু থামুন, আমি আপনার জন্য অনুমতি লইয়া আসি। রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলিলেনঃ তাহাকেও অনুমতি দাও এবং তাহাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও! তিনিও আসিয়া রাসূলুল্লাহ্‌ বামপার্শ্বে বসিয়া গোছাদ্বয় অনাবৃত করিয়া পদদ্বয় কূপের ভিতর লটকাইয়া দিয়া বসিয়া পড়িলেন। তখন কূপের কিনার পূর্ণ হইয়া গেল এবং বসিবার মত স্থান আর রহিল না। অতঃপর উসমান (রাযিঃ) আসিলেন। আমি বলিলাম, আপনি একটু দাঁড়ান, আমি আপনার জন্য ভিতরে প্রবেশের অনুমতি লইয়া আসি। রাসুলুল্লাহ্‌ (ﷺ) তখন বলিলেনঃ তাহাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও- তবে ইহার সাথে তাঁহাকে বিপর্যয়ও পোহাইতে হইবে। অতঃপর তিনি ভিতরে আসিলেন কিন্তু তাহাদের সাথে বসিবার স্থান পাইলেন না। তিনি ঘুরিয়া গিয়া তাঁহাদের মুখোমুখি কূপের অপর পার্শ্বে গিয়া গোছাদ্বয় অনাবৃত করিয়া পদদ্বয় কূপের ভিতর লটকাইয়া দিয়া বসিয়া পড়িলেন। তখন আমি মনে মনে আশা করিতেছিলাম, যদি আমার ভাইও এমন সময় আসিয়া পরিতেন, এমন কি আমি তাঁহার আগমনের জন্য দু'আ করিতেছিলাম। কিন্তু তাঁহারা উঠিয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিলেন কিন্তু, ভাই আসিলেনই না।
ইবনুল মুসাইয়িব (রাহঃ) ব্লেন,উহা দ্বারা আমি এই লক্ষণ ধরিয়া নিলাম যে, তাঁহাদের কবর একত্রে হইবে এবং হযরত উসমান (রাযিঃ) একাকী থাকিবেন।
بَابُ مَنْ أَدْلَى رِجْلَيْهِ إِلَى الْبِئْرِ إِذَا جَلَسَ وَكَشَفَ عَنِ السَّاقَيْنِ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ , قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ ، عَنْ شَرِيكِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ ، عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ , قَالَ : خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا إِلَى حَائِطٍ مِنْ حَوَائِطِ الْمَدِينَةِ , لِحَاجَتِهِ ، وَخَرَجْتُ فِي أَثَرِهِ ، فَلَمَّا دَخَلَ الْحَائِطَ جَلَسْتُ عَلَى بَابِهِ ، وَقُلْتُ : لأَكُونَنَّ الْيَوْمَ بَوَّابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَلَمْ يَأْمُرْنِي ، فَذَهَبَ النَّبِيُّ فَقَضَى حَاجَتَهُ وَجَلَسَ عَلَى قُفِّ الْبِئْرِ ، وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ ، وَدَلاهُمَا فِي الْبِئْرِ ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِيَسْتَأْذِنَ عَلَيْهِ لِيَدْخُلَ ، فَقُلْتُ : كَمَا أَنْتَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ لَكَ ، فَوَقَفَ ، وَجِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَبُو بَكْرٍ يَسْتَأْذِنُ عَلَيْكَ ؟ ، فَقَالَ : " ائْذَنْ لَهُ ، وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ " ، فَدَخَلَ , فَجَاءَ عَنْ يَمِينِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلاهُمَا فِي الْبِئْرِ ، فَجَاءَ عُمَرُ ، فَقُلْتُ : كَمَا أَنْتَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ لَكَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " ائْذَنْ لَهُ ، وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ " ، فَجَاءَ عُمَرُ عَنْ يَسَارِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلاهُمَا فِي الْبِئْرِ فَامْتَلأَ الْقُفُّ ، فَلَمْ يَكُنْ فِيهِ مَجْلِسٌ ، ثُمَّ جَاءَ عُثْمَانُ ، فَقُلْتُ : كَمَا أَنْتَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ لَكَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " ائْذَنْ لَهُ ، وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ مَعَهَا بَلاءٌ يُصِيبُهُ " ، فَدَخَلَ فَلَمْ يَجِدْ مَعَهُمْ مَجْلِسًا ، فَتَحَوَّلَ حَتَّى جَاءَ مُقَابِلَهُمْ عَلَى شَفَةِ الْبِئْرِ ، فَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ ثُمَّ دَلاهُمَا فِي الْبِئْرِ ، فَجَعَلْتُ أَتَمَنَّى أَنْ يَأْتِيَ أَخٌ لِي ، وَأَدْعُو اللَّهَ أَنْ يَأْتِيَ بِهِ ، فَلَمْ يَأْتِ حَتَّى قَامُوا ، قَالَ ابْنُ الْمُسَيِّبِ : فَأَوَّلْتُ ذَلِكَ قُبُورَهُمْ ، اجْتَمَعَتْ هَا هُنَا ، وَانْفَرَدَ عُثْمَانُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোন কোন বর্ণনায় সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণিত হলেও এটি মূলত একটি দীর্ঘ হাদীছ। এতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী বি’রে আরীসে গিয়েছিলেন। বি’রে আরীস অর্থ আরীসের কুয়া। আরীস ছিল এক ইহুদির নাম। সে এ কুয়াটির মালিক ছিল। কুয়াটি ছিল কুবা মসজিদের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রাচীরঘেরা একটি বাগানের ভেতর। কুয়াটির নামে বাগানটিরও নাম হয়ে যায় বি'রে আরীস। বর্তমানে কুয়াটির কোনও চিহ্ন নেই। তার উপর দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা চলে গেছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাগানে যাওয়ার পর হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে যান এবং বাগানটির দরজায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রহরীর কাজ করতে থাকেন। তারপর সেখানে যথাক্রমে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত উছমান গনী রাযি.-ও উপস্থিত হন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের তিনজনকেই হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। সেইসঙ্গে হযরত উছমান রাযি. সম্পর্কে একটি ভবিষ্যদ্বাণীও করেন। তাতে জানান যে, তাঁকে একটি কঠিন মসিবতের সম্মুখীন হতে হবে।

হাদীছটিতে আছে, আরীস কুয়ার তীরে তাঁরা সকলেই পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। তার একদিকে বসেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ডান পাশে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও বাম পাশে হযরত উমর রাযি.। অপরদিকে তাঁদের মুখোমুখি হয়ে হযরত উছমান রাযি. একা বসেছিলেন।

বিখ্যাত তাবি'ঈ হযরত সা'ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এটা ছিল তাঁদের কবর কীভাবে হবে সেদিকে ইঙ্গিত। তাঁদের কবর এভাবেই হয়েছে। মসজিদে নববীর পাশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁর পাশাপাশি প্রথম দুই খলীফার কবর হয়েছে। হযরত উছমান গনী রাযি.-এর কবর তাঁদের থেকে আলাদা, একটু দূরে আল-বাকী' কবরস্থানে।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও হযরত উমর রাযি. যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে বসেছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে হযরত আবূ বকর রাযি. বসেছেন ডানদিকে এবং হযরত উমর রাযি. বামদিকে। এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত মেলে। অর্থাৎ দু'জনই অনেক ঘনিষ্ঠ এবং হযরত আবু বকর রাযি. সে ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। কেননা তিনি ডানদিকে আর হযরত উমর রাযি, বামদিকে। বামদিকের উপর যেমন ডানদিকে শ্রেষ্ঠত্ব, হযরত উমর রাযি.-এর উপর হযরত আবু বকর রাযি.-এর শ্রেষ্ঠত্ব সেরকমই। তারপরও তাঁরা দু'জন তাঁর সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ। তাঁর দুই হাত স্বরূপ। একজন ডানহাত, একজন বামহাত। বিভিন্ন হাদীছে দেখা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সঙ্গে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারুক রাযি.-এর নামও একত্রে উল্লেখ করতেন। বলতেন, আমি, আবূ বকর ও উমর।

এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উছমান রাযি, সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, তিনি কোনও কঠিন বিপদে পড়বেন। কী সে কঠিন বিপদ? অন্য হাদীছে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত-
ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِتْنَة ، فَقَالَ : يُقْتَلُ هذَا فِيْهَا مَظْلُومًا لِعُثْمَانَ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ফিতনার কথা বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বলেন, সে ফিতনায় ওই ব্যক্তি মজলুমরূপে নিহত হবে। তিনি এটা বলেছিলেন উছমানকে লক্ষ্য করে।’ (জামে' তিরমিযী: ৩৭০৮)

হযরত উছমান রাযি.-ও বুঝতে পেরেছিলেন তা কোনও কঠিন বিপদই হবে। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে কোনও কঠিন বিপদে পড়ার কথা জানালেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আল্লাহ তা'আলাই সাহায্যকারী। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে ধৈর্যধারণের তাওফীক দিয়ো।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়। হযরত উছমান রাযি.-এর খেলাফতকালের শেষদিকে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দানা বাঁধে। সে বিদ্রোহ ছিল আব্দুল্লাহ ইবন সাবা নামক এক দুর্বৃত্তকারীর ষড়যন্ত্রের ফল। লোকটি নানা মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তার প্ররোচনায় মানুষ তাঁর অপসারণের দাবি তোলে। অথচ তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ ও সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত খলীফা। তিনি ন্যায়ের উপর ছিলেন। তিনি যে ন্যায়ের উপর থাকবেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ভবিষ্যদ্বাণীও করে গিয়েছিলেন।

হযরত মুররা ইবন কা'ব রাযি. হযরত উছমান রাযি.-এর শাহাদাতের পর এরকম এক হাদীছ বর্ণনা করেন। তাতে আছে-
وَذَكَرَ الْفِتَنَ فَقَرَّبَهَا، فَمَرَّ رَجُلٌ مُقَنَّعٌ فِي ثَوْب فَقَالَ : هَذَا يَوْمَئِذٍ عَلَى الْهُدَى، فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ قَالَ : فَأَقْبَلْتُ عَلَيْهِ بِوَجْهِهِ، فَقُلْتُ : هَذَا؟ قَالَ : نَعَمْ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ফিতনার কথা উল্লেখ করেন এবং সেগুলো নিকটবর্তী বলে জানান। এ সময় একটি কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এই ব্যক্তি সেদিন হিদায়াতের উপর থাকবে। আমি উঠে তার কাছে গেলাম। দেখি তিনি উছমান ইবন আফফান। আমি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম, ইনি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ। (জামে' তিরমিযী: ৩৭০৪)

বস্তুত চক্রান্তকারীরাও জানত তিনি হিদায়াতের উপর আছেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যই ছিল ফিতনা সৃষ্টি করা। সে লক্ষ্যে তারা তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করাতে থাকে। তাতে তারা সফলও হয়ে যায়। ক্রমে মিশর, বসরা, কূফা প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। পরিশেষে হিজরী ৩৫ সনে ৪ হাজার বিদ্রোহী মদীনা মুনাউওয়ারায় এসে সমবেত হয়। তারা হযরত উছমান রাযি.-কে তাঁর গৃহে অবরুদ্ধ করে ফেলে। দীর্ঘ ২ মাস ২০ দিন তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন। এ সময়ে সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই তাঁর কাছে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করার অনুমতি চান। কিন্তু মদীনা মুনাউওয়ারায় রক্তপাত হবে, এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। পরিশেষে যুলহিজ্জা মাসের ১২ তারিখ জুমু'আর দিন তারা তাঁর উপর হামলা চালায়। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় তারা তাঁকে শহীদ করে দেয়। এভাবে তিনি নিজ রক্তের বিনিময়ে এ পবিত্র নগরকে ব্যাপক রক্তপাত থেকে হেফাজত করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা আমরা যা-কিছু জানতে পারি তার কয়েকটি নিম্নরূপ-

ক. সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ।

খ. হযরত উমর রাযি. এ উম্মতের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

গ. হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তাও এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়।

ঘ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেককেই তাদের জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত উছমান গনী রাযি. তাদের অন্যতম।

ঙ. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি।

চ. কেউ কোনও কল্যাণ ও বরকতপূর্ণ বিষয় অর্জন করতে পারলে নিজ ভাইয়ের জন্যও আকাঙ্ক্ষা থাকা চাই যাতে তারও তা অর্জিত হয়।

ছ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তার প্রত্যেকটি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এটাও তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার একটি দলীল।

জ. হযরত উছমান রাযি. কতটা শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল ব্যক্তি ছিলেন, এ হাদীছ দ্বারা আমরা তাও জানতে পারি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ১১৫৯ | মুসলিম বাংলা