আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৯৯৩
৪৫১- সালাম বিনিময়ের ফযীলাত।
৯৯৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট দিয়া যাইতেছিল, তিনি তখন মজলিসে উপবিষ্ট ছিলেন। সে ব্যক্তি বলিলঃ আস্‌সালামু আলাইকুম। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, (এ ব্যক্তির) দশটি নেকী হইল। অতঃপর অপর এক ব্যক্তি ঐ পথ দিয়া অতিক্রম করিল। সে বলিলঃ আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ (অর্থাৎ তোমার উপর শান্তি এবং আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হউক) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ (এ ব্যক্তির) বিশটি নেকী হইল। অতঃপর অপর এক ব্যক্তি এই পথ দিয়া অতিক্রম করিল। সে বলিলঃ আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু! রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ এ ব্যক্তি ত্রিশটি নেকী পাইল। এমন সময় এক ব্যক্তি মজলিস হইতে উঠিয়া চলিয়া গেলঃ আর সালাম করিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ তোমাদের সাথী কত তাড়াতাড়িই না ভুলিয়া গেল (যে সালামের কি মাহাত্ম্য?) যখন কোন ব্যক্তি মজলিসে আসে তখন তাহার উচিত সালাম দেওয়া। তারপর তাহার যদি মজলিসে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয় তবে সে বসিবে, আবার সে যখন চলিয়া যাইবে তখনও তাহার সালাম দেওয়া উচিত। আগমন ও প্রস্থানের এ উভয় সালামের মধ্যে কোনটাই কোনটির চাইতে বেশী বা কম নহে। (অর্থাৎ উভয় সালামেরই সফল সাওয়াব ও গুরুত্ব রহিয়াছে।)
بَابُ فَضْلِ السَّلامِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ‏:‏ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ زَيْدٍ التَّيْمِيِّ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَجُلاً مَرَّ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِي مَجْلِسٍ فَقَالَ‏:‏ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالَ‏:‏ عَشْرُ حَسَنَاتٍ، فَمَرَّ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ‏:‏ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، فَقَالَ‏:‏ عِشْرُونَ حَسَنَةً، فَمَرَّ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ‏:‏ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، فَقَالَ‏:‏ ثَلاَثُونَ حَسَنَةً، فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْمَجْلِسِ وَلَمْ يُسَلِّمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ مَا أَوْشَكَ مَا نَسِيَ صَاحِبُكُمْ، إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الْمَجْلِسَ فَلْيُسَلِّمْ، فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يَجْلِسَ فَلْيَجْلِسْ، وَإِذَا قَامَ فَلْيُسَلِّمْ، مَا الأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الآخِرَةِ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্য তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া। সালামের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, তুমি আমার দিক থেকে নিশ্চিন্ত থাকো। আমার দ্বারা তোমার কোনও ক্ষতি হবে না। কোনও মজলিসে পৌছে সালাম দিলে মজলিসে উপস্থিত লোকজন আশ্বস্ত হতে পারে যে, এই আগন্তুকের পক্ষ থেকে তাদের কোনও ভয় নেই। ফলে তারা নিশ্চিন্তমনে তাকে গ্রহণ করে নিতে পারে। এজন্যই মজলিসে পৌঁছে সালাম দিতে হয়। তাদের এই একই নিরাপত্তা ওই ব্যক্তির বিদায় গ্রহণকালেও পাওয়া দরকার। কেননা অনেক সময় মজলিসে আগন্তুক ব্যক্তি মজলিসের খবরাখবর জেনে যায়। তারপর সে ওই মজলিসের কথা অন্যত্র প্রচার করে কিংবা মজলিসের লোকজন সম্পর্কে অন্যদের অবহিত করে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। কাজেই এ ব্যক্তি বিদায় নেওয়ার পর যে তাদের এরকম কোনও ক্ষতি করবে না, সে বিষয়ে তাদের নিশ্চিন্ত হওয়া দরকার। সালামের দ্বারা বিদায় নিলে তারা সে নিশ্চিন্ততা লাভ করতে পারে। কাজেই বিদায় গ্রহণকালেও সালাম দেওয়া উচিত। এজন্যই হাদীছটিতে বলা হয়েছে, শেষের সালাম অপেক্ষা প্রথমবারের সালাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ নিরাপত্তা ও নিরুদ্বেগের ব্যাপারে প্রথমবার সালাম দেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বিদায়কালীন সালামও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। সে সালামের গুরুত্ব প্রথমবারের তুলনায় মোটেই কম নয়। তাই সাক্ষাৎকালে যেমন সালাম দেওয়া হয়েছে, বিদায়কালেও তেমনি সালাম দেওয়া উচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সালাম দেওয়ার দ্বারা সালামদাতার পক্ষ থেকে কোনওরূপ ক্ষতি ও অনিষ্ট সাধিত না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। তাই সালামদাতার কর্তব্য সালামের এ অন্তর্নিহিত আবেদন সম্পর্কে সচেতন থাকা।

খ. মজলিসে উপস্থিত হওয়ার সময় বা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎকালে যেমন সালাম দেওয়া হয়, তেমনি সালাম দিতে হবে বিদায়কালেও।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ৯৯৩ | মুসলিম বাংলা