আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৯৭৯
৪৪৫- হাতে চুমা দেয়া।
৯৭৯. হযরত ইব্‌ন উমর (রাযিঃ) বলেন, আমরা একটি যুদ্ধে ছিলাম। (প্রচণ্ড যুদ্ধের মধ্যে) আমরা ছত্রভঙ্গ হইয়া যাই। তখন আমরা বলাবলি করিতে লাগিলাম, আমরা কেমন করিয়া নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করিব যেখানে আমরা যুদ্ধ হইতে পলায়ন করিয়াছি। এমনই যুগ-সন্ধিক্ষণে নাযিল হইল কুরআন শরীফের আয়াতঃ (‏إِلاَّ مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ‏)‏ “অবশ্য যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন স্বরূপ যদি কেহ যুদ্ধ হইতে পশ্চাৎপদ হয় তবে স্বতন্ত্র কথা” (সূরা আনফালঃ ১৬) ।
তখন আমরা বলাবলি করিতে লাগিলাম, আমরা আর মদীনায় গিয়া পা দিব না। তাহা হইলে আমাদিগকে কেহ দেখিবে না। আমরা আরও বলাবলি করিতে লাগিলাম, যদি আমরা মদীনায় যাই (তবে লোকে কি বলিবে?) অতঃপর নানা কথা ভাবিয়া আমরা মদীনায় গিয়া উপস্থিত হইলাম। নবী করীম (ﷺ) ফজরের নামায পড়িয়া তখন বাহির হইয়াছেন। আমরা বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমরা তো পলাতকের দল! ফরমাইলেনঃ কে বলে তোমরা পলাতকের দল বরং তোমরা তো হইতেছ, পাল্টা আক্রমণকারী দল! (অর্থাৎ পাল্টা আক্রমণ করিবার সদুদ্দেশ্যই তোমরা যুদ্ধ হইতে পশ্চাৎপসারণ করিয়া থাকিবে নিশ্চয়ই।) যদিও বা তোমাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয় নাই। আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর হস্ত চুম্বন করিলাম। তিনি বলিয়া উঠিলেনঃ আমিও কিন্তু তোমাদেরই একজন।
بَابُ تَقْبِيلِ الْيَدِ
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ‏:‏ كُنَّا فِي غَزْوَةٍ، فَحَاصَ النَّاسُ حَيْصَةً، قُلْنَا‏:‏ كَيْفَ نَلْقَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ فَرَرْنَا‏؟‏ فَنَزَلَتْ‏:‏ ‏(‏إِلاَّ مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ‏)‏، فَقُلْنَا‏:‏ لاَ نَقْدِمُ الْمَدِينَةَ، فَلاَ يَرَانَا أَحَدٌ، فَقُلْنَا‏:‏ لَوْ قَدِمْنَا، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ صَلاَةِ الْفَجْرِ، قُلْنَا‏:‏ نَحْنُ الْفَرَّارُونَ، قَالَ‏:‏ أَنْتُمُ الْعَكَّارُونَ، فَقَبَّلْنَا يَدَهُ، قَالَ‏:‏ أَنَا فِئَتُكُمْ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে চুম্বন করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হযরত উসামা ইবন শারীক রাযি. বলেন, আমরা উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলাম।

হযরত জাবির রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে, উমর রাযি. উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলেন। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

আব্দুর রহমান ইবন রাযীন রহ. বলেন, সালামা ইবনুল আকওয়া' রাযি. আমাদের সামনে তাঁর বৃহৎ পাঞ্জা বের করলেন। আমরা উঠে গিয়ে তাতে চুম্বন করলাম। (বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৯৭৩)

বিখ্যাত তাবি'ঈ ছাবিত রহ. একবার হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি.-কে বললেন, আপনি কি আপনার এ হাত দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কে চুম্বন করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তখন ছাবিত তাঁর হাতে চুম্বন করলেন। (বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৯৭৪)

একবার তাবি'ঈ আবূ মালিক আশজা'ঈ রহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবী আওফা রাযি.-কে বললেন, আপনি যে হাত দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বায়'আত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত আমাকে দিন। তিনি হাত বাড়িয়ে দিলে আবূ মালিক তাতে চুম্বন করলেন। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, যখনই তিনি শামে আসতেন, হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি. সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানাতেন এবং তাঁর হাতে চুম্বন করতেন। (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৫৫৯)

ইমাম নববী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তির যুহ্‌দ, পরহেযগারী, ইলম, দীনী মর্যাদা এবং এ জাতীয় দীনী কোনও বিশেষত্বের কারণে তার হাতে চুমু খাওয়া মাকরূহ নয়: বরং মুস্তাহাব। যদি কারও ধন-দৌলত কিংবা দুনিয়াদারদের কাছে তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে চুম্বন করা হয়, তবে তা অবশ্যই কঠিন মাকরূহ কাজ বলে গণ্য হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ভক্তি-ভালোবাসার প্রকাশস্বরূপ পিতা-মাতা এবং মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির হাতে চুম্বন করা জায়েয।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ৯৭৯ | মুসলিম বাংলা