আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৭০০
২৯১- মহানবী (ﷺ)-এর দুআসমূহ।
৭০০. হযরত ইবন আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, এক রাত্রিতে আমি উম্মুল মু'মিনীন হযরত মায়মূনা (রাযিঃ)-এর গৃহে ছিলাম। রাত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ঘুম হইতে উঠিলেন এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাহিরে গেলেন। ফিরিয়া তিনি হাত-মুখ ধুলেন এবং আবার শুইয়া পড়িলেন। কিছুক্ষণ পর আবার উঠিলেন । (পানির) মশকের নিকটে গেলেন, উহার মুখ খুলিলেন; অতঃপর ওযূ করিলেন, মধ্যম পর্যায়ের ওযু, বেশীও নহে এবং কমও নহে। অতঃপর তিনি নামাযে দাঁড়াইয়া গেলেন। এমন সময় আমি উঠিলাম এবং গা-মোচড় দিলাম—কেননা, আমি সবকিছু প্রত্যক্ষ করিয়াছি এ কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যাহাতে টের না পান । আমিও ওযু করিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তখনও নামাযে রত ছিলেন, আমিও নামায পড়িতে তাঁহার বাম পার্শ্বে দাঁড়াইয়া গেলাম। তিনি আমার কান ধরিয়া আমাকে তাঁহার ডানপার্শ্বে নিয়া গেলেন। তাঁহার এই নামায তেরো রাক'আত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হইল। অতঃপর তিনি শয্যাগত হইলেন, ঘুমাইলেন এমনকি তাঁহার নাক ডাকিতে আরম্ভ হইল। আর নবী (ﷺ) যখন নিদ্রাক্ষণ যাইতেন, তখন তাঁহার নাক ডাকিত। এমতাবস্থায় বিলাল (রাযিঃ) তাঁহাকে ফজরের নামাযের জন্য ডাকিতে আসিলেন। তিনি নামায আদায় করিলেন অথচ ওযূ করিলেন না। তাঁহার দু'আয় তিনি বলিলেনঃ اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا ، وَفِي سَمْعِي نُورًا ، وَعَنْ يَمِينِي نُورًا ، وَعَنْ يَسَارِي نُورًا ، وَفَوْقِي نُورًا ، وَتَحْتِي نُورًا ، وَأَمَامِي نُورًا ، وَخَلْفِي نُورًا ، وَأَعْظِمْ لِي نُورًا “হে আল্লাহ্! আমার অন্তরে জ্যোতি (নূর) দান করুন, আমার কানে জ্যোতি (নূর) দান করুন, আমার ডানে ও বামে জ্যোতি (নূর) দান করুন, আমার উপরে ও নীচে, সম্মুখে ও পশ্চাতে জ্যোতি (নূর) দান করুন এবং আমার জ্যোতিকে (নূর) বৃহদায়তন করিয়া দিন।” রাবী কুরায়ব বলেন : হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ)-এর সিন্দুকে রক্ষিত লিপিতে এই সাতটিরই উল্লেখ আছে। কিন্তু আমি হযরত আব্বাস (রাযিঃ)-এর বংশধরদের মধ্যকার একজনের সাথে সাক্ষাৎ করিলে তিনি এগুলির সাথে : عَصَبِي ، وَلَحْمِي ، وَدَمِي ، وَشَعْرِي ، وَبَشَرِي “এবং আমার শিরায় উপশিরায়, আমার রক্তে ও মাংসে, আমার গাত্র চুলে এবং চর্মে [জ্যোতি (নূর) দান করুন] এবং আরো দুইটি বস্তুর কথা উল্লেখ করেন।১
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ ، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ ، عَنْ كُرَيْبٍ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : " بِتُّ عِنْدَ مَيْمُونَةَ ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَى حَاجَتَهُ ، فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ ثُمَّ نَامَ ، ثُمَّ قَامَ فَأَتَى الْقِرْبَةَ فَأَطْلَقَ شِنَاقَهَا ، ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوءًا بَيْنَ وُضُوءَيْنِ ، لَمْ يُكْثِرْ وَقَدْ أَبْلَغَ ، فَصَلَّى ، فَقُمْتُ فَتَمَطَّيْتُ كَرَاهِيَةَ أَنْ يَرَى أَنِّي كُنْتُ أَبْقِيهِ ، فَتَوَضَّأْتُ ، فَقَامَ يُصَلِّي ، فَقُمْتُ عِنْدَ يَسَارِهِ ، فَأَخَذَ بِأُذُنِي فَأَدَارَنِي عَنْ يَمِينِهِ ، فَتَتَامَّتْ صَلاتُهُ مِنَ اللَّيْلِ ثَلاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً ، ثُمَّ اضْطَجَعَ فَنَامَ حَتَّى نَفَخَ ، وَكَانَ إِذَا نَامَ نَفَخَ ، فَآذَنَهُ بِلالٌ بِالصَّلاةِ ، فَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ ، وَكَانَ فِي دُعَائِهِ : اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا ، وَفِي سَمْعِي نُورًا ، وَعَنْ يَمِينِي نُورًا ، وَعَنْ يَسَارِي نُورًا ، وَفَوْقِي نُورًا ، وَتَحْتِي نُورًا ، وَأَمَامِي نُورًا ، وَخَلْفِي نُورًا ، وَأَعْظِمْ لِي نُورًا " ، قَالَ كُرَيْبٌ : وَسَبْع فِي التَّابُوتِ ، فَلَقِيتُ رَجُلا مِنْ وَلَدِ الْعَبَّاسِ ، فَحَدَّثَنِي بِهِنَّ ، فَذَكَرَ : عَصَبِي ، وَلَحْمِي ، وَدَمِي ، وَشَعْرِي ، وَبَشَرِي ، وَذَكَرَ خَصْلَتَيْنِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নিদ্রাবস্থায় ওযু যে ছুটিয়া যায় ইহা ফিক্‌হ শাস্ত্রবিদদের কাহারো দ্বিমত নাই। তবে রাসূলুল্লাহ্ (সা) উহার ব্যতিক্রম। তিনি আমাদের মত নহেন। অন্য হাদীসে তাঁহার নিদ্রা প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, عيناه نائمتان وقلبهতাঁহার চক্ষু নিদ্রাভিভূত কিন্তু অন্তর জাগ্রত। তাই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিদ্রা তাঁহার ওযু ভঙ্গের কারণ হইতে না। এজন্যই নিদ্রা হইতে জাগিয়া পুনরায় ওযু না করিয়াই সোজা তিনি নামায পড়িতে চলিয়া যাইতেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন