আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ৫২০
২৩৪- রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখিতে যাওয়া
৫২০। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ তিনটি বস্তু এমন যাহার প্রতিটিই প্রত্যেক মুসলমানদের উপর হক স্বরূপ, রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখিতে যাওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ এবং যে ব্যক্তি হাঁচি দেয় সে (আল-হামদুলিল্লাহ্ বলিয়া) আল্লাহ্র প্রশংসা করিবে, তাহার জবাব (ইয়ারহামু কাল্লাহ্ বলিয়া) উহার জবাব দেওয়া।
حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ ، عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : " ثَلاثٌ كُلُّهُنَّ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ : عِيَادَةُ الْمَرِيضِ ، وَشُهُودُ الْجَنَازَةِ ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ إِذَا حَمِدَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে মুসলিমের উপর আরেক মুসলিমের কয়েকটি হকের বর্ণনা আছে। অর্থাৎ এ বিষয়গুলো এক মুসলিমের কাছে অপর মুসলিমের প্রাপ্য, যা আদায় করা কর্তব্য।
রোগী দেখতে যাওয়া
عيادة المريض - রোগীর ইয়াদত করা। অর্থাৎ কারও অসুস্থতার সংবাদ শুনলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। এর দ্বারা পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। এটা অনেক বড় ছাওয়াবের কাজও বটে। হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من مسلم يعود مسلما غدوة إلا صلى عليه سبعون ألف ملك حتى يمسي، وإن عادة عشية إلا صلى عليه سبعون ألف ملك حتى يصبح، وكان له خريف في الجنة “যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি সকালবেলা কোনও অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফিরিশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করে। যদি সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান করা হয়।
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أيما رجل يعود مريضا، فإنما يخوض في الرحمة، فإذا قعد عند المريض غمرته الرحمة». قال: فقلت: يا رسول الله، هذا للصحيح الذي يعود المريض، فالمريض ما له؟ قال: تحط عنه ذنوبه “যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায় সে রহমতের ভেতর ডুব দিতে থাকে। যখন সে রোগীর কাছে গিয়ে বসে তখন রহমত তাকে নিমজ্জিত করে ফেলে। বর্ণনাকারী (হযরত আনাস রাযি.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা তো ওই সুস্থ ব্যক্তির জন্য, যে রোগী দেখতে যায়। তা অসুস্থ ব্যক্তি কী পাবে? তিনি বললেন, তার পাপরাশি মিটিয়ে দেওয়া হয়।
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من عاد مريضا أو زار أخا له في الله ناداه مناد أن طبت وطاب ممشاك وتبوأت من الجنة منزلاً যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায় বা তার কোনও মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যায়, তার উদ্দেশে এক ঘোষক ঘোষণা করে, তুমি শুভ হও, তোমার যাত্রা শুভ হোক এবং জান্নাতে তোমার ঠিকানা হোক।
হযরত ছাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- عائد المريض في مخرفة الجنة “যে ব্যক্তি রোগী দেখতে যায় সে জান্নাতের ফলের বাগানে (অথবা এর অর্থ, সে জান্নাতের পথে) থাকে।
সুবহানাল্লাহ, রোগী দেখতে যাওয়া এমন কিছু কঠিন কাজ নয়, অথচ এর ছাওয়াব ও পুরস্কার কত বিশাল! এক তো এর দ্বারা মুসলিম ভাইয়ের হক আদায় হয়, পরস্পরে মহব্বত সৃষ্টি হয় এবং সবচে' বড় কথা এ আমল জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে। এত বড় ফযীলতের কাজেও আমাদের কতইনা গাফলাতি! আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ গাফলাতি ঝেড়ে ফেলে আমলে উদ্যোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
রোগী দেখার কয়েকটি দুআ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগী দেখার বিভিন্ন দুআও শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, কেউ যখন কোনও রোগী দেখতে যাবে তখন বলবেঃ- اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ ، يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا ، وَيَمْشِي لَكَ إِلَى الصَّلاَةِ “হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও, যাতে সে তোমার শত্রুর উপর আঘাত হানতে পারে এবং তোমার জন্য নামাযে যেতে পারে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি রোগী দেখতে গিয়ে যদি সাতবার বলেঃ- أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ (যিনি মহান আরশের মালিক সেই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি তোমাকে শিফা দান করেন), তবে আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন, যদি তার হায়াত থাকে।
হযরত ইব্ন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও রোগী দেখতে গেলে বলতেনঃ- لا بأس، طهور إن شاء الله “এতে তোমার কোনও অনিষ্ট নেই। আল্লাহ চাহেন তো এটা পাপরাশি থেকে তোমার পবিত্রতার কারণ হবে।
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও রোগী দেখতে গেলে বলতেন— «أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا» 'হে মানুষের প্রতিপালক! অসুস্থতা দূর করে দিন। আপনিই শেফাদাতা। আপনার দেওয়া শেফা ছাড়া কোনও শেফা নেই। আপনি এমন শেফা দান করুন, যা কোনও রোগ বাকি রাখবে না।
জানাযায় অংশগ্রহণ করা।
সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। বরং সব মুসলিম মিলে একদেহতুল্য। কাজেই কোনও মুসলিমের মৃত্যু হওয়া যেন কারও দেহের একটি অঙ্গ ছিন্ন হওয়া। অঙ্গের ছিন্ন হওয়া যেমন প্রত্যেকের জন্য শোকের বিষয়, তেমনি কোনও মুসলিম ভাইয়ের মৃত্যুতেও শোক ও দুঃখ বোধ করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। সবচে' বড় কথা যার মৃত্যু হল সে এতদিন দুনিয়ায় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলেমিশে ছিল। এখন সে একা হয়ে গেছে। কারও পক্ষে এখন তার পাশে দাঁড়ানো সম্ভবই নয়। তবে কি তাকে এভাবে নিঃসঙ্গ ছেড়ে দেওয়া হবে? তার জন্য কিছুই করার সুযোগ নেই? হাঁ, সুযোগ আছে। কারও শারীরিক বা আর্থিক সাহায্যই বড় সাহায্য নয়। এরচে'ও বড় সাহায্য হল দীনী ও ঈমানী সাহায্য। যে সাহায্য কবর ও হাশরে কাজে আসে, তার মত উপকার আর হয় না। মৃত্যু দ্বারা যে ব্যক্তি একা হয়ে গেল, এখন সে সাহায্যই তার প্রয়োজন। ইসলাম আমাদেরকে সেরকম সাহায্যের পথ দেখিয়েছে। এরকম সাহায্যের সর্বপ্রধান ব্যবস্থা জানাযার নামায়। এটা কবরযাত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ। আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেন সে দুআই জানাযায় নামাযে করা হয়ে থাকে। মুমিনগণ নামাযের রূপে তার জন্য এ দুআ করলে অবশ্যই তা কবুল হওয়ার আশা থাকে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من ميت تصلي عليه أمة من المسلمين يبلغون مائة، كلهم يشفعون له، إلا شفعوا فيه “একশ সংখ্যক মুসলিমের একটি দল যে মায়্যিতের জানাযার নামায আদায় করে এবং তারা তার জন্য সুপারিশ করে, তার জন্য তাদের সুপারিশ অবশ্যই কবুল হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من رجل مسلم يموت، فيقوم على جنازته أربعون رجلا، لا يشركون بالله شيئا، إلا شفعهم الله فيه “কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি মারা যায়, তারপর আল্লাহর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করে না এমন চল্লিশ জন লোক তার জানাযা পড়ে, তবে আল্লাহ তাআলা তার পক্ষে তাদের সুপারিশ অবশ্যই কবুল করেন।
জীবিতদের যে আমল দ্বারা মৃত ব্যক্তির এত বড় উপকার হয়, অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপনার সঙ্গেই তাতে শরীক হওয়া চাই। এর ফযীলতও অনেক। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من شهد الجنازة حتى يصلي فله قيراط، ومن شهد حتى تدفن كان له قيراطان، قيل : وما القيراطان؟ قال: مثل الجبلين العظيمين “যে ব্যক্তি মায়্যিতের সাথে তার জানাযার নামায আদায় করা পর্যন্ত হাজির থাকে,সে এক কীরাত ছাওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি তাকে দাফন করা পর্যন্ত হাজির থাকে, সে দুই কীরাত ছাওয়াব লাভ করে। জিজ্ঞেস করা হল, দুই কীরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বড় বড় পাহাড়ের সমান।
হাঁচিদাতাকে يرحمك الله বলা
হাদীছটিতে বর্ণিত মুসলিম ব্যক্তির পঞ্চম হক হল تشميت العاطس হাঁচিদাতাকে يرحمك الله বলা, অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। تشميت العاطس অর্থ কল্যাণ ও বরকতের দু'আ করা। শব্দটির উৎপত্তি شماتة থেকে। যার অর্থ অন্যের বিপদে আনন্দিত হওয়া।تشميت অর্থ সেই আনন্দ প্রতিহত করা। যার প্রতি আল্লাহর রহমত হয় তার বিপদও কেটে যায়। ফলে শত্রুর আনন্দ ঘুচে যায়। যেহেতু এ দু'আটি পরিণামে শত্রুর আনন্দ ঘুচিয়ে দেয় তাই একে تشميت নামে অভিহিত করা হয়েছে।
কারও মতে تشميت এর উৎপত্তি شواميت থেকে। شواميت অর্থ হাত-পা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। সেই হিসেবে تشميت অর্থ স্থিত ও প্রতিষ্ঠিত রাখা। يرحمك الله বলার দ্বারা হাঁচিদাতার জন্য তাকে দীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার দু'আ করা হয়। তাই এ দু'আকে تشميت নাম দেওয়া হয়েছে।
হাঁচি দেওয়া একটি নিআমত। এর দ্বারা আলস্য কাটে ও শরীর ঝরঝরে হয়। ফলে কাজকর্মে স্ফুর্তি আসে। তখন ইবাদত-বন্দেগী করতে ভালো লাগে। তাই হাঁচিদাতার কর্তব্য হাঁচি দেওয়ার পর আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা। অর্থাৎ আলহামদুল্লিাহ বলা আলহামদুল্লিাহ শোকর আদায়ের ভাষা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হাঁচির এ দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি হাঁচির ব্যাপারে আমাদের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা রেখে গেছেন। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেনঃ- إذا عطس أحدكم، فليقل: الحمد لله، فإذا قال: الحمد لله، قال له أخوه يرحمك الله، فإذا قيل له يرحمك الله : فليقل: يهديكم الله ويصلح بالكم 'তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন বলে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। সে যখন الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে তখন উপস্থিত ভাই যেন বলে يَرْحَمُكَ اللَّهُ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। তাকে লক্ষ্য করে يَرْحَمُكَ اللَّهُ বললে সে যেন বলে يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)।
হাঁচিদাতা আলহামদুল্লিাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা ওয়াজিব। অনেকেই এই ওয়াজিব পালনে অবহেলা করে। তা করা উচিত নয়। তাতে এক তো ওয়াজিব তরকের গুনাহ হয়। দ্বিতীয়ত, হাঁচিদাতাকেও হেলা করা হয়, বিশেষত সে যদি গরীব হয় বা তথাকথিত সামাজিক দৃষ্টিতে নিম্নস্তরের হয়। কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে হেলা করা কঠিন অপরাধ। এ ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি। সুতরাং হাঁচিদাতার উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ অবশ্যই বলতে হবে, সে যেই হোক না কেন। অবশ্য যদি বারবার হাঁচি দেয়, তিনবার বা তারও বেশি তবে সেটা সর্দির আলামত। সেক্ষেত্রে বারবার উত্তর দেওয়ার জরুরত নেই।
উপস্থিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে যখন ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা হবে তখন আবার হাঁচিদাতার কাজ তাদের জন্য দুআ করা। তারা তার জন্য দুআ করে তার প্রতি যেই ইহসান করেছে তার বদলা দেওয়া তার কর্তব্য। উপকারীর উপকার করাও ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কেউ কারও উপকার করলে সে উপকারের বদলা দেওয়া কর্তব্য। বৈষয়িক উপকারও উপকার বটে। তবে কারও জন্য দু'আ করা বা কারও দীনী কল্যাণ সাধন করা আরও বড় উপকার। কাজেই উপস্থিত ব্যক্তিগণ দু'আ দ্বারা হাঁচিদাতার যে বিরাট উপকার করল তার বিনিময়ে কিছু করা তো চাই। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা হল সেও তাদের জন্য এই বলে দু'আ করবে- (আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)।
“এই যে হকসমূহের কথা উল্লেখ করা হল, এর সবগুলোই সকল মুসলিমের প্রাপ্য। এ ব্যাপারে কোনওরকম ভেদাভেদ ও বৈষম্য করার সুযোগ নেই। ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, ইসলাম সকল মুসলিমকে সমান মর্যাদা দিয়েছে। সুতরাং এসব হকেও সকল মুসলিমের প্রতি সমান আচরণ জরুরি। তুমি কখনও এরকম ভাববে না যে, ইনি একজন শাসক, একজন প্রভাবশালী ও একজন বিত্তবান, আর সে একজন গরীব ও তুচ্ছলোক। তুমি কাউকেই তুচ্ছ গণ্য করবে না। তুমি মনে করবে ইসলাম যেন এক ব্যক্তি আর সমস্ত মুসলিম তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কেননা মুসলিমসাধারণ ছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব কোথায় পাবে? যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও প্রকাশ্য-গুপ্ত শক্তি-ক্ষমতা ছাড়া কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব পেতে পার না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আমরা কর্তব্যবোধের শিক্ষা পাই। কোনও মুসলিম কেবল তার নিজের জন্য নয়; অন্যদের উপরও তার অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য সেসব দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য।
খ. রোগীর ইয়াদাত করা অর্থাৎ তার খোঁজখবর নেওয়াও ইসলামী হকসমূহের একটি এবং এটা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ।
গ. জানাযায় অংশগ্রহণ করা একটি অবশ্যপালনীয় আমল এবং এটা মৃতব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গের হক।
ঘ. তাশমীত অর্থাৎ হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহ বলার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা তার হক ও অবশ্যপ্রাপ্য।
রোগী দেখতে যাওয়া
عيادة المريض - রোগীর ইয়াদত করা। অর্থাৎ কারও অসুস্থতার সংবাদ শুনলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। এর দ্বারা পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। এটা অনেক বড় ছাওয়াবের কাজও বটে। হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من مسلم يعود مسلما غدوة إلا صلى عليه سبعون ألف ملك حتى يمسي، وإن عادة عشية إلا صلى عليه سبعون ألف ملك حتى يصبح، وكان له خريف في الجنة “যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি সকালবেলা কোনও অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফিরিশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করে। যদি সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান করা হয়।
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أيما رجل يعود مريضا، فإنما يخوض في الرحمة، فإذا قعد عند المريض غمرته الرحمة». قال: فقلت: يا رسول الله، هذا للصحيح الذي يعود المريض، فالمريض ما له؟ قال: تحط عنه ذنوبه “যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায় সে রহমতের ভেতর ডুব দিতে থাকে। যখন সে রোগীর কাছে গিয়ে বসে তখন রহমত তাকে নিমজ্জিত করে ফেলে। বর্ণনাকারী (হযরত আনাস রাযি.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা তো ওই সুস্থ ব্যক্তির জন্য, যে রোগী দেখতে যায়। তা অসুস্থ ব্যক্তি কী পাবে? তিনি বললেন, তার পাপরাশি মিটিয়ে দেওয়া হয়।
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من عاد مريضا أو زار أخا له في الله ناداه مناد أن طبت وطاب ممشاك وتبوأت من الجنة منزلاً যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায় বা তার কোনও মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যায়, তার উদ্দেশে এক ঘোষক ঘোষণা করে, তুমি শুভ হও, তোমার যাত্রা শুভ হোক এবং জান্নাতে তোমার ঠিকানা হোক।
হযরত ছাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- عائد المريض في مخرفة الجنة “যে ব্যক্তি রোগী দেখতে যায় সে জান্নাতের ফলের বাগানে (অথবা এর অর্থ, সে জান্নাতের পথে) থাকে।
সুবহানাল্লাহ, রোগী দেখতে যাওয়া এমন কিছু কঠিন কাজ নয়, অথচ এর ছাওয়াব ও পুরস্কার কত বিশাল! এক তো এর দ্বারা মুসলিম ভাইয়ের হক আদায় হয়, পরস্পরে মহব্বত সৃষ্টি হয় এবং সবচে' বড় কথা এ আমল জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে। এত বড় ফযীলতের কাজেও আমাদের কতইনা গাফলাতি! আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ গাফলাতি ঝেড়ে ফেলে আমলে উদ্যোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
রোগী দেখার কয়েকটি দুআ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগী দেখার বিভিন্ন দুআও শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, কেউ যখন কোনও রোগী দেখতে যাবে তখন বলবেঃ- اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ ، يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا ، وَيَمْشِي لَكَ إِلَى الصَّلاَةِ “হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও, যাতে সে তোমার শত্রুর উপর আঘাত হানতে পারে এবং তোমার জন্য নামাযে যেতে পারে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি রোগী দেখতে গিয়ে যদি সাতবার বলেঃ- أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ (যিনি মহান আরশের মালিক সেই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি তোমাকে শিফা দান করেন), তবে আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন, যদি তার হায়াত থাকে।
হযরত ইব্ন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও রোগী দেখতে গেলে বলতেনঃ- لا بأس، طهور إن شاء الله “এতে তোমার কোনও অনিষ্ট নেই। আল্লাহ চাহেন তো এটা পাপরাশি থেকে তোমার পবিত্রতার কারণ হবে।
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও রোগী দেখতে গেলে বলতেন— «أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا» 'হে মানুষের প্রতিপালক! অসুস্থতা দূর করে দিন। আপনিই শেফাদাতা। আপনার দেওয়া শেফা ছাড়া কোনও শেফা নেই। আপনি এমন শেফা দান করুন, যা কোনও রোগ বাকি রাখবে না।
জানাযায় অংশগ্রহণ করা।
সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। বরং সব মুসলিম মিলে একদেহতুল্য। কাজেই কোনও মুসলিমের মৃত্যু হওয়া যেন কারও দেহের একটি অঙ্গ ছিন্ন হওয়া। অঙ্গের ছিন্ন হওয়া যেমন প্রত্যেকের জন্য শোকের বিষয়, তেমনি কোনও মুসলিম ভাইয়ের মৃত্যুতেও শোক ও দুঃখ বোধ করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। সবচে' বড় কথা যার মৃত্যু হল সে এতদিন দুনিয়ায় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলেমিশে ছিল। এখন সে একা হয়ে গেছে। কারও পক্ষে এখন তার পাশে দাঁড়ানো সম্ভবই নয়। তবে কি তাকে এভাবে নিঃসঙ্গ ছেড়ে দেওয়া হবে? তার জন্য কিছুই করার সুযোগ নেই? হাঁ, সুযোগ আছে। কারও শারীরিক বা আর্থিক সাহায্যই বড় সাহায্য নয়। এরচে'ও বড় সাহায্য হল দীনী ও ঈমানী সাহায্য। যে সাহায্য কবর ও হাশরে কাজে আসে, তার মত উপকার আর হয় না। মৃত্যু দ্বারা যে ব্যক্তি একা হয়ে গেল, এখন সে সাহায্যই তার প্রয়োজন। ইসলাম আমাদেরকে সেরকম সাহায্যের পথ দেখিয়েছে। এরকম সাহায্যের সর্বপ্রধান ব্যবস্থা জানাযার নামায়। এটা কবরযাত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ। আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেন সে দুআই জানাযায় নামাযে করা হয়ে থাকে। মুমিনগণ নামাযের রূপে তার জন্য এ দুআ করলে অবশ্যই তা কবুল হওয়ার আশা থাকে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من ميت تصلي عليه أمة من المسلمين يبلغون مائة، كلهم يشفعون له، إلا شفعوا فيه “একশ সংখ্যক মুসলিমের একটি দল যে মায়্যিতের জানাযার নামায আদায় করে এবং তারা তার জন্য সুপারিশ করে, তার জন্য তাদের সুপারিশ অবশ্যই কবুল হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من رجل مسلم يموت، فيقوم على جنازته أربعون رجلا، لا يشركون بالله شيئا، إلا شفعهم الله فيه “কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি মারা যায়, তারপর আল্লাহর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করে না এমন চল্লিশ জন লোক তার জানাযা পড়ে, তবে আল্লাহ তাআলা তার পক্ষে তাদের সুপারিশ অবশ্যই কবুল করেন।
জীবিতদের যে আমল দ্বারা মৃত ব্যক্তির এত বড় উপকার হয়, অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপনার সঙ্গেই তাতে শরীক হওয়া চাই। এর ফযীলতও অনেক। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من شهد الجنازة حتى يصلي فله قيراط، ومن شهد حتى تدفن كان له قيراطان، قيل : وما القيراطان؟ قال: مثل الجبلين العظيمين “যে ব্যক্তি মায়্যিতের সাথে তার জানাযার নামায আদায় করা পর্যন্ত হাজির থাকে,সে এক কীরাত ছাওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি তাকে দাফন করা পর্যন্ত হাজির থাকে, সে দুই কীরাত ছাওয়াব লাভ করে। জিজ্ঞেস করা হল, দুই কীরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বড় বড় পাহাড়ের সমান।
হাঁচিদাতাকে يرحمك الله বলা
হাদীছটিতে বর্ণিত মুসলিম ব্যক্তির পঞ্চম হক হল تشميت العاطس হাঁচিদাতাকে يرحمك الله বলা, অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। تشميت العاطس অর্থ কল্যাণ ও বরকতের দু'আ করা। শব্দটির উৎপত্তি شماتة থেকে। যার অর্থ অন্যের বিপদে আনন্দিত হওয়া।تشميت অর্থ সেই আনন্দ প্রতিহত করা। যার প্রতি আল্লাহর রহমত হয় তার বিপদও কেটে যায়। ফলে শত্রুর আনন্দ ঘুচে যায়। যেহেতু এ দু'আটি পরিণামে শত্রুর আনন্দ ঘুচিয়ে দেয় তাই একে تشميت নামে অভিহিত করা হয়েছে।
কারও মতে تشميت এর উৎপত্তি شواميت থেকে। شواميت অর্থ হাত-পা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। সেই হিসেবে تشميت অর্থ স্থিত ও প্রতিষ্ঠিত রাখা। يرحمك الله বলার দ্বারা হাঁচিদাতার জন্য তাকে দীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার দু'আ করা হয়। তাই এ দু'আকে تشميت নাম দেওয়া হয়েছে।
হাঁচি দেওয়া একটি নিআমত। এর দ্বারা আলস্য কাটে ও শরীর ঝরঝরে হয়। ফলে কাজকর্মে স্ফুর্তি আসে। তখন ইবাদত-বন্দেগী করতে ভালো লাগে। তাই হাঁচিদাতার কর্তব্য হাঁচি দেওয়ার পর আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা। অর্থাৎ আলহামদুল্লিাহ বলা আলহামদুল্লিাহ শোকর আদায়ের ভাষা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হাঁচির এ দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি হাঁচির ব্যাপারে আমাদের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা রেখে গেছেন। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেনঃ- إذا عطس أحدكم، فليقل: الحمد لله، فإذا قال: الحمد لله، قال له أخوه يرحمك الله، فإذا قيل له يرحمك الله : فليقل: يهديكم الله ويصلح بالكم 'তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন বলে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। সে যখন الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে তখন উপস্থিত ভাই যেন বলে يَرْحَمُكَ اللَّهُ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। তাকে লক্ষ্য করে يَرْحَمُكَ اللَّهُ বললে সে যেন বলে يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)।
হাঁচিদাতা আলহামদুল্লিাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা ওয়াজিব। অনেকেই এই ওয়াজিব পালনে অবহেলা করে। তা করা উচিত নয়। তাতে এক তো ওয়াজিব তরকের গুনাহ হয়। দ্বিতীয়ত, হাঁচিদাতাকেও হেলা করা হয়, বিশেষত সে যদি গরীব হয় বা তথাকথিত সামাজিক দৃষ্টিতে নিম্নস্তরের হয়। কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে হেলা করা কঠিন অপরাধ। এ ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি। সুতরাং হাঁচিদাতার উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ অবশ্যই বলতে হবে, সে যেই হোক না কেন। অবশ্য যদি বারবার হাঁচি দেয়, তিনবার বা তারও বেশি তবে সেটা সর্দির আলামত। সেক্ষেত্রে বারবার উত্তর দেওয়ার জরুরত নেই।
উপস্থিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে যখন ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা হবে তখন আবার হাঁচিদাতার কাজ তাদের জন্য দুআ করা। তারা তার জন্য দুআ করে তার প্রতি যেই ইহসান করেছে তার বদলা দেওয়া তার কর্তব্য। উপকারীর উপকার করাও ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কেউ কারও উপকার করলে সে উপকারের বদলা দেওয়া কর্তব্য। বৈষয়িক উপকারও উপকার বটে। তবে কারও জন্য দু'আ করা বা কারও দীনী কল্যাণ সাধন করা আরও বড় উপকার। কাজেই উপস্থিত ব্যক্তিগণ দু'আ দ্বারা হাঁচিদাতার যে বিরাট উপকার করল তার বিনিময়ে কিছু করা তো চাই। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা হল সেও তাদের জন্য এই বলে দু'আ করবে- (আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)।
“এই যে হকসমূহের কথা উল্লেখ করা হল, এর সবগুলোই সকল মুসলিমের প্রাপ্য। এ ব্যাপারে কোনওরকম ভেদাভেদ ও বৈষম্য করার সুযোগ নেই। ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, ইসলাম সকল মুসলিমকে সমান মর্যাদা দিয়েছে। সুতরাং এসব হকেও সকল মুসলিমের প্রতি সমান আচরণ জরুরি। তুমি কখনও এরকম ভাববে না যে, ইনি একজন শাসক, একজন প্রভাবশালী ও একজন বিত্তবান, আর সে একজন গরীব ও তুচ্ছলোক। তুমি কাউকেই তুচ্ছ গণ্য করবে না। তুমি মনে করবে ইসলাম যেন এক ব্যক্তি আর সমস্ত মুসলিম তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কেননা মুসলিমসাধারণ ছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব কোথায় পাবে? যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও প্রকাশ্য-গুপ্ত শক্তি-ক্ষমতা ছাড়া কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব পেতে পার না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আমরা কর্তব্যবোধের শিক্ষা পাই। কোনও মুসলিম কেবল তার নিজের জন্য নয়; অন্যদের উপরও তার অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য সেসব দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য।
খ. রোগীর ইয়াদাত করা অর্থাৎ তার খোঁজখবর নেওয়াও ইসলামী হকসমূহের একটি এবং এটা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ।
গ. জানাযায় অংশগ্রহণ করা একটি অবশ্যপালনীয় আমল এবং এটা মৃতব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গের হক।
ঘ. তাশমীত অর্থাৎ হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহ বলার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা তার হক ও অবশ্যপ্রাপ্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
