আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৪২৯
২০১- গালি বর্ষণকারী উভয় পক্ষই শয়তান সদৃশ্য তারা পরস্পর বিবাদ করে ও মিথ্যা কথা বলে
৪২৯। হযরত ইয়ায ইব্‌ন হিমার (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাকে এই মর্মে প্রত্যাদেশ করিয়াছেন যে, পরস্পরে বিনয়ী হও, কেহ কাহারো সহিত বাড়াবাড়ি করিও না, একে অপরকে গর্ব প্রদর্শন করিও না। আমি বলিলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদি কোন ব্যক্তি আমাকে আমার চাইতে কম মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের সম্মুখে আমাকে গালি দেয়, আর আমিও তাহার প্রত্যুত্তর করি তবে এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন ? ইহাতে কি আমার পাপ হইবে? তিনি বলিলেন, যাহারা একে অপরকে গালি দেয় তাহাদের উভয়েই শয়তান, উভয়েই কটু কথা বলে এবং তাহারা উভয়েই মিথ্যুক। হযরত ইয়ায (রাযিঃ) বলেন, আমি ছিলাম রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর প্রতিপক্ষ, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি তাঁহাকে একটি উষ্ট্রী হাদিয়া দিতে চাহিলাম। কিন্তু তিনি তাহা গ্রহণ করিলেন না। তিনি তখন বলিলেনঃ মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণে আমার রুচি হয় না।
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ‏:‏ حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ، عَنْ حَجَّاجِ بْنِ حَجَّاجٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ قَالَ‏:‏ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لاَ يَبْغِيَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ، وَلاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ، فَقُلْتُ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلاً سَبَّنِي فِي مَلَأٍ هُمْ أَنْقُصُ مِنِّي، فَرَدَدْتُ عَلَيْهِ، هَلْ عَلَيَّ فِي ذَلِكَ جُنَاحٌ‏؟‏ قَالَ‏:‏ الْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَهَاتَرَانِ وَيَتَكَاذَبَانِ .‏ قَالَ عِيَاضٌ‏:‏ وَكُنْتُ حَرْبًا لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَهْدَيْتُ إِلَيْهِ نَاقَةً، قَبْلَ أَنْ أُسْلِمَ، فَلَمْ يَقْبَلْهَا وَقَالَ‏:‏ إِنِّي أَكْرَهُ زَبْدَ الْمُشْرِكِينَ‏.‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানান যে, ওহীর মাধ্যমে পারস্পরিক বিনয় অবলম্বন সম্পর্কে তাঁর প্রতি আদেশ এসেছে। প্রকাশ থাকে যে, ওহী দু'প্রকার- ওহী মাতলু ও ওহী গায়রে মাতলু। মাতলু হল কুরআন মাজীদ। আর গায়রে মাতলু হাদীছ। কুরআন মাজীদের ভাষা ও ভাব উভয়ই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এসেছে। আর হাদীছের ভাব আল্লাহ তা'আলার, কিন্তু ভাষা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। সুতরাং এ হাদীছে যে বলা হয়েছে তাওয়াযু‘ বা বিনয় সম্পর্কে তাঁর কাছে ওহী এসেছে, তা এ উভয় প্রকার ওহীর যে-কোনওটি হতে পারে। হয়তো তাঁর অন্তরে এ আদেশ সম্পর্কিত ভাব সঞ্চার করা হয়েছিল। পরিভাষায় এ ভাবসঞ্চারকে ইলহাম বলা হয়ে থাকে। আবার এমনও হতে পারে যে, কুরআন মাজীদে বিনয় অবলম্বনের আদেশ সম্পর্কিত যেসব আয়াত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا (63)
রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।( সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৩)

এমনিভাবে ইরশাদ হয়েছে-
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ
নিজ পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং নিজ কণ্ঠস্বর সংযত রাখো।(সূরা লুকমান (৩১), আয়াত ১৯)

হাদীছটিতে দু'টি বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। তার একটি হল- لَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ (যাতে কেউ কারও প্রতি অহমিকা না দেখায়)। অর্থাৎ ধন, বংশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষমতা ইত্যাদি যে-কোনও দিক থেকেই অন্যের তুলনায় নিজেকে উপরে দেখলে সে কারণে নিজেকে বড় ও উত্তম ভাববে না। কেননা সেরকম ভাবাটাই অহংকার। বরং মনে করবে দুনিয়ার প্রত্যেকেই তোমার চেয়ে উত্তম, তুমি কারও চেয়ে উত্তম নও। এমনিভাবে মনে করবে দুনিয়ার প্রত্যেকেরই তোমার কাছে প্রাপ্য আছে, কারও কাছে তোমার কোনও প্রাপ্য নেই।

আর দ্বিতীয়টি হল- وَلَا يَبْغِي أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ (এবং কেউ কারও উপর জুলুম না করে)। يَبْغِي শব্দটির উৎপত্তি بغي থেকে। এর অর্থ সীমালঙ্ঘন করা। জুলুম করার দ্বারা অন্যের প্রতি সীমালঙ্ঘন করা হয়। অর্থাৎ তার প্রাপ্যের সীমানা অতিক্রম করে নিজে তার ভেতর প্রবেশ করা হয় এবং তাকে বঞ্চিত করা হয়। সুতরাং যে-কোনও সীমালঙ্ঘনই জুলুম। জুলুম করা অহংকারী ব্যক্তির স্বভাব। অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে তার প্রকৃত মর্যাদার উপরে গণ্য করে। তাই সে কারও কোনও হক মেনে নিতে পারে না। সুতরাং জুলুম করার নিষেধাজ্ঞা দ্বারা প্রকারান্তরে অহংকারের প্রতিও নিষেধাজ্ঞা বটে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিনয় ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা।

খ. একজন ঈমানদারের অপর এক ঈমানদারের উপর অহমিকা দেখানোর কোনও সুযোগ নেই।

গ. কোনও অবস্থায়ই কারও উপর জুলুম করা যাবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান