আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৪২৩
১৯৯- পানি পান করানো।
৪২৩। হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, আদম সন্তানের দেহে তিনশত ষাটটি সংযোগস্থল অথবা অস্থি গ্রন্থি রহিয়াছে। ঠিক কোন্ শব্দটি যে তিনি বলিয়াছেন তাহা রাবীর পুরাপুরি স্মরণ নাই। প্রতি দিন ঐগুলির প্রতিটির জন্য এক একটি করিয়া সাদাকা আছে। প্রতিটি পবিত্র কথাই এক একটি সাদাকা। কোন ব্যক্তির তাহার ভাইকে সাহায্য করাও সাদাকা, কাহাকেও এক চুমুক পানি পান করানোও সাদাকা এবং রাস্তা হইতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও সাদাকা।
بَابُ سَقْيِ الْمَاءِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَظُنُّهُ رَفَعَهُ، شَكَّ لَيْثٌ، قَالَ‏:‏ فِي ابْنِ آدَمَ سِتُّونَ وَثَلاَثُمِئَةِ سُلاَمَى، أَوْ عَظْمٍ، أَوْ مَفْصِلٍ، عَلَى كُلِّ وَاحِدٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ، كُلُّ كَلِمَةٍ طَيْبَةٍ صَدَقَةٌ، وَعَوْنُ الرَّجُلِ أَخَاهُ صَدَقَةٌ، وَالشَّرْبَةُ مِنَ الْمَاءِ يَسْقِيهَا صَدَقَةٌ، وَإِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে মানবদেহের জোড়াসমূহ ও প্রতিটি অঙ্গ যে আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং এর শোকর আদায়ের উপায় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
মানবদেহের জোড়াসমূহ কত বড় নিআমত তা একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসে। এ জোড়াসমূহের কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার অত্যন্ত সহজ হয়েছে। এগুলো না থাকলে সারা শরীর অখণ্ড এক কাঠের গুঁড়ি বা পাথরের মূর্তির মত হত। না তা ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করা যেত আর না সুবিধামত ব্যবহার করা সম্ভব হত। আল্লাহ জাল্লা শানুহু সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য যেমন পৃথক পৃথক অঙ্গ সৃষ্টি করেছেন, তেমনি ব্যবহারের সুবিধার্থে অঙ্গসমূহকে সুনিপুণভাবে পরস্পর জুড়ে দিয়েছেন।
প্রথমত অঙ্গসমূহের সুসমঞ্জস সৃষ্টি ও তার যথোপযুক্ত সন্ধিস্থাপন আল্লাহ তাআলার বিশাল নিআমত। তারপর এসব অঙ্গ ও অঙ্গসন্ধি সুস্থ ও সক্রিয় রাখা তাঁর অতি বড় মেহেরবানী। আমাদের প্রতি তিনি এ মেহেরবানী নিত্যদিন জারি রাখছেন। মানুষ সাধারণত দিন শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রাম যায় আবার ভোরবেলা সুস্থ ও চনমনে শরীর নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ে।
প্রতিদিন সকালবেলা আমরা আমাদের প্রতিটি অঙ্গকে সুস্থ ও সচল পাই। কখনও এমনও হয়ে যায় যে, ঘুম থেকে উঠার পর দেখা গেল হাঁটুতে খিল ধরে গেছে। আগের মত স্বাভাবিক নড়াচড়া করছে না। যার এমন হয় সে বুঝতে পারে হাঁটুর জোড়াটি কত বড় নিআমত। এতদিন সে কেমন অবলীলায় চলাফেরা করত, আজ তার চলতে কত কষ্ট। তারপরও অন্যসব অঙ্গ যেহেতু অবিকল আছে, তাই তার জীবন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়নি। সে তার বেশিরভাগ অঙ্গ নিয়ে সচল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তার সবগুলো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারতেন। বিশেষত এ কারণেও যে, অঙ্গগুলো তো আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটি অঙ্গ আল্লাহ তাআলার কত বড় নিআমত। এর কোনওটিকেই পাপকর্মে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু হামেশাই তা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এ নিআমত কেড়ে না নিয়ে বহাল তবিয়তে রেখে দিয়েছেন। তো ঘুম থেকে জাগার পর যখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তাদের সন্ধিসমূহ সুস্থ-সবল দেখতে পাওয়া যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কর্তব্য হয়ে পড়ে এসবের সৃষ্টিকর্তা ও রক্ষাকর্তার সামনে নিজেকে একজন শোকরগুযার বান্দারূপে পেশ করা। এ হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সংক্ষিপ্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যে এ বিষয়টাই তুলে ধরেছেন।
সূর্যোদয়ের মাধ্যমে মানুষ নিত্যনতুন দিন পায়। এভাবে প্রতিদিন নতুন করে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও অস্থিসমূহের নিআমত হাসিল করে। তাই প্রতিদিন নতুন করে আল্লাহর শোকর আদায় করা তার কর্তব্য হয়ে যায়। সদাকা আদায় কর্তব্য বলে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সারাদিন যাতে সবগুলো অঙ্গ সুস্থ ও সক্রিয় থাকে এবং নিজ গুনাহের কারণে কোনও অঙ্গ কেড়ে নেওয়া না হয়, তাও প্রত্যেকেরই একান্ত কাম্য। এ কামনা যাতে পূরণ হয়, সে লক্ষ্যেও সদাকা আদায় করা কর্তব্য। কেননা সদাকা দ্বারা বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন الصدقة تطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء ‘সদাকা আল্লাহর ক্রোধ নিবারণ করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।
মানবদেহে ৩৬০টি জোড়া আছে। প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একটি সদাকা ওয়াজিব হলে প্রতিদিন সর্বমোট ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কর্তব্য হয়। বাহ্যত বিষয়টা কঠিন। কোনও কোনও সাহাবী প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ৩৬০টি সদাকা দেওয়া কী করে সম্ভব? তার উত্তরে তিনি এ হাদীছ পেশ করেন, জানা গেল যে, সদাকা বলতে কেবল অর্থ-সম্পদ খরচ করাই বোঝায় না; বরং যে-কোনও নফল ইবাদত-বন্দেগীকেও সদাকা বলে। এ হাদীছে সেরকম কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হয়েছে।

উত্তম কথা সদাকা
এ হাদীছে আরও ইরশাদ হয়েছে- الكلمة الطيبة , (উৎকৃষ্ট কথাও একটি সদাকা)। 'কালেমায়ে তায়্যিবা' বা উৎকৃষ্ট কথা বলতে এমন যে-কোনও কথাকে বোঝায়, যা দ্বারা মানুষের দুনিয়া বা আখেরাতের কোনও কল্যাণ সাধিত হয়, যেমন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা, কাউকে সুপরামর্শ দেওয়া, কারও পক্ষে সুপারিশ করা, কারও শোকতাপে সান্ত্বনা দেওয়া, কাউকে আশু বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা, কাউকে দীনী কোনও বিষয় শিক্ষাদান করা ইত্যাদি।
এমনকি কারও সঙ্গে বৈধ মনোরঞ্জনমূলক কথা বলাও সদাকার অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কারও মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেওয়াকেও সদাকা সাব্যস্ত করেছেন। যেমন হযরত আবূ যার রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে تبسمك في وجه أخيك صدقة “তোমার ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার মুচকি হাসি দেওয়াটাও একটি সদাকা।
আমরা যাকে কালেমায়ে তায়্যিবা বলি অর্থাৎ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' (আল্লাহ ছাড়া কোনও মাবূদ নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার রাসূল), এটাও এক উৎকৃষ্ট কথা বৈকি। সুতরাং এটা মুখে উচ্চারণ করাও একটি সদাকা। এমনিভাবে এ কালেমা অন্যকে শিক্ষাদান করার মধ্যেও রয়েছে সদাকার ছাওয়াব।
কুরআন মাজীদে কালেমায়ে তায়্যিবা বা উৎকৃষ্ট কথাকে উৎকৃষ্ট গাছের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যে গাছের ফল মানুষ সর্বদা ভোগ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে-

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا

“তোমরা কি দেখনি আল্লাহ কালেমা তায়্যিবার কেমন দৃষ্টান্ত দিয়েছেন? তা এক পবিত্র বৃক্ষের মত, যার মূল (ভূমিতে) সুদৃঢ়ভাবে স্থিত আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। তা নিজ প্রতিপালকের নির্দেশে প্রতি মুহূর্তে ফল দেয়।
অর্থাৎ বৃক্ষের মূল যেমন মাটির নিচে স্থাপিত থাকে, তেমনি কালেমায়ে তায়্যিবার মূল তথা ঈমান ও বিশ্বাস মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল থাকে। গাছের ডালপালার মত কালেমায়ে তায়্যিবারও ডালপালা আছে আর তা হচ্ছে সৎকর্মসমূহ। উৎকৃষ্ট গাছ বলতে মুফাসিরগণের মতে খেজুর গাছ বোঝানো হয়েছে, যার ফল সারা বছরই খেতে পাওয়া যায়। তেমনি কালেমায়ে তায়্যিবারও ফল অর্থাৎ আল্লাহ জাল্লা শানুহুর স্থায়ী ও অনন্ত সম্ভটি মুমিনগণ জান্নাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোগ করতে থাকবে। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ পবিত্র কালেমা তাঁরই দিকে আরোহণ করে এবং সৎকর্ম তাকে উপরে তোলে।
অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার যে তাসবীহ তাহলীল ও যিকর আযকার করে থাকে, তা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার কাছে পৌঁছতে থাকে।
যাহোক আলোচ্য হাদীছ দ্বারা জানা গেল কালেমায়ে তায়্যিবা তথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর সাক্ষ্যদান ও কুরআন তিলাওয়াতসহ যে-কোনও যিকর সদাকার অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে আছে-

يصبح على كل سلامي من أحدكم صدقة، فكل تسبيحة صدقة وكل تحميدة صدقة وكل تهليلة صدقة وكل تكبيرة صدقة، وأمر بالمعروف صدقة ونهي عن المنكر صدقة، ويجزئ من ذلك ركعتان يركعهما من الضحى

“প্রতিদিন ভোরে তোমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে সদাকা আবশ্যিক হয়ে যায়। তো প্রতিটি তাসবীহ একটি সদাকা; প্রতিটি তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ বলা) একটি সদাকা প্রতিটি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) একটি সদাকা; প্রতিটি তাকবীর একটি সদাকা; একবার সৎকাজের আদেশ করা একটি সদাকা: একবার অসৎকাজে নিষেধ করা একটি সদাকা আর এ সমুদয়ের পরিবর্তে চাশতের দুঃ রাকআত নামায পড়াই যথেষ্ট হয়ে যায় -মুসলিম।

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া
এ হাদীছে সর্বশেষ যে কাজটিকে সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে তা হচ্ছে وتميط الأذى عن الطريق صدقة (তুমি যদি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দাও, তাও একটি সদাকা)। কষ্টদায়ক বস্তু বলতে এমনসব বস্তু বোঝানো উদ্দেশ্যে, যা দ্বারা যাতায়াতকারীগণ কষ্ট পেতে পারে, যেমন পাথর, কাঁটা, মানুষ বা পশুর মল, কোনও ফলের ছিলকা ইত্যাদি। রাস্তায় খানাখন্দ বা গর্ত থাকলে তা ভরাট করে দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়ার দ্বারা সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়। অপর এক হাদীছে এটিকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে, যা দ্বারা কাজটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। অপর মুসলিমকে কষ্ট ও বিপদ থেকে হেফাজত করা ঈমানের দাবি। বরং প্রকৃত মুমিন সেই, যে কোনও মানুষকেই কোনওভাবে কষ্ট দেয় না।
পথ চলাকালে কষ্টদায়ক কোনও বস্তু চোখে পড়া সত্ত্বেও তা সরিয়ে না দেওয়া পরোক্ষভাবে অন্য মানুষকে কষ্ট দেওয়াই বটে। মূল কষ্টদাতা তো সেই ব্যক্তি, যে তা রাস্তায় ফেলল। কিন্তু দেখা সত্ত্বেও তা যদি না সরানো হয়, তারপর কেউ সে বস্তুটি দ্বারা কষ্ট পায়, তবে তা তো ওই ব্যক্তি তা না সরানোর কারণেই পেল। এ হিসেবে তার উপর একরকম দায় এসেই যায়। মহান ইসলাম আমাদেরকে কী সুন্দর শিক্ষাই না দান করেছে। পরোক্ষভাবেও কেউ যাতে পথিকের কষ্টের কারণ না হয়ে যায়, তাই কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াকে ঈমানের অঙ্গ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এ কাজ করার দ্বারা সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যাবে, যেহেতু এর দ্বারা দান-খয়রাতের মতই মানুষের উপকার সাধিত হয়।
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো যখন ঈমানের অঙ্গ এবং এটা করার দ্বারা যখন সদাকার ছাওয়াব মেলে, তখন যারা এর বিপরীতে রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু ফেলে, তাদের অবস্থাটা কী হতে পারে? তাদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কষ্টদানের গুনাহও কি তাদের হয়ে যায় না? এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষের চলাচলে কষ্ট হয় বা বিঘ্ন ঘটে, এমন অনেক কিছুই অবলীলায় করা হয়ে থাকে। জনসভা করে তো রাস্তা আটকেই দেওয়া হয়। এসবই ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী।

যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হল, সদাকা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। যেমন হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

تبسمك في وجه أخيك لك صدقة، وأمرك بالمعروف ونهيك عن المنكر صدقة، وإرشادك الرجل في أرض الضلال لك صدقة، وبصرك للرجل الرديء البصر لك صدقة، وإماطتك الحجر والشوكة والعظم عن الطريق لك صدقة، وافراغك من دلوك في دلو أخيك لك صدقة

'তোমার ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার হাসি দেওয়া তোমার জন্য একটি সদাকা; তোমার পক্ষ হতে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা একটি সদাকা; কোনও ভূমিতে পথহারা ব্যক্তিকে তোমার পথ দেখিয়ে দেওয়াটাও তোমার জন্য একটি সদাকা; যার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে তার জন্য তোমার দৃষ্টিশক্তির ব্যবহারও তোমার জন্য একটি সদাকা; রাস্তা থেকে পাথর কাঁটা ও হাড় সরিয়ে দেওয়াও তোমার জন্য একটি সদাকা এবং তোমার পাত্র থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্য একটি সদাকা।
এর দ্বারা বোঝা যায়, অন্যের পক্ষে কল্যাণকর যে-কোনও বৈধ কাজই সদাকারূপে গণ্য। এমনকি যে আমল দ্বারা নিজ আখেরাতের কল্যাণ হয় তাও সদাকা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তার জোড়াসমূহ আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিআমত। আমাদের কর্তব্য এর শোকর আদায় করা।

খ. সদাকা দ্বারা বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত হয়। তাই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকে, সে লক্ষ্যে সদাকা করা চাই।

গ. আমরা নিজেরা তো রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু ফেলবই না; বরং রাস্তায় এমনকিছু নজরে আসলে অবশ্যই তা সরিয়ে দেব।

ঘ. কালেমায়ে তায়্যিবা এবং উৎকৃষ্ট যে-কোনও কথাই সদাকা। সুতরাং বাকশক্তির অপব্যবহার না করে যতবেশি সম্ভব উৎকৃষ্ট কথায় তা ব্যবহার করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান