আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং: ৩৩৯০
আন্তর্জাতিক নং: ৩৬৫২
২০৮০. মুহাজিরগণের মর্যাদা ও ফযীলত। তাদের মধ্য থেকে আবু বকর আব্দুল্লাহ ইবনে আবু কুহাফা তায়মী (রাযিঃ)। মহান আল্লাহর বাণীঃ এ সম্পদ অভাবগ্রস্থ মুহাজিরদের জন্য .... (৫৯ঃ ৮) এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন (৯ঃ ৪০) আয়িশা, আবু সাঈদ ও ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, আবু বকর (রাযিঃ) নবী কারীম (ﷺ)- এর সাথে সাওর পর্বতের গুহায় ছিলেন
৩৩৯০। আব্দুল্লাহ ইবনে রাজা (রাহঃ) .... বারা (ইবনে আযিব) (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর (রাযিঃ) আযিব (রাযিঃ)- এর নিকট থেকে তের দিরহাম মূল্যের একটি হাওদা ক্রয় করলেন। আবু বকর (রাযিঃ) আযিবকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার কাছে পৌঁছে দিতে বল। আযিব (রাযিঃ) বললেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ না আপনি আমাদেরকে (হিজরতের ঘটনা) সবিস্তার বর্ণনা করে শোনাবেন যে, আপনি ও নবী কারীম (ﷺ) কি করছিলেন যখন আপনারা (হিজরতের উদ্দেশ্যে) মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। আর মক্কার মুশরীকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল।
আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আমরা মক্কা থেকে বেরিয়ে সারারাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরাম চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্রতর হল আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বৃহদাকার পাথর নযরে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াবিশিষ্ট স্থানটি সমতল করে নবী কারীম (ﷺ)- এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চতুর্দিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের তালাশে কেউ আসছে কিনা?
ঐ সময় দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তাঁর ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাঁথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া তালাশ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে যুবক, তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাইশের নাম বলল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুগ্ধবতী বকরী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম। তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ দিব। আমি তাকে তা দিতে বললাম। তৎক্ষণাৎ সে বকরীর পাল থেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এলো এবং পেছনের পা দুটি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে ধূলাবালি থেকে পরিষ্কার করে নাও এবং তোমার হাত দুটি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের পদ্ধতিটিও) দেখালেন।
এরপর সে আমাদিগকে পাত্রভরে দুধ এনে দিল। আমি নবী কারীম (ﷺ)- এর জন্য এমন একটি চামড়ার পাত্র সাথে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এরপর আমি দুধ নিয়ে নবী কারীম (ﷺ)- এর খেদমতে হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি দুধ পান করুন। তিনি দুধ পান করলেন; আমি খুশি হলাম।
তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের রওয়ানা হয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ হয়েছে। আমরা রওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কাবাসী মুশরীকরা আমাদের অনুসন্ধানে ছুটাছুটি করছে। কিন্তু সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জশাম ব্যতীত আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনুসন্ধানকারী আমাদের নিকটবর্তী। তিনি বললেন, চিন্তা করনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথে রয়েছেন।
باب مَنَاقِبِ الْمُهَاجِرِينَ وَفَضْلِهِمْ مِنْهُمْ أَبُو بَكْرٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي قُحَافَةَ التَّيْمِيُّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الايه وَقَالَ: {إِلاَّ تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ} إِلَى قَوْلِهِ: {إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا}. قَالَتْ عَائِشَةُ وَأَبُو سَعِيدٍ وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْغَارِ
3652 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَجَاءٍ، حَدَّثَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ البَرَاءِ، قَالَ: اشْتَرَى أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ عَازِبٍ رَحْلًا بِثَلاَثَةَ عَشَرَ دِرْهَمًا، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ لِعَازِبٍ: مُرِ البَرَاءَ فَلْيَحْمِلْ إِلَيَّ رَحْلِي، فَقَالَ عَازِبٌ: لاَ، حَتَّى تُحَدِّثَنَا: كَيْفَ صَنَعْتَ أَنْتَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ خَرَجْتُمَا مِنْ مَكَّةَ، وَالمُشْرِكُونَ يَطْلُبُونَكُمْ؟ قَالَ: ارْتَحَلْنَا مِنْ مَكَّةَ، فَأَحْيَيْنَا، أَوْ: سَرَيْنَا لَيْلَتَنَا وَيَوْمَنَا حَتَّى أَظْهَرْنَا وَقَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ، فَرَمَيْتُ بِبَصَرِي هَلْ أَرَى مِنْ ظِلٍّ فَآوِيَ إِلَيْهِ، فَإِذَا صَخْرَةٌ أَتَيْتُهَا فَنَظَرْتُ بَقِيَّةَ ظِلٍّ لَهَا فَسَوَّيْتُهُ، ثُمَّ فَرَشْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ، ثُمَّ قُلْتُ لَهُ: اضْطَجِعْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، فَاضْطَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ انْطَلَقْتُ أَنْظُرُ مَا حَوْلِي هَلْ أَرَى مِنَ الطَّلَبِ أَحَدًا، فَإِذَا أَنَا بِرَاعِي غَنَمٍ يَسُوقُ غَنَمَهُ إِلَى الصَّخْرَةِ يُرِيدُ مِنْهَا الَّذِي أَرَدْنَا، فَسَأَلْتُهُ فَقُلْتُ لَهُ: لِمَنْ أَنْتَ يَا غُلاَمُ، قَالَ لِرَجُلٍ مِنْ قُرَيْشٍ، سَمَّاهُ فَعَرَفْتُهُ، فَقُلْتُ: هَلْ فِي غَنَمِكَ مِنْ لَبَنٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: فَهَلْ أَنْتَ حَالِبٌ لَنَا؟ قَالَ: نَعَمْ، فَأَمَرْتُهُ فَاعْتَقَلَ شَاةً مِنْ غَنَمِهِ، ثُمَّ أَمَرْتُهُ أَنْ يَنْفُضَ ضَرْعَهَا مِنَ الغُبَارِ، ثُمَّ أَمَرْتُهُ أَنْ يَنْفُضَ كَفَّيْهِ، فَقَالَ: هَكَذَا، ضَرَبَ إِحْدَى كَفَّيْهِ بِالأُخْرَى، فَحَلَبَ لِي كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ، وَقَدْ جَعَلْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِدَاوَةً عَلَى فَمِهَا خِرْقَةٌ، فَصَبَبْتُ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ، فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَافَقْتُهُ [ص:4] قَدِ اسْتَيْقَظَ، فَقُلْتُ: اشْرَبْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيتُ، ثُمَّ قُلْتُ: قَدْ آنَ الرَّحِيلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «بَلَى» . فَارْتَحَلْنَا وَالقَوْمُ يَطْلُبُونَنَا، فَلَمْ يُدْرِكْنَا أَحَدٌ مِنْهُمْ غَيْرُ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ عَلَى فَرَسٍ لَهُ، فَقُلْتُ: هَذَا الطَّلَبُ قَدْ لَحِقَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا»
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৩৩৯০ | মুসলিম বাংলা