আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ২৫৩
১২৬- হাসি।
২৫৩। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) তাঁর কতক সাহাবীকে অতিক্রম করছিলেন। তখন তারা হাস্যালাপ ও কথাবার্তায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে। অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং লোকজন কাঁদতে লাগলো। তখন মহামহিম আল্লাহ ওহী নাযিল করেন, হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে কেন নিরাশ করছো। নবী (ﷺ) ফিরে এসে বলেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, সরল পথ অবলম্বন করো এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে তৎপর হও
بَابُ الضَّحِكِ
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ مُسْلِمٍ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ‏:‏ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِهِ يَضْحَكُونَ وَيَتَحَدَّثُونَ، فَقَالَ‏:‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا، ثُمَّ انْصَرَفَ وَأَبْكَى الْقَوْمَ، وَأَوْحَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِ‏:‏ يَا مُحَمَّدُ، لِمَ تُقَنِّطُ عِبَادِي‏؟‏، فَرَجَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ‏:‏ أَبْشِرُوا، وَسَدِّدُوا، وَقَارِبُوا‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি হাসাহাসি পসন্দ করতেন না। বেশি হাসিতে অন্তরে উদাসীনতা জন্ম নেয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন لا تكثر الضحك، فإن كثرة الضحك تميت القلب "বেশি হাসবে না। কেননা হাসির আধিক্য অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।”

একবার তিনি সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তাতে তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন যে (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়দানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে
ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش ولهجرتم النساء، ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون
"তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

হাদীছটি দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পার্থিব জীবনযাপন সম্পর্কে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, দুনিয়া আনন্দে মেতে থাকার জায়গা নয়। তা থাকা উচিতও নয়। তার সামনে আখিরাত আছে। সেখানকার পরিস্থিতি বড় কঠিন। সে কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকা উচিত। মনে ভয় রাখা উচিত। উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কাঁদা, যাতে তিনি সেখানে নাজাত দান করেন। যেন তিনি নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাঁদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।

খ. অল্প হাসি দোষের নয়, যদি অন্তরে আখিরাতের ভয় থাকে এবং সে ভয়ে ক্রন্দনও করা হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ২৫৩ | মুসলিম বাংলা